ছেলে বড় হয়ে পরীকে বলবে, ‘প্রাউড অব ইউ মা’: চয়নিকা

| আপডেট :  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৫৪ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৫৪ অপরাহ্ণ

গত ১০ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নবজাতকের জন্ম দেন অভিনেত্রী। তারকা দম্পতির সন্তানের নাম শাহীম মুহাম্মদ রাজ্য। পরীমণি স্বামী ও সংসার নিয়ে এতদিন ব্যস্ত থাকলে সন্তান জন্মের পর সব ফোকাস এখন ছেলের দিকে। ছেলে রাজ্যকে নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটে অভিনেত্রীর। যা পরীর সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই স্পষ্ট বুঝা যায়। এছাড়া নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর পোস্ট থেকেও যেন এমনটাই জানা গেল।

শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পরীমণির একটি স্ট্যাটাস তুলে ধরে তাকে নিজের কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা ফেসবুকে তুলে ধরেছেন চয়নিকা চৌধুরী। সঙ্গে পরীর ছেলে রাজ্যকে কোলে নেয়া দুটি ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি।

এই নির্মাতা ফেসবুকে লিখেছেন, “পরী মণি লিখেছে, আমার পদ্মফুল হাসে…। হাসবেই তো। এটাই তো হবার কথা ছিল মা। কী মায়া ছবিটি বলো! কিন্তু আমি লিখতে চাই অন্যকিছু। আসলে আমি ছবিতে আমার কোলে রাজ্যের মাকে নিয়ে লিখতে চাই, বলতে চাই। আমাদের সবচেয়ে খারাপ দিক হচ্ছে, দূর থেকে আমরা নিজেদের মনগড়া কথা বলি। কিন্তু কাছে না গেলে অনেক কিছুই অজানা থেকে যায়। সত্যিই আমি রাজ্যের এই মাকে দেখে মুগ্ধ, আপ্লুত। যা দেখে বুঝে আমার চোখ ঝাপসা হয়েছে। অভিনয়শিল্পী পরী এবং রাজ্যের মা আকাশ আর পাতাল পার্থক্য।”

চয়নিকা লিখেছেন, “মেয়েরা মা হয় যখন, তখন নতুন মাকে তার গুরুজনেরা সাহায্য করেন, কেউ কেউ বাবার বাড়ি, বড় বোনের বাড়ি চলে যায়। কেউ কেউ গৃহকর্মীর সাহায্য নেয়। এটা হতেই পারে। খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু পরীমণি মানে রাজ্যের মাকে দেখে আমি রীতিমতো অবাক এই এক মাস ৬ দিনে।

সে নিজের হাতে রাজ্যের সব কাজ করেছে। নিয়ম করে ফিডিং (বাইরের ফিডার না) করানো, ড্রেস বদল করা, বিছানা করা, প্যাম্পারস চেঞ্জ করা, সন্তানের যাবতীয় কাজ করা এবং সঙ্গে বাসার রান্নাও সেই করে (মেইন ফুড)। ইভেন কাল তার সঙ্গে অনেকদিন পর একরাতে থাকাতে হঠাৎ আমি দেখলাম সে বিছানায় নেই। উঠে বাথরুমের কাছে যেতেই দেখলাম, বাচ্চার কাপড় নিজের হাতে ধুচ্ছে, অন্য শুকনা কাপড় আগেই ভাঁজ করছে নিজেই। আর পরে ইস্ত্রি করছে।”

“বললাম, মর্জিনাকে দিলেই তো ধুয়ে দিত। উত্তর দিলো, মা, আমার ছেলের সব কাজ প্রতিদিন আমি পুরোটাই নিজের হাতেই করতে চাই। আমার সন্তান যেন মা হিসেবে আমার কাছ থেকে কোনো রকম কোনো অবহেলা বা ত্রুটি না পায়। আর ওর কাজ আমি যতটা ভালোবাসা-যত্ন দিয়ে করব, অন্য কেউ কমই করবে। সারারাত দেখলাম, কতবার সে উঠলো, ফিডিং করালো, ওকে নিয়ে হাঁটলো। নিজেও চট করে এক ফাঁকে খেয়ে নিলো।

এর ভেতরেও আতিথিয়েতার দিকেও সমান নজর। এই পরী কত ঘুম কাতুরে ছিল। কতবার ডাকতে হতো। আর এখন সেই পরী একটু নড়াচড়ার আওয়াজ পেলেই জেগে যায়। ওর একমাত্র জগত ওর রাজ্য। ভোর হয়। আমরা সূর্য ওঠাও দেখি। সঙ্গে তার সারাক্ষণ হাসি মাখা মুখ। নেই নিজের জন্যে কোন কমপ্লেইন। অথচ চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ।”

“বললো, এতটুকু বাচ্চাকে রেখে কী করে থাকে একজন মা? মায়া লাগে না? ৭/৮ মাস কোনো কাজ করার কথা ভাবতেও পারি না আমি। ওর কথা শুনে শুনে আমার নিজের কথা আস্ক করলো, আমারও সব মনে হয়ে গেল। আমার বিয়ে হয় ১৯ বছর ২ দিনে। একটা মানুষ ছিল না বাসায় বাচ্চা ধরার। কাজের লোক ছিল ছুটা। এক বছর ২ মাস ১০ দিনের ছোট বড় আমার ছেলে-মেয়ে! সেই দিনগুলোর কথাই অনেকদিন পর মনে পড়ে গেল রাজ্যের মাকে দেখে। আহা! পরী, তুমি সত্যিই পেরেছ। তোমার জন্যে অনেকের দোয়া-প্রার্থনা আছে। তাই তোমার সবকিছু সুন্দরভাবেই হয়েছে। সার্থক মা হয়েছ তুমি। সামনে আরও তা পূর্ণ হবে যা আমি দেখতে পাচ্ছি। আমি জানি, তুমি যখন আবার কাজ শুরু করবে, তখন সেইভাবেই দর্শকের সামনে আসবে।”

এই নির্মাতা সবশেষ লিখেছেন, “তুমি পেরেছ, পারবে আমি নিশ্চিত। তোমার মুখে সারাক্ষণ এই হাসি যেন এইভাবেই থাকে, মন থেকে এই আশীর্বাদ/প্রার্থনা সব সময়। পরী, তুমি তোমার নিজের মাকে পাওনি। কিন্তু রাজ্য বড় হয়ে অনেক গর্ব করবে তোমাকে নিয়ে যে, কত বাধা, প্রতিকূলতা, মানসিক চাপ নিয়ে হাসি-খুশিতে একজন মা তার রাজপুত্রের জন্ম দিয়েছে। প্রাউড অব ইউ মা। অনেক সুখে থেকো রাজ্য আর রাজকে নিয়ে। হয়ত একদিন তুমি মায়েদের আইডল হয়ে যেতে পারো। সেইদিন বেশি দূরে না। ভালোবাসি তোমাকে অনেক, যা বলা হয়ে ওঠে না। এও জানি তোমার-আমার পবিত্র সুন্দর সম্পর্ক থাকবে অনন্তকাল। আমি থাকি বা না থাকি, তুমি থাকবে আজীবন, আমৃত্যু আমার মনের ভেতরে।”