‘সাধারণ মানুষ খোঁজ নেয়, কবরটাও দেখতে আসেনি মিডিয়ার কেউ’

| আপডেট :  ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৫:৫৯ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৫:৫৭ অপরাহ্ণ

তার চলে যাওয়ার পর এ পর্যন্ত মিডিয়ার কেউ তাদের খোঁজ নেয়নি। পরিবার তো দূরের কথা এটিএম শামসুজ্জামানের কবরটাও কোনোদিন কেউ দেখতে আসেনি। তবে সাধারণ মানুষ এটিএম শামসুজ্জামানকে মনে রেখেছেন। তাদের অনেকেই কবরের পাশে আসেন। খোঁজ নেন। পাশ দিয়ে গেলেও কবর জিয়ারত করে যান। আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন এটিএম শামসুজ্জামানের স্ত্রী রুনি জামান।

গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান। আজ বরেণ্য এই অভিনেতার ৮২ তম জন্মদিন। বিশেষ এই দিন কেমন কাটছে তার পরিবারের। কোনো আয়োজন থাকছে কিনা, তা জানতে কথা বলা হয় এটিএম শামসুজ্জামানের স্ত্রী রুনি জামানের সঙ্গে।

আক্ষেপ করে তিনি বললেন, ‘বিশেষ দিনটিতে আর কি আয়োজন থাকবে। আমি নিজেও তো অসুস্থ। নানাবিধ অসুখে ভোগছি। এখন ভালোয় ভালোই তাঁর (এটিএম শামসুজ্জামানের) কাছে চলে যেতে পারলেই হলো।’ মিডিয়ার কেউ তাদের খবর রাখেন না বলে জানান তিনি। এমনকি এটিএম শামসুজ্জামানের কবরটাও কোনোদিন কেউ দেখতে আসেনি বলে জানান রুনি জামান। তবে সাধারণ মানুষ এটিএম শামসুজ্জামানকে মনে রেখেছেন বলে তিনি জানান। রুনি জামান বলেন, ‘তাদের অনেকেই কবরের পাশে আসেন। পাশ দিয়ে গেলেও কবর জিয়ারত করে যান।’ 

এ বছরের শুরুতে তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে আক্ষেপ করে এটিএম শামসুজ্জামানের স্ত্রী রুনি জামান বলেছিলেন, মানুষটা মরে গেলো, আর সাথে সাথেই তার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলো। কেউ তাকে মনে রাখার প্রয়োজন বোধ করলেন না। দ্রুত সবাই তাঁকে ভুলে গেলো!’ বিষয়টি ভেবে এটিএমের মৃত্যুর প্রথম বছর খারাপ লাগতো রুনি জামানের। এখন আর খারাপ লাগে না। মিডিয়ার মানুষ তো বেঁচে থাকা অবস্থাতেও তেমন খোঁজ নেয়নি। তাই তাদের কাছে প্রত্যাশা করাটাও বোকামিই মনে করেন তিনি। 

রুনি বলেন, ‘মিডিয়ার মানুষ সামনা সামনি অনেক কিছু বলে। কিন্তু আড়ালে গেলে তারা সব ভুলে যায়। এখন আর তাদের কাছ থেকে একটা ফোন কলও আশা করি না। যখন  এটিএম শামসুজ্জমান অসুস্থ হয়ে বেঁচে ছিলেন তখনও কেউ যোগাযোগ করতো না বলে আক্ষেপ করতেন। এখন মৃত্যুর পর আমার আক্ষেপ করার আর কিছু নেই।’

এটিএমের কর্মজীবনকে স্মরণ করে রুনি জামান বলেন, ‘নাটক, সিনেমার জন্য সারাটা জীবন দিয়ে গেলেন। নিজের স্বার্থে কিচ্ছু চিন্তা করেননি, নাটক সিনেমাকে সব দিয়ে গেলেন। অথচ তার মৃত্যুর পর কেউ সামান্য খোঁজ খবরটাও নিলেন না। অন্তত নাটক সিনেমার মানুষরাতো তার পরিবারের খোঁজ খবর নিতে পারতেন! হয়তো এটাই বাস্তবতা।’

এটিএমের মূল নাম আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান হলেও কিংবদন্তি এ অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান নামেই তুমুল জনপ্রিয়। ছোটপর্দা কিংবা বড়পর্দা সকল ক্ষেত্রেই তুমুল জনপ্রিয়, নন্দিত ও সফল অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন এই কিংবদন্তি। তবে তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের ভোলাকোটের বড় বাড়ি। তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে পুরান ঢাকার দেবেন্দ্রনাথ দাস লেন এলাকায়।

এটিএম শামসুজ্জামানের অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল কৌতুক অভিনেতা হিসেবে। সে সময় তিনি বেশ কয়েকটি সিনেমায় কৌতুকাভিনেতার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। এই চরিত্রে তার অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘জলছবি’, ‘যাদুর বাঁশি’, ‘রামের সুমতি’, ‘ম্যাডাম ফুলি’, ‘চুড়িওয়ালা’ ইত্যাদি। চিত্রনাট্যকার ও কাহিনীকার হিসেবেও সফল এটিএম শামসুজ্জামান। তার চিত্রনাট্যে প্রথম সিনেমা হচ্ছে ‘জলছবি’। পরবর্তীতে তিনি শতাধিক সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেছেন।

চলচ্চিত্রে এটিএম শামসুজ্জামানের প্রাপ্তি অনেক। শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা হিসেবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনবার, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে একবার, শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রে একবার এবং আজীবন সম্মাননা হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। এছাড়া ২০১৫ সালে শিল্পকলায় অসামান্য অবদান রাখায় রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদক লাভ করেন এই গুণী অভিনেতা। ২০২১ সাল্ব্র ২০ ফেব্রুয়ারি প্রায় ছয় দশকের দীর্ঘ কর্মজীবনের ইতি জানিয়ে পৃথিবী থেকে বিদাল নেন বরেণ্য এই অভিনেতা।