মৃ” . মে’ য়ে’টিকে তি’ন বার ধ”. না ক’রলেও চ’লতো!

| আপডেট :  ১৩ জানুয়ারি ২০২১, ০৮:২৩ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৩ জানুয়ারি ২০২১, ০৭:১৭ পূর্বাহ্ণ

ডা. আলী জাহানঃ ঢাকার কলাবাগান থানা এলাকায় ইংরেজি মাধ্যমের এ লেভেলের ছা’ত্রী আনুশকা নুর আমিনকে নিয়ে আ’লোচনা-প’র্যালোচনা এখন তু’ঙ্গে। বাংলাদেশের মা’নুষ সব সময় কিছু একটা নিয়ে ব্য’স্ত থাকতে ভালোবাসেন। আ’পাতত সেই ব্যস্ততার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে আনুশকা নূর আমিনের মৃ’’ ত্যুর ঘটনা। পু’লিশ, ডাক্তার, আ’দালত থেকে শুরু করে সাধারণ মা’নুষও এই ম’হাযজ্ঞে আ’নন্দের সাথে যোগদান করছেন। রাষ্ট্রের ছোট ক’র্তা, বড় কর্’তা, মাঝারি ক’র্তা সবাই মতামত দিচ্ছেন। প্রজারাও বাদ যাচ্ছেন না।

আনুশকার সাথে তার ব’ন্ধু দিহানের কী স’ম্পর্ক ছিল তা কিছুটা অনুমান করা যায়। বাংলাদেশে ধ”… একটি সং’জ্ঞা দেয়া আছে। মে’ডিকেল সাইন্সে F’orensic Medicine সাবজেক্ট যখন আমাদের পড়ানো হতো তখন থেকেই আমরা সেই সংজ্ঞা ঠোঁটস্থ করেছি, আত্মস্থ করেছি।

সাধারণ মা’নুষ সেই সংজ্ঞা না জানলেও, ডাক্তার, পু’লিশ এবং আ’দালত তা নিশ্চয়ই জানেন বা জানা উচিত। সেই সংজ্’ঞাকে যদি আমরা বিশ্লেষণ করি তাহলে আনুশকার ঘ’টনাটিকে ধ”. বলা একটু কঠিন। আমি সেই বিশ্লেষণে এখন যাচ্ছি না। ধ”০ হয়েছে কিনা তা ফ’রেনসিক প’রীক্ষা, পু’লিশ এবং আ’দালতের শু’নানি এবং রি’পোর্টে পরিষ্কার হবার কথা। রায়ের আগে সবগুলো ব্যাপার গো’প’নীয়ভাবে হবার কথা। চূড়ান্ত মতামত জানার জন্য আমাদের আ’দালতের রায়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের সেই ধৈ’র্য নেই। আমাদের ক’র্তাব্যক্তিরা নি’জস্ব উ’দ্যোগে মতামত দিয়ে চলেছেন। আনুশকা ধ’..তা হয়ে মৃ’’ত্যুব’রণ করেছে একবার। আর মা”রা যাবার পর মে’য়ে’টিকে এবং মে’য়ের প’রিবারটিকে মোট কয় বার ধ”০ করা হয়েছে?

আনুশকা হ’’..কা’ণ্ডের এবং ত’থাকথিত ধ”০. একটি র’গরগে বর্ণনা দিয়েছেন আমাদের পু’লিশ বি’ভাগ। মৃ”ত মে’য়ে’টিকে প্রথমবার ধ”. করা হলো। সেই সাথে তার প’রিবার এবং ঘ’নিষ্ঠ ব’ন্ধু বা’ন্ধবীদের মা’ন স’ম্মান’কে ধ”. করা হলো। বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন কি এই ধ”.কে স’মর্থন করে? মে’য়ে’টি ধ’০র্’.’তা হয়ে অথবা অ্যা’ডভেঞ্চারে গিয়ে মৃ’’ত্যু ব’রণ করেছে। কিন্তু ম”রে গিয়েও মে’য়েটি আবারও ধ’০.”তা হচ্ছে। তার প’রিবার, আ’ত্মীয়স্’বজন এবং ব’ন্ধুবান্ধবরাও একই সাথে ধ’০..”ত হচ্ছে।

