স্টাইলিশ অভিমানী জাফর ইকবালের শেষ জীবনটা ছিল করুণ

| আপডেট :  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৪৩ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৪৩ অপরাহ্ণ

শুধু অভিনয় কিংবা গান নয়, মুক্তিযু’দ্ধে অংশগ্রহণের জন্যও অমর হয়ে আছেন চিরসবুজ নায়ক-বীর ‍মুক্তিযো’দ্ধা জাফর ইকবাল। আশির দশকে যিনি ছিলেন তরুণ-ত’রুণীদের স্বপ্নের নায়ক।

আজকের এই দিনে সেই নায়ক, গায়ক, গিটারিস্ট ও মুক্তিযো’দ্ধার জন্ম। ১৯৫০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানে জন্ম হয় এই তারকার। তবে তার পৈতৃক নিবাস সিরাজগঞ্জে। জাফর ইকবালের বেড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক পরিবারে। তার বড় ভাই আনোয়ার পারভেজ এবং ছোট বোন শাহনাজ রহমতুল্লাহ দুজনেই সংগীতশিল্পী। তারা কেউই বেঁচে নেই।

বাংলা চলচ্চিত্রের ফ্যাশন সচেতন ও স্টাইলিশ নায়কদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম একজন। সেই সাথে যতটা না ছিলেন স্টাইলিশ তার চেয়ে বেশি ছিলেন অভিমানী ও আবেগপ্রবণ। সময়ের চেয়ে ছিলেন এগিয়ে। চিরসবুজ নায়ক হিসেবেও বেশ পরিচিত। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন গিটারিস্ট ও সংগীতশিল্পী। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযু’দ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর বি’রুদ্ধে সশরীরে লড়েছিলেন।

জাফর ইকবাল অভিনীত প্রথম ছবি ‘আপন পর’। সেই ছবিতে জাফর ইকবালের বিপরীতে অভিনয় করেন প্রয়াত কবরী সারোয়ার। পরবর্তীতে নায়িকা ববিতার সঙ্গে তার জুটি দর্শক নন্দিত হয়ে ওঠে। ৩০টির মত ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন জাফর ইকবাল ও ববিতা।

গুঞ্জন আছে, এ জুটির বাস্তব জীবনে রসায়নও বেশ জমে উঠেছিল নাকি। গত বছর চিত্রনায়িকা ববিতার তার জন্ম’দিনে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে স্বীকারও করেন যে, জাফর ইকবাল এবং তিনি একে অপরকে পছন্দ করতেন। তবে সে সম্পর্ক বেশিদূর গড়ায়নি।

১৯৮৯ সালে জাফর ইকবাল অভিনীত ত্রিভূজ প্রেমের ছবি ‘অবুঝ হৃদয়’ দারুণ ব্যবসা সফল হয়। সে ছবিতে আপন দুই বোন চম্পা ও ববিতার বিপরীতে জাফর ইকবালের অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫০টি ছবি করেন প্রয়াত এ নায়ক। যার বেশিরভাগই ব্যবসা সফল।

অভিনয়ের পাশাপাশি চমৎকার গানও গাইতেন জাফর ইকবাল। ফলে বেশকিছু ছবিতে তিনি গায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৬৬ সালে একটি ব্যান্ড দল গড়ে তোলেন জাফর ইকবাল। তার প্রথম সিনেমায় গাওয়া গান ছিল ‘পিচ ঢালা পথ’।

১৯৮৪ সালে জাফর ইকবালের কণ্ঠে বড় ভাই আনোয়ার পারভেজের সুরে রাজ্জাক অভিনীত ‘বদনাম’ ছবিতে ‘হয় যদি বদনাম হোক আরো’ গানটি একসময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় ।

মূলত জাফর ইকবাল ছিলেন জনপ্রিয় একজন গিটারিস্ট। ভালো গিটার বাজাতেন বলে প্রখ্যাত সুরকার আলাউদ্দিন আলী তাকে দিয়ে অনেক ছবির আবহসংগীতও তৈরি করিয়েছিলেন। যদিও এত গুণে সমৃদ্ধ এই নায়কের শেষ জীবনটা ছিল বড়ই করুণ।

জাফর ইকবাল সনিয়া নামে একজনকে বিয়ে করেন। তাদের দুই স’ন্তান রয়েছে। জানা যায় মূলত, পারিবারিক অ’শান্তির কারণে এক সময় খুব ভে’ঙে পড়েন জাফর ইকবাল। ম’দ হয়ে গিয়েছিল তার নিত্যসঙ্গী।

পরবর্তীকালে ম’দ্য পানসহ অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন শুরু করেন। যার ফলে এক সময় ক্যান্সারে আ’ক্রান্ত হন। পরে তার হার্ট এবং ন’ষ্ট হয়ে যায় দুটি কিডনিই। ১৯৯২ সালের ৮ জানুয়ারি মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে মৃ’ত্যুবরণ করেন জাফর ইকবাল।