শাকিব খানের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অভিযোগ নিয়ে মুখ খুললেন নিপুণ

| আপডেট :  ১৬ মার্চ ২০২৩, ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৬ মার্চ ২০২৩, ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ

শাকিব খানের বি’রুদ্ধে ভ’য়ংকর সব অ’ভিযোগ নিয়ে চর্চিত হচ্ছে সর্বত্র। বুধবার (১৫ মার্চ) বিকালে নির্মাণাধীন ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার অন্যতম প্রযোজক তার নামে গু’রুতর সব অ’ভিযোগ দা’য়ের করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দফতরে। তিন পৃষ্ঠার সেই লিখিত অ’ভিযোগে শাকিব খানের বি’রুদ্ধে তুলে ধরা হয়েছে ঢালিউড ইতিহাসের সবচেয়ে ভ’য়াবহ সব তথ্য। এর আগে কোনও শীর্ষ তারকার বি’রুদ্ধে এমন অ’ভিযোগ এভাবে কাগজে-কলমে এর আগে উঠে আসেনি।

ফলে বি’ষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছেন ঢালিউড অংশীজনরা। অপেক্ষায় আছেন শাকিব খানের প্রতিক্রিয়ার। আরও অপেক্ষা শিল্পী সমিতির সিদ্ধান্তের।

যথারীতি শাকিব খান এই বি’ষয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেননি। যেমনটা তিনি আগেও বিবিধ অ’ভিযোগের সময় নীরবতায় ছিলেন। কিন্তু এমন অ’ভিযোগের বিপরীতে সংগঠন তো আর একই ভূমিকায় থাকার সুযোগ নেই। যদিও সমিতির সভাপতি অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রে।

না, বি’ষয়টি নিয়ে খুব একটা লুকোচু’রিতে যাননি সমিতির দ্বিতীয় নেতা সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তার। বুধবার (১৫ মার্চ) রাত সাড়ে দশটা নাগাদ মুঠোফোনে পাওয়া গেছে তাকে। বি’ষয়টি নিয়ে বাংলা ট্রিবিউন-এর প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংগঠনিক ভাষাতেই কথা বললেন বিস্তর। যার মোরাল অব দ্য স্টোরি এই, ‘এই ইস্যুতে আমরা আমাদের আর্টিস্টকে প্রায়োরিটি দেবো’!

এটাই হয় তো খোলা চোখে প্রত্যাশিত। শিল্পী সমিতির কাজই তো শিল্পীদের অধিকার রক্ষা করা। যদিও প্রযোজকের দা’য়ের করা অ’ভিযোগগুলো ‘শিল্পীর অধিকার রক্ষা’ হিসেবে দেখার সুযোগ আছে কি না, সে বি’ষয়টি সময়ই বলে দেবে।

তবে নিপুণ আক্তার বেশ স্পষ্ট ভাষাতেই বললেন, ‘যে কেউ সমিতিতে অ’ভিযোগ দিতে পারেন। এটাও তেমনই একটি অ’ভিযোগ। আমরা সেটা রিসিভ করেছি। আপনারা জানেন, আমাদের সভাপতি এখন দেশের বাইরে। তিনি দেশে আসলেই আমরা বি’ষয়টি সাংগঠনিক টেবিলে বসে পর্যালোচনা করবো। আমরা শাকিব খানের সঙ্গে বি’ষয়টি নিয়ে আলাপ করবো। পুরো বি’ষয়টি বোঝার চেষ্টা করবো।’

কিন্তু সেটি কবে নাগাদ। সমিতির সভাপতি দেশের বাইরে থাকলেও শাকিব খান কিন্তু ঢাকাতেই আছেন। এমন ভ’য়ংকর অ’ভিযোগ থেকে তো সাংগঠনিক দায় মুক্তিরও বি’ষয় থেকে যায়। কারণ, পুরো বি’ষয়টি বেশ স্পর্শকাতর। এবং এটির সঙ্গে দেশ তো বটেই, জড়িয়ে রয়েছে বিদেশও।

নিপুণ আক্তার জানান, ৫ দিনের মধ্যে সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন দেশে ফিরছেন। তিনি ফিরলেই বি’ষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করবেন। তার ভাষায়, ‘আমাদের সভাপতি দেশে আসবেন ৫ দিনের মধ্যেই। আমি যতদূর জানি। তিনি আসলেই আমরা আগে আর্টিস্টের সঙ্গে কথা বলবো। তিনি আমাদের একজন সুপারস্টার। আমরা তার সঙ্গে পুরো বি’ষয়টি আলাপ করবো। অ’ভিযোগের সত্যতা যাচাই করবো। মোট কথা আমরা আমাদের আর্টিস্টকে প্রায়োরিটি দেবো। এরপর যিনি অ’ভিযোগ করেছেন, তার সঙ্গেও কথা বলবো। তারপর একটা সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে।’

