ইনি আমা’দের ‘বস’, তাকে সন্তুষ্ট ক’রতে পারলেই চাকরি কনফার্ম, শুরু তরুণীর জীবনের নতুন অধ্যায়

| আপডেট :  ৩১ জানুয়ারি ২০২১, ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৪ জানুয়ারি ২০২১, ০৩:০৫ অপরাহ্ণ

তমা ইসলাম (ছদ্মনাম)। রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা এই শিক্ষার্থী দেশের নামকরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি বিভাগের স্নাতকের ছাত্রী। তিনি বর্তমানে যৌ’’ন ব্যবসায়ের সাথে জ’ড়িত। নিজে’র জীবনের নানান ধাপে ধাপে অনেক ধ’রনের নি-র্যা’তন সয়ে আজ তাকে এ পথে নামতে হয়েছে। আর বাকি পাঁচজনের মতোই ছিলো তমা’র জীবন।

কিন্তু তার বাবার ব্যবসায়ে ক্ষ’তি হওয়ার পর উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনো তমা’র জীবনে নেমে আসে কালো ছায়া। তমা’র বাবার রাজধানীর মিরপুরে একটি কাপ’ড়ের দোকান ছিলো। কিন্তু তার বাবার ব্যবসায়ীক পার্টনার তাদের সাথে প্র’তারণা করে তমা’র পরিবারকে নিঃ’স্ব করে। ওই ব্য’ক্তি হা’তিয়ে নেন তমা’দের ২৫ লক্ষ টাকা।

স্নাতকে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাতালিকায় স্থান পাওয়ার পরেও ভর্তি হওয়ার মতো পর্যাপ্ত অর্থ ছিলো না তমা’র। তার বাবাও তাদের পরিবারের জন্য তেমন কিছু ক’রতে পারছিলেন না। অবস্থা ছিলো অনেকটাই বেগতিক। তমা’র পরিবারের সদস্যদের দিনের পর দিন আধ পে’টা, না খেয়ে পার ক’রতে ‘হতো। চার ভাই-বোনের মধ্যে তমাই সবার বড়।

তিনি তার পরিবারের অবস্থা আর নিজে’র পড়াশোনার জন্য চাকরির সি’দ্ধান্ত নেন। কয়েকটি চাকরির ওয়েবসাইট ঘুরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সিভি দেন তমা। কিন্তু দিনের পর দিন পার হলেও তিনি কোথাও ডাক পান না। এ অব’স্থায় মা’নসিকভাবে অনেকটাই ভে’ঙে প’ড়েন সদ্য উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনো এই ছাত্রী। মাসখানেক পর হ’ঠাৎই একটা কল আসে তমা’র কাছে।

একটি প্রতিষ্ঠানে তমাকে চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়। তমা সময় মতো গু’লশানের ওই অফিসে হাজির হন। তমাকে তখন সাধারণ কিছু প্রশ্নের পর জা’নানো হয় এটা একটি বিউটি পার্লারের কাজ। স্পা করাতে হবে না’রীদের।তমা দীর্ঘদিন চাকরি খুঁজেও কোনো উপায়ন্ত না পেয়ে তাদের প্রস্তাবে রাজি হন। ভাবলেন তাও একটা কাজ তো পেয়েছেন। ওইদিনের মতো তমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় পরবর্তী তারিখ দিয়ে। জা’নানো হয় পরবর্তী দিন ওই অফিসের ‘বস’ তমা’র ইন্টারভিউ নিবেন। তিনি ফাইনাল করলেই তমা’র চাকরি হবে।

পরবর্তী তারিখে তমা সময় মতো ওই লোকের দেওয়া ঠিকানায় উপস্থিত হন। পরে তাকে ‘হোটেল রেডিসনের’ একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে তমা দে’খতে পান এক লোক সোফায় বসে আসেন। তমা’র যেহেতু চাকরির পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলো না তাইতিনি তেমন কিছুই আঁচ ক’রতে পারেননি যে, তার সাথে কী ঘটতে যাচ্ছে!

এরপর তমা যেই লোকের সাথে হোটেল পর্যন্ত গে’লেন তিনি রুমে থাকা লোকের কাছে তমাকে রেখে ‘কানেকানে’ বলে যান ইনি আমা’দের ‘বস’। তাকে সন্তুষ্ট ক’রতে পারলেই চাকরি কনফার্ম। সদ্য উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করা তমা তখনও কিছু বুঝতে পারেননি। এরপররুমে ওই লোক জো’র জ’বরদ’স্তি করে ত’মাকে ধ… করেন। শুরু হয় তমা’র জীবনের নতুন অধ্যায়।

তমা তার জীবনের এই অ’নাকাঙিক্ষ’ত ঘ’টনা কাউকে বলতে পারেননি। তার পরিবারের লোকের পাশে তখন তার দাঁড়ানো দরকার ছিলো- এর ওপরে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, ছোট ছোট তিনটা ভাই-বোনের দিকে তাকিয়ে তমা সেদিন প্র’তিবাদ ক’রতে পারেননি। কিন্তু তমা’র জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয় সেখান থেকেই। তমা সেদিনকার মতো বাড়িতে ফি’রে আসেন এবং আত্ম চেষ্টা করেন।

