প্রিয় তারকা নিশো-তিশাকে নিয়ে ঝগড়া থেকে নাটকীয় প্রেম-বিয়ে

| আপডেট :  ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:২০ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:২০ অপরাহ্ণ

নাটক নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা হয় ২০২১ সালে, এমন একটি ফেসবুক গ্রুপে যোগ দেন দুবাইপ্রবাসী সাজ্জাদ আহমেদ। গ্রুপে পছন্দের তারকা আফরান নিশোর নাটকের গল্প, সংলাপ, জুটি, স্টাইল—এসব নিয়ে প্রায়ই পোস্ট দিতেন তিনি।

সেই গ্রুপের একটি পোস্টে একদিন তাঁর চোখ আটকে যায়। নায়লা শারমিন নামের একজন লিখেছেন, নাটকের রোমান্টিক জুটির মধ্যে অপূর্ব ও তানজিন তিশা জুটিই সেরা। দেরি না করে সাজ্জাদ পাল্টা মন্তব্য করেন, নিশো এবং তিশা জুটি রোমান্টিক নাটকের জন্য সেরা জুটি। সেই স্ট্যাটাসের নিচে নায়লার আবার মন্তব্য, রোমান্টিক নাটকে তিশাকে অপূর্বর সঙ্গেই মানায় বেশি। একমত নন সাজ্জাদ। তাঁর পাল্টা মন্তব্য, ‘তিশাকে নিশো ভাইয়ের সঙ্গে বেশি মানায়।’ এভাবে প্রিয় তারকাকে নিয়ে মন্তব্যে পান থেকে চুন খসলেই শুরু হতো পাল্টাপাল্টি মন্তব্য, দিনের পর দিন চলত তর্কবিতর্ক।

প্রিয় তারকাকে নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি হলেও কেউই কিন্তু কখনো ব্যক্তিগতভাবে একে অন্যকে আঘাত করে কথা বলতেন না। সাজ্জাদ বলেন, ‘নায়লা সব সময় তানজিন তিশাকে নিয়ে যা বলত, লজিক দিয়েই বলত। কিন্তু তার মনোভাব থাকত তিশাই সেরা। আমি তখন যুক্তি দিতাম, নিশো অবশ্যই সেরা, নিশোর জন্য নাটক হিট ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন সে বলত তিশার কথা। এভাবে দিনের পর দিন চলত। গ্রুপে যাঁরা নিয়মিত, তাঁরা জানতেন যে কেউ নিশো আর তিশাকে নিয়ে নেতিবাচক কিছু লিখলেই আমরা পাল্টা উত্তর দেব। একপর্যায়ে আমাদের নিয়ে আরেকটা গ্রুপ খোলে আমার বন্ধু আরিশা। সে–ও তিশার ভক্ত।’

সাজ্জাদ, নায়লাসহ গ্রুপের ঝগড়াটে কয়জনকে নিয়ে আরিশা জাহানের আলাদা গ্রুপ খোলার পেছনে উদ্দেশ্য ছিল, নাটক নিয়ে আর ঝগড়া নয়। এই গ্রুপে কথা হবে বন্ধুর মতো। এখন তাঁরা বন্ধু। তখন থেকে সাজ্জাদের মনে হয়, মেয়েটার সঙ্গে এত ঝগড়াঝাঁটি হয়, কিন্তু কখনো সে আমার ওপর রাগে না; প্রতিবারই পাল্টা উত্তর দেয়। মার্চ থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, আর ঝগড়া করে মন্তব্য করবেন না।

২০২১ সালের ১৭ জুন ছিল সাজ্জাদের জন্মদিন। সাজ্জাদকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সেদিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন আরিশা। সেখানে মন্তব্য করে সাজ্জাদকে শুভেচ্ছা জানান নায়লা। সাজ্জাদ বলেন, ‘আমাদের এত ঝগড়াঝাঁটি হতো যে ব্যক্তিগতভাবে কখনোই কেউ কারও সঙ্গে কথা বলতাম না, কিন্তু চিনতাম। জন্মদিনের সেই মন্তব্যের জবাবে আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। সেদিন নায়লা একটি ভিডিও পোস্ট করেছিল। সেই ভিডিওটির জন্য তাকে নক দিই। এই প্রথম চ্যাটে কথা বলা। তারপর আমাদের কথা হতে থাকে।’