যে ডাক্তার প্রাথমিক ম’য়নাত’দন্ত করেছেন তিনি ধ”..র একটি গ্রাফিক বর্ণনা দিয়েছেন। মিডিয়াকে ডেকে এনে চ’মৎকার ব্রিফিং করেছেন! ধ”..র আ’লামত থেকে শুরু করে ধ’স্তা’ধ’স্তির কোন প্রমাণ আছে কিনা তাও তিনি বলেছেন। আনুশকা ওখানে আবার ধ’০র০’তা হয়েছে। তার সাথে তার প.রিবারও ধ”..র শি’কার হয়েছে। ফ’রেনসিক মে’ডিসিনের রিপোর্ট হবে গো’পনীয়। সেই গো’পনীয় রিপোর্ট আ’দালতে যাবে। আ’দালতে শুনানি হবে। তারপর সিদ্ধান্ত হবে আসলেই ধ”. কার্য সংগঠিত হয়েছে কিনা। বাংলাদেশে কি এই আইন চালু আছে? ফ’রেনসিক ডাক্তারকে কে এই অধিকার দিয়েছে যে, তিনি মি’ডিয়াকে ডেকে এনে ধ”..র আ’লামতের বর্ণনা দেবেন? বাংলাদেশে কি ব্’যক্তি বা প’রিবারের গো’পনী’য়তা বলতে কিছু নেই? সবকিছু উদোম?

মৃ”ত মে’য়ে’টিকে তৃতীয়বার ধ”..র মহান কাজটি সম্পাদন করেছে আমাদের কিছু মিডিয়া! মা’নুষকে বিনোদন দেবার জন্য কিছু কিছু মিডিয়া মে’য়েটিকে নিয়ে অনেক কাহিনী ছাপিয়েছে। পরিবারের পরিচয় প্রকাশ করেছে। মে’য়েটির ছবি প্রকাশ করেছে। কোথায় র’ক্ত পাওয়া গেছে, বি’ছানার চাদর বা সোফায় শা’রী’রিক স’ম্পর্কের আ’লামত পাওয়া গেছে- সেই খবরও কোন কোন মিডিয়া প্রকাশ করেছে। মৃ”ত আনুশকার ধ”. কার্য আবার স’ম্পাদিত হয়েছে। আমি যতদূর জানি যে বাংলাদেশে এই ধরনের একটি আইন রয়েছে যে ধ’০..তা মে’য়ের ছবি বা পরিচয় পত্রিকায় বা মিডিয়ায় প্রকাশ করা যাবে না। কে শুনে কার কথা? শুধু ছবি প্রকাশ করেই ক্ষা’ন্ত হ’য়নি পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলগুলো। পরিবারের চৌদ্দগুষ্টির খবর পর্যন্ত প্রকাশ করেছে। কী তা’মাশার ব্যাপার!

আনুশকা ধ”. এবং হ’’..কা’ণ্ডের খবরের মাঝখানে আমাদের এক বড় পদের শাহেনশাহ নতুন একটি প্রশ্ন করেছেন। তিনি আনুশকার মা-বা’বাকে প্রশ্ন করেছেন, ছে’লেমে’য়েরা কোথায় যায় এই খবর যদি না রাখতে পারেন তাহলে তাদের জন্ম দিয়েছেন কেন? খবরটি পড়ে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। বা’চ্চা জন্ম দেয়ার নতুন এই শর্ত বাংলাদেশ কখন চালু হয়েছে? এই শাহেনশাহ কি স’রকারের ক’র্মকর্তা? জনগণ কি ট্যাক্সের টাকা দিয়ে এই রাজপুত্রকে তাদের নি’রাপত্তা প্রদানের জন্য নিয়োগ দিয়েছে? সম্ভবত ওনার খেয়াল ছিল না। বাংলাদেশ কথা বললে সেই কথার জন্য কোন ট্যাক্স দিতে হয় না এবং প’রিণতি ভো’গ করতে হয় না। সেজন্যই আমাদের কথাগুলো লা’গামহীন হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ক্ষ’মতার আশেপাশে থাকলে আপনার ক্ষ’মতা অসীম। আপনি যা ইচ্ছা তা বলতেই পারেন। যা ইচ্ছা তা করতে পারেন।