কিন্তু পরিবারের কথা ভেবে অন্ধকার জগতের পথ বেছে নেন তমা। তমা বাড়ি ফেরার দুই-একদিন পর ওই লোকেরা তার সাথে আবার যোগাযোগ করেন। জা’নান, তমা চাইলে তারা প্রতিমাসে তাকে তিনটা কাজ দিবে। এর জন্য তমাকে মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়া হবে। তমাও রাজি হয়ে যান তাদের শর্তে।

তমা’র দা’বি, তার সামনে অন্য আর কোনো উপায় ছিলো না! ‘কিছুদিন যাওয়ার পর অন্ধকার জগতে কাজ করে এমন একটা গ্রুপে এ্যাড হলাম। এই গ্রুপের যিনি এ্যাডমিন ছিলেন তিনি কারো কাছ থেকে কোন বিনিময় নেয় না। তিনি কাজ যোগাড় করে দেয়। এভাবেই অন্ধকার জগতে প্রবেশ করি। একসময় আমি বুঝতে পারি কিভাবে যোগাযোগ ক’রতে হয়। কিভাবে নিজেকে হাইড রাখতে হয়। এ কাজ ক’রতে গেলে কখনো নিজেকে অপ’রাধী মনে হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে

তিনি বলেন, সব সময় মনে হয়,আবার মাঝে মাঝে মনে হয় না। টাকা পয়সা আর প্যাকেজে’র বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা পয়সার বিষয় হচ্ছে যারা আসে তাদের অবস্থা বুঝে। যার অর্থনৈতিক অবস্থা একটু ভালো সে হয়তো একটু বেশি দিচ্ছে। কিভাবে যোগাযোগ হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রুপে পোস্ট দেই, কন্টাক্টটা ইনবক্সে হয়। তার পর ফোনের মাধ্যমে কন্টাক্ট করা হয়। যায়গাটা কিভাবে নির্ধারণ করা হয় এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমা’দের গ্রুপের অনেকে আছে যারা পরিবার সহ থাকে। ওখানে যাওয়া হয়, কিন্তু যায়গা গু’লো অনেক নি’রাপত্তার। কেউ ঝামেলা করবে এমন কোন স’মস্যা নেই।

গেস্ট হিসেবে যাই। আসার সময় আমা’র যা আয় হয়, এখান থেকে দুই বা তিন হাজার তাদের দিয়ে আসতে হয়। এখানে কারা আসে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশির ভাগ হচ্ছে সরকারি চাকরিজীবী, বে-সরকারি চাকরিজীবী আবার অনেক স্টুডেন্টও আসে। স্টুডেন্টদের কাজ আমি একটু কম করি। কারন আমি নিজেও একজন স্টুডেন্ট এজন্য তাদের কাজ আমি করি না। বেশির ভাগ ৩৫ বছরের উপরে লোকজন বেশি আসে।

এপর্যন্ত আপনি কতজনের সাথে মিট ক’রেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৩৫ থেকে ৪০ জনের মতো হবে। ঢাকার ভি’তরেই কাজ গু’লো করা হয়। ছয় থেকে আট’ হাজার টাকা কন্টাক্ট হয়। অনেকে থাকার পরে বলে বুথ থেকে টাকাটা তুলে দিচ্ছি। দেখা যায় তার আর খোঁ’জ খবর নেই। আবার অনেকে টাকা কম দিয়ে যায়। বলছে পরবর্তীতে দিব। পরবর্তীতে অনেকে দিয়ে দেয়, আবার অনেকে দেয় না। আবার অনেকে বাজে ব্যাবহার করে। মনে হয় আম’রা কোন মানুষ না।

আমা’দের সাথে মানুষের আচরণ করে না। এটা কোন জীবন ‘হতে পারে কি না জানিনা। এটা আ’সলে কোন লাইফ না। আমি চাই এখান থেকে প্রতিনিয়ত বের ‘হতে। আমি চাই আরও পাঁচটা মানুষ যেভাবে থাকে আমিও সেভাবে থাকি। এই শিক্ষার্থী বলেন, আমি এ জীবন চাই না। আমি এখান থেকে বের ‘হতে চাই।

লেখাপড়া শেষ করে চাকরি ক’রতে চাই। আমি জানিনা এখান থেকে সমাজ আমাকে কিভাবে বের করবে, কিন্তু আমি এখান থেকে বের ‘হতে চাই। উল্লেখ্য, স’ম্প্রতি দেশের বেসরকারি সময় টেলিভিশন-এ সংবাদটি প্র’কাশিত করা হয়। সেই আলোকেই আমা’দের এই প্র’তিবেদনটি করা হয়েছে।