চাঁ’দাবাজি-ঝুট ব্যবসা-জমি দখলসহ মাহির স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

| আপডেট :  ১৮ মার্চ ২০২৩, ০৯:৩৭ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৮ মার্চ ২০২৩, ০৯:৩৭ অপরাহ্ণ

ফেসবুক লাইভে এসে পুলিশের বি’রুদ্ধে কথা বলে গ্রে’প্তার হয়েছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়িকা মাহিয়া মাহি। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রে’প্তার করা হয়।

ওমরা পালন করতে সৌদি আরব গিয়েছিলেন মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রাকিব স’রকার। দেশে ফিরে বিমানবন্দরেই মাহি গ্রে’প্তার হন। তিনি পুলিশের করা মা’মলার দুই নম্বর আ’সামি। তবে তার স্বামী রাকিব স’রকার বর্তমানে কোথায় অবস্থান করছেন সে ব্যাপারে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

শুক্রবার সকালে ফেসবুক লাইভে এসে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কর্মকর্তাদের কুৎসা রটান মাহি। তিনি দাবি করেন, তার স্বামী রাকিব স’রকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুলিশের সহায়তায় দ’খল করা হচ্ছে। আর এজন্য দেড় কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।

এসব মন্তব্যের পর পরই পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানায় মা’মলা করে। এতে মাহি-রাকিব দম্পতিকে আ’সামি করা হয়। একইদিন বাসন থানায় আরেকটি মা’মলা করেন ইসমাইল হোসেন নামে একজন ব্যবসায়ী। এ মা’মলায় ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে অ’জ্ঞাত আরও ১০-১৫ জনকে আ’সামি করা হয়।

ইসমাইল হোসেনের অ’ভিযোগ, রাকিব ও মাহির নির্দেশে অর্ধশতাধিক স’ন্ত্রাসী তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হা’মলা চা’লিয়েছে এবং তাকে হ’’ত্যার পরিকল্পনা করেছিল। চাঁ’দা না দেওয়ায় তার ও’পর এই হা’মলা হয়েছে বলেও দাবি করেন মা’মলার বা’দী।

দুই মা’মলার এজাহারে যা আছে

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মা’মলাটি করেন বাসন থানার এসআই মোহাম্ম’দ রোকন মিয়া। মা’মলার এজাহারে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে মাহিয়া মাহি ও রাকিব স’রকার ফেসবুকের মাধ্যমে ভিডিও শেয়ার করে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেন।

আইন শৃঙ্খলার অ’বনতি ঘটানোর জন্য অ’ভিযুক্তরা গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেলোয়ার হোসেন, উপ-পুলিশ কমিশনার অ’পরাধ উত্তর, বাসন থানার ওসিসহ গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত বিভিন্ন পদের কর্মকর্তাদের অ’পমান ও হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মি’থ্যা, বানোয়াট, আ’ক্রমণাত্মক, কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর তথ্য প্রচার করেন, যা এক নম্বর আ’সামি রাকিব স’রকার এবং দুই নম্বর আ’সামি মাহিয়া মাহি স’রকার করেছেন।

ব্যবসায়ী ইসমাইলের মা’মলার এজাহারে বলা হয়েছে, বাসন থানার দিঘিরচালার ভাওয়াল বদরে আলম স’রকারি কলেজের পূর্ব পাশে তার (ইসমাইল) র’ড বাইন্ডিং কারখানা রয়েছে। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দু’র্বৃত্তরা দীর্ঘদিন চাঁ’দা দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু চাঁ’দা না পেয়ে শুক্রবার সৌদি আরবে থাকা রাকিব স’রকার ও মাহিয়া মাহির নির্দেশে অর্ধ শতাধিক স’ন্ত্রাসী সেখানে (ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে) হা’মলা করে। এতে তিন লাখ টাকার আসবাবপত্র ভে’ঙে ফেলা হয়।

দেশীয় অ’স্ত্রের আ’ঘাতে বা’দী ইসমাইল হোসেন আ’হত হয়েছেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

মা’মলায় ইসমাইল ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে অ’জ্ঞাত ১০-১৫ জনকে আ’সামি করেছেন। সেখানে ২৫ নম্বর আ’সামি রাকিব স’রকার এবং ২৬ নম্বর আ’সামি করা হয়েছে মাহিয়া মাহিকে।

শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির স্বামী রাকিব স’রকারের গাজীপুর মহানগরীর ভাওয়াল বদরে আলম স’রকারি কলেজের পূর্ব পাশে সনিরাজ কার প্যালেসে হা’মলা ও ভা’ঙচুরের অ’ভিযোগ করেন। এ ঘটনায় মাহিয়া মাহি গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার (জিএমপি) মোল্যা নজরুল ইসলামকে দোষারোপ করে ফেসবুকে পোস্ট ও লাইভ করেন। তবে জিএমপি কমিশনার অ’ভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এমন অ’ভিযোগ সম্পূর্ণ মি’থ্যা।’

বিএনপি পরিবারের স’ন্তান রাকিব করেন চাঁ’দাবাজি

মাহিয়া মাহির স্বামী রাকিব স’রকার গাজীপুরে যুবলীগের রাজনীতি করেন। তার বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। রাকিব স’রকারের বড় ভাই সুলতান স’রকার গাজীপুর জে’লা পরিবহন শ্র’মিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় শ্র’মিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক। পরিবহন সেক্টরে বড় চাঁ’দাবাজি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মূলহোতা হিসেবে তিনি পরিচিত।

তার ভাই ফয়সাল আহমেদ স’রকার বর্তমানে গাজীপুর মহানগর শ্র’মিক দলের আহ্বায়ক এবং গাজীপুর সিটি কপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। আরেক ভাই কামরুল আহসান স’রকার গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক। মহানগর বিএনপি নেতা হাসান উদ্দিন স’রকার ও শওকত স’রকারও তাদের নিকটাত্মীয়।

রাকিব স’রকারের বি’রুদ্ধে গাজীপুর মহানগরীতে চাঁ’দাবাজি, গার্মেন্টস ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, মা’দকের স্পট পরিচালনা, জমি দ’খল, পরিবহন সেক্টরে চাঁ’দাবাজি ও অরাজকতা সৃষ্টি এবং স্থানীয় স’ন্ত্রাসীদের লালনপালনের অ’ভিযোগ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও এমন তথ্য উঠে এসেছে।

তাছাড়া বাসন থানা এলাকাসহ মহানগরীর প্রায় সব ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসা থেকে প্রতি মাসে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা চাঁ’দা নেন। এছাড়া ভোগড়া বাইপাস ফলের আড়ৎ (সামছুদ্দিন সুপার মার্কেট) এবং কাঁচাবাজারে যেসব ট্রাক, পিকাপ আসে সেগুলোর প্রতিটি থেকে ৫০ ও ১০০ টাকা হারে চাঁ’দা আদায় করা হয়, যেখানে প্রতিদিন ২০০-২৫০টি গাড়ি আনলোড হয়।

গার্মেন্টেসের ঝুট পণ্য না পেলেই শ্র’মিক অসন্তোষ করান রাকিব

গাজীপুর মহানগরীর প্রায় সব গার্মেন্টেসের ঝুট নিয়ন্ত্রণ করেন রাকিব স’রকার ও সিন্ডিকে’টের সদস্যরা। ঝুটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রয়োজনে অ’বৈধ অ’স্ত্রের ব্যবহার করা হয়। বাসন থানা এলাকাধীন ল্যাডন্ডার গার্মেন্টস, বটস গ্যালালি, লালতাপুর গার্মেন্টস, হাসান তানভীর ফ্যাশন লি., লিরিক ফ্যাশন টার্গেট লি., নেটওয়ার্ক ডটকম, মিকি গার্মেন্টস, স্কয়ার লি., টি অ্যান্ড জেড গার্মেন্টস তার লোকজনের নিয়ন্ত্রণে।

তারাই প্রতিমাসে ঝুট নিয়ন্ত্রণে নেয়। কোনো গার্মেন্টস মালিক বা কর্তৃপক্ষ ঝুট দিতে অস্বীকৃতি জানালে গার্মেন্টস শ্র’মিকদের উসকে দেওয়া হয়। তাছাড়া বহিরাগত স’ন্ত্রাসীদের দিয়ে মালিক পক্ষের ও’পর আ’ক্রমণ চা’লানো হয়।

এই ঝুট থেকে প্রতি মাসে ৭০-৮০ লাখ টাকা আয় করেন রাকিব। তার ঝুটের ব্যবসা দেখভাল করেন তার ঘনিষ্ট সহযোগী আরিফ, নাজমুল ও আলমগীর। সূত্রঃ ঢাকা টাইমস