কোন মা-বা’বাই চায়না তাদের ছে’লেমে’য়েরা এভাবে মৃ’’ত্যুব’রণ করুক। কোন মা-বা’বাই চায়না তাদের ছে’লেমে’য়েরা তাদের প’রিবারের জন্য বি’প’দজ’নক হয়ে উ’ঠুক। তারপরেও ঘ’টনা-দু”র্ঘটনা ঘটে যায়। আমরা বলতে পারি কিছুটা হলেও মা-বা’বাকে তার দায়-দায়িত্ব নিতে হবে। রাষ্’ট্রের কোনো দায়িত্ব নেই? ট্যাক্স দিয়ে যাদের মাসিক বেতন আমরা সরবরাহ করি তাদের কোনো দায়দায়িত্ব নেই? কেউ কেউ বলতে পারেন যে পিতা-মা’তারা তাদের দায়িত্ব সেভাবে পালন করেননি। কিন্তু তাই বলে তাদেরকে সমাজে প্র’কাশ্যে মা’নহানি ক’রার অধি’কার নিশ্চয়ই পু’লিশ, মিডিয়া বা ডাক্তারের নেই। ১৮ বছর হয়ে গেলে সেই স’ন্তানের দায়-দা’য়িত্ব কি মা-বা’বা’র উ’পর চা’পানো যায়?

বাংলাদেশের যে র’ক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে একটি মে’য়ের গ্রুপ স্টাডির কথা বলে ছে’লে ব’ন্ধুর বাসায় সময় কা’টানোকে অনেকেই মা’নতে চা’ইবেন না। বাংলাদেশের ধ’র্ম-সমাজ-সং’স্কৃতি এই ব্যাপারটিকে সমর্থন করবে না। সে কারণে অনেকেই সেই ছে’লে মে’য়ের অভিভাবক দের উপর হয়তো ক্ষু’ব্ধ হয়ে আছেন। তাদের সেই রা’গের যৌ’ক্তিকতা আছে। তবে কি’শোর-কি’শোরী ত’রুণ-ত’রুণীদের মনের খবর যারা রাখেন তারা নিশ্চয়ই জানেন এই সময়ে তারা প্রচুর অনুকরণ ও অনুসরণ করে। বাংলাদেশের নাটক সিনেমায় এ ধরনের দৃশ্য দেখানো হয়। অনেক ক্ষেত্রেই এই কি’শোর-কি’শোরীরা সেই নাটক এবং সিনেমার কা’হিনী গুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে গিয়ে বি’প’র্যয়ের স’ম্মুখীন হচ্ছে।

এর দায় দায়িত্ব নেবে কে? যারা এই কাজকে নাটক সিনেমায় সমর্থন করছেন তারাই আবার উ’ল্টা বলছেন ধ.’.’ককে ফাঁ” ”সি দেয়া হোক। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, যদি প্রমাণিত হয় (আমার ব্য’ক্তিগত অভিমত) আইনের সংজ্ঞায় যাকে ধ”. বলে বর্’ণনা করা হয়েছে তা আসলে এ ক্ষেত্রে ঘটেনি এবং মে’য়েটি নিরেট অ্যা’ডভেঞ্চারে গিয়ে মা” রা পড়েছে তাহলে তারা কী করবেন? যদি প্রমাণিত হয় দুজনের সম্মতিতে এ ধরনের কর্ম সম্পাদিত হতে গিয়ে হঠাৎ করে একজনের মৃ’’ ত্যু হয়েছে তাহলে উনারা কী বলবেন? যারা এই কাজগুলোকে প্রমোট করেছেন তাদের বক্তব্য জানার বড় ইচ্ছে। তখন কাকে ফাঁ’ ‘সি দেবার জন্য উনারা দা’বী করবেন?

যে মে’য়েটি মা’ ‘রা গেছে সে তো কারো স’ন্তান। প’রিণত বয়সি স’ন্তান। মে’য়ে’টিকে কীভাবে মা’ ‘রা গেছে তা নির্ধারণের দায়িত্ব আ’দালতের ও’পর আছে। আ’দালতের চূড়ান্ত রায় আসার আগে মৃ” ত মে’ য়েটিকে আর ধ”. করবেন না। এই ছে’লে এবং মে’য়ের প’রিবারের অধিকার আছে বেঁ”চে থাকার। তাদেরকে বাঁ’চতে দিন। মৃ”ত মে’য়ে’টিকে ধ”.. সাথে সাথে তাদের প’রিবারকে ধ”. করবেন না। যদি আপনাদের রা’গ প্রকাশ করতেই হয় তাহলে যে বা যারা এ ধরনের কাজকে বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতিতে প্রমোট করছেন তাদেরকে জ’বাবদিহিতার অধীনে নিয়ে আসুন।

ডা. আলী জাহান
কনসালটেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট এবং প্রাক্তন পুলিশ সার্জন (Forensic Medical Examiner), যুক্তরাজ্য।
[email protected]