প্রিয় মানুষটিকে ছাড়া ১৬ বছর কেমন আছে নাসির খানের পরিবার

| আপডেট :  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:০৯ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:০৯ অপরাহ্ণ

ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা নাসির খান একসময়ে চলচ্চিত্র কাঁপাতেন। তার জনপ্রিয়তা ছিল সবার কাছে। সকলেই তাকে প্রচন্ড পছন্দ করতো ও ভালোবাসতো। আজ এই কিংবদন্তী অভিনেতার জন্মদিন। ১৬ বছর ধরে প্রিয় এই অভিনেতা ছাড়া তারা পরিবার। আর বর্তমানে কেমন আছে তার পরিবার। সেইসব বিষয়েই কথা হয়েছে তার পরিবারের সাথে।

পুরান ঢাকার বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনির ঠিক পাশের গলিতেই থাকতেন নাসির খান তার পরিবারকে নিয়ে। আর সেটি নাসির খানের গলি নামেও পরিচিত মানুষের কাছে। নাসির খানের মৃত্যুর পর সেই বাড়িতেই তিন মেয়েকে বড় করেছেন অভিনেতা নাসির খানের স্ত্রী মেহেরুন্নেসা স্বপ্না।

পরিবারের গুরুত্বপূর্ন সদস্য ছাড়া কেমন কাটছে দিনগুলো? এমন প্রশ্নে কিছুটা নিস্তব্ধ হলপও পরে মেহেরুন্নেসা বলতে থাকেন। তিনি বলেন, “তিন মেয়েকে বড় করা খুবই কঠিন ছিল। একাই তাঁদের মা–বাবার স্নেহ দিয়ে মানুষ করেছি। যখন যেভাবে পেরেছি, তাদের সেভাবে সবটা দিয়ে মানুষ করেছি, এখনো করছি। ওদের বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো মেয়েগুলোর শৈশব, বেড়ে ওঠা, জীবনযাপন, পড়াশোনাও হয়তো অন্য রকম হতে পারত। তবে আমি মেয়েদের তাদের বাবার আদর্শেই মানুষ করেছি। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। মেজ মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। ছোট মেয়ে ও–লেভেলে পড়ছে। যতটা পেরেছি, তাদের সামনে এগোনোর স্বপ্ন দেখিয়েছি। আমরা ভালো আছি। তারপরও তাঁর অভাব আমাদের বিশাল অংশজুড়ে সব সময়ই আছে।”

নাসির খানের তিন মেয়ে রয়েছে। নাছিমা খানম মমতা, ফাহিমা খানম শর্মিতা ও মহিমা খানম নিশিতা। বড় দুই মেয়ে নাছিমা খানম মমতা ও ফাহিমা খানম শর্মিতা নাসির খানকে দেখলেও তার ছোটো মেয়ে মহিমা খানম নিশিতার কোনো স্মৃতিই মনে নেই।

ছোট মেয়ে মহিমা খানম নিশিতা বলে, “আমি অভিনেতা নাসির খানের মেয়ে এই পরিচয়ে গর্বিত। বাবাকে মিস করি। হয়তো আজ বাবা বেঁচে থাকলে আমাদের জীবন অন্য রকম হতে পারত। বাবা আমাদের নিয়ে ঘুরতে যেতেন, বাবার আদর পেতাম।”

শৈশবে অভিনেতা বাবার হাত ধরে স্কুলে গিয়েছেন বড় দুই মেয়ে। মেজ মেয়ে ফাহিমা খানম শর্মিতার মনে সেই স্মৃতিগুলো এখনো ভেসে ওঠে। শর্মিতা বলেন, “বাবা অনেক ব্যস্ত থাকতেন। তারপরও আমাদের দুই বোনকে হাত ধরে স্কুলে নিয়ে যেতেন, পরীক্ষার হলে দিয়ে আসতেন। কখনো নিয়ে আসতেন। প্রতি শুক্রবার ঘুরতে নিয়ে যেতেন। কখনো দেশের বাইরে নিয়ে যেতেন। বাবার সঙ্গে আমাদের সময়গুলো অন্য রকম ছিল। আজ বাবা থাকলে হয়তো বাবার জন্মদিন নিয়ে মেতে থাকতাম। বাবাকে বলতাম শুটিংয়ে যেতে পারবে না।”

এ সময় শর্মিতা আরও বলেন, “আমরা তিন বোন। আমাদের দেখার তেমন কেউ নেই। আমার বিয়ে জানুয়ারিতে। কারণ, এত কিছু মা সামলে উঠতে পারবেন না। এই কারণেই দেরিতে দিন ধার্য হয়েছে। এখন বাবা থাকলে হয়তো আরও আগে বিয়ের দিন ঠিক হতো। মাকে একটু একটু করে এগোতে হচ্ছে। বাবার না থাকার সেই আফসোসটা তখন তীব্র হয়। আজ বাবা থাকলে তিনিই সব ব্যবস্থা করতেন। এই কষ্টটা কাউকে বোঝানো যাবে না। একটা মেয়ের বিয়ের সময় তার বাবা–মা কতটা জরুরি, সেটা সেই মেয়েই বোঝে। সেখানে মা যতটা পেরেছেন সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। সাধ্যের চেয়ে বেশি করেছেন। কিন্তু বাবার অভাব থেকেই যায়।”

বাবা মারা যাওয়ার পর ১৫ বছর বাবার ছবি দেখেন না শর্মিতা। বাবাকে পর্দায় দেখলে তাঁর কষ্ট হয়। তবে এখনো পরিবারের অন্যদের নিয়ে বাংলা সিনেমা দেখেন।

উল্লেখ্য, নাসির খানের জন্ম ১৯৫৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। মাত্র ৪৭ বছর বয়সে ২০০৭ সালের ১২ জানুয়ারি মারা যান নাসির খান। দীর্ঘ ২৭ বছরের ক্যারিয়ারে নাসির খান ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘সাক্ষাৎ’, ‘বিক্ষোভ’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘দেনমোহর’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘গরিবের রাণী’সহ পাঁচ শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। মূলত খলচরিত্রে অভিনয় করেই তিনি জনপ্রিয়তা পান।