এর মধ্যে ৩ জুলাই সাজ্জাদের কাছ থেকে একটি মেসেজ পেয়ে চমকে ওঠেন নায়লা, ‘তোমাকে পছন্দ করি, বিয়ে করতে চাই।’ বার্তাটির আন্তরিকতা নিয়ে নায়লার মনে সন্দেহ হয়। তিনি বলেন, ‘হুট করে প্রেমের প্রস্তাব। আমার ঠিক বিশ্বাস হয়নি। মনে হচ্ছিল ফ্ল্যার্ট করার চেষ্টা করছে না তো। এগুলো নিয়ে তার কাছে জানতে চাই। তখন সে আমাকে তিন মাস আগের স্ক্রিনশট দেখায়, যেখানে সে বন্ধুদের বলেছিল আমাকে পছন্দ করে। তখন আমার কিছুটা বিশ্বাস হয়। মনে হয়, সে আর যা–ই হোক প্রতারক নয়। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিই ওকেই বিয়ে করব।’

বিয়ে করতে তো পরিবারের সম্মতি লাগবে। দুজনই তাদের পরিবারকে জানালেন, তাঁরা বিয়ে করতে চান। তাঁদের ভালো লাগার মানুষ আছে। কিন্তু ফেসবুকের প্রেম মেনে নিতে চাইল না দুই পরিবার। দূরত্বের ব্যাপার তুললেন তাঁরা। সাজ্জাদের বাড়ি চট্টগ্রাম। নায়লার রাজশাহী। মাঝে ১৪–১৫ ঘণ্টার দূরত্ব। পরিবারের সদস্যদের রাজি করাতে চেষ্টা করলেন সাজ্জাদ। একপর্যায়ে কেউ কেউ রাজি হয়ে গেল।

কিন্তু মুশকিল হলো নায়লার পরিবার নিয়ে, তাঁরা প্রায় কেউই রাজি নন। তত দিনে সাজ্জাদ ঠিক করে ফেলেছেন, নাটকের নায়কের মতোই বন্ধুদের নিয়ে রাজশাহীতে যাবেন। গিয়ে প্রেমিকাকে বিয়ে করে সঙ্গে নিয়ে চলে আসবেন। এই উদ্দেশ্যে ১৪ জানুয়ারি দুবাই থেকে তিনি দেশে আসেন। এক দিন পর চলে যান রাজশাহী।

সাজ্জাদ বলেন, ‘রাজশাহীতেই আমাদের প্রথম দেখা। তখন নায়লা তার বাসার লোকদের জানায় আমাদের বিয়ে না দিলে সে আর বাসায় ফিরবে না, আমার সঙ্গে চলে আসবে। একসময় তাঁরাও রাজি হয়ে যান। পরে দুই পরিবারের মধ্যে ভিডিওতে কথা হয়। আস্থার একটা জায়গা তৈরি হয়, মনে হয় আমাদের দুই পরিবারের সম্পর্ক অনেক দিনের। আমরা ১৬ তারিখেই বিয়ে করি। পরে তাকে নিয়ে চট্টগ্রাম চলে আসি।’

সাজ্জাদের পাশ থেকে অনার্সপড়ুয়া নায়লা বললেন, ‘আমার শ্বশুরবাড়ির লোক খুবই ভালো। তাঁরা আমাকে ভালোভাবেই গ্রহণ করেছেন। সবাইকে আমাদের জন্য দোয়া করতে বলবেন। ফেসবুকে ঝগড়াঝাঁটি থেকেই আমাদের বিয়ে। সে জন্য নাটকের গ্রুপের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’ সাজ্জাদ ও নায়লা জানালেন, ২৬ জানুয়ারি বউভাতের অনুষ্ঠান করবেন। এ দুই ভক্তেরই ইচ্ছা প্রিয় তারকাদের নিমন্ত্রণ করার। প্রথম আলো