এটুকু স্পষ্ট ঢালিউডের ঘোলা জলে সহসা ফিটকিরি পড়ছে না! বি’ষয়টি গড়াবে আরও কয়েকদিন।

এর আগে বুধবার (১৫ মার্চ) বিকালে শাকিব খানের বি’রুদ্ধে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনে লিখিত অ’ভিযোগ দাখিল করেছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী প্রযোজক রহমত উল্ল্যাহ। সেখানে তিনি অপেশাদার আচরণ, চুক্তিভঙ্গ ও শ্লী’লতাহা’নির মতো বি’স্ফোরক সব অ’ভিযোগ তুলেছেন খানের বি’রুদ্ধে।

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বারা গৃহীত অ’ভিযোগের একটি কপি বাংলা ট্রিবিউনের হাতে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, “২০১৭ সালে পূর্বচুক্তি মোতাবেক অভিনেতা শাকিব খান ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নামক সিনেমার কাজে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। আমি সেই চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রযোজক। তার মতো একজন বিখ্যাত অভিনেতাকে নিজের চলচ্চিত্রে অভিনয় করাতে পারব জেনে পুলকিত ছিলাম। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেলে ব্যবসাসফল হবে সেই বিশ্বাস ছিল। ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ মুক্তি পেলে সেটি হতো অস্ট্রেলিয়ায় অভিনীত প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র। আমার এবং এটার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের আশা ছিল সিনেমাটির হাত ধরে অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্কে নতুন একটি অধ্যায় রচিত হবে। শাকিব খান একজন বিখ্যাত অভিনেতা। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের দর্শক চাহিদা অনেক। তাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল তিনি আমাদের সাথে পেশাগত আচরণ করবেন। অথচ, আজ পর্যন্ত এই সিনেমার কাজ তিনি শেষ করেন নাই।

‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবির শুটিং চলাকালীন শাকিব খান দ্বারা যেসব ক্ষ’তির সম্মুখীন হয়েছেন, তার একটি তালিকা উল্লেখ করেছেন এই প্রযোজক। তা হলো-

১. আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেয়া সত্ত্বেও কোনও রকমের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শুটিং বাতিল করে দিতেন।

২. তার খাদ্যাভ্যাসজনিত চাহিদা ছিলো এমন যে, হঠাৎ করে তিনি অদ্ভুত রকমের খাবার খেতে চাইতেন; আর তাতেই পুরো শুটিং ইউনিট নিয়োজিত হতো তার পছন্দের খাবার খুঁজে বের করার জন্যে। এতে করে শুটিংয়ের কাজে যেমন ব্যাঘাত হতো, তেমনি চলচ্চিত্রের নির্মাণ বায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে গিয়েছিল।

৩. তিনি শুটিং করতে আসতেন নিজের ইচ্ছা মতো সময়ে। অনেক সময় এমন হতো যে অত্যন্ত ব্যয়বহুল সেট বানিয়ে আমরা তার জন্যে অপেক্ষা করতাম। তিনি হয়ত শেষ বেলায় দুই এক ঘণ্টা অভিনয় করার জন্য আসতেন। এভাবে শুটিং না করেও সকলের বেতন দিয়ে আমরা শুধু অপেক্ষা করতাম তিনি আসবেন বলে।

এছাড়া আরও দুটি পয়েন্টে শাকিবের বি’রুদ্ধে আ’পত্তিকর কর্মকাণ্ড ও শ্লী’লতাহা’নির মতো বি’স্ফোরক অ’ভিযোগ তোলা হয়েছে। যেখানে প্রযোজক তুলে ধরেন হোটেল কক্ষে শাকিব খানের আ’পত্তিকর জীবনাচরণ এবং শুটিং ইউনিটের সহকর্মীর শ্লী’লতাহা’নির মতো বিব্রতকর ও বিস্ময়কর ঘটনা। যার সূত্র ধরে মা’মলাও হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায় (মা’মলা নম্বর: NSW Police

রহমত উল্ল্যাহর দাবি, পরবর্তীতে তিনি শাকিব খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। অ’ভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ‘২০১৮ সালে তিনি (শাকিব খান) আবার অস্ট্রেলিয়ায় আসলে ধ”ণের অ’ভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রে’প্তার হন। সামাজিক চা’পে এবং আরও নিগ্রহের ভয়ে নি’র্যাতিতা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় শাকিব সেই যাত্রায় ছাড়া পেয়ে যান।’

উল্লেখ্য, ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবির পরিচালনা করছিলেন আশিকুর রহমান। এতে শাকিবের নায়িকা হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন সিবা আলী খান। তাদের পক্ষ থেকে অবশ্য কোনও অ’ভিযোগের খবর প্রকাশ্যে আসেনি।