‘রিয়াজ অযোগ্য ছিলেন, তাই বিমান বাহিনীর চাকরি হারিয়েছেন’

| আপডেট :  ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৫:১১ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৫:১১ অপরাহ্ণ

বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক রিয়াজ। তার পুরো নাম রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সিদ্দিক। তিনি একসময় কর্মরত ছিলেন বিমান বাহিনীতে। তারপর আকাশপথের যাত্রার ইতি টেনে চলে আসেন চলচ্চিত্র জগতে৷ তার বিমান বাহিনীর চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পেছনের গল্প জানিয়েছেন গণমাধ্যমের কাছে। তিনি জানান, টেলিভিশন নাটক দেখার অনুমতি না পাওয়ার কারণে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।

তবে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক পোস্টের মাধ্যমে ওয়াহিদ উন নবী নামের এক ব্যক্তি দাবি করেছেন, নাটক বা সিরিয়াল দেখার অপরাধে তাকে বরখাস্ত করা হয়নি। প্রশিক্ষণে ব্যর্থ হয়েই চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন। এদিকে সেই পোস্টের বিপরীতে রিয়াজ বলছেন, ওই দাবি অসত্য।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওয়াহিদ উন নবী নামের ওই ব্যক্তি নিজেকে রিয়াজের কোর্সমেট দাবি করে জানান, ‘রিয়াজ প্রকৃত সত্য আড়াল করেছেন। নাটক বা সিরিয়াল দেখার অপরাধে তাকে বরখাস্ত করা হয়নি। প্রশিক্ষণে ব্যর্থ হয়েই চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন।’ সেইসঙ্গে রিয়াজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করেন ওই ব্যক্তি।

এদিকে ওয়াহিদ উন নবীর দাবীকৃত অভিযোগ অসত্য বলে জানিয়েছেন রিয়াজ। সেইসঙ্গে তাকে স্বাধীনতার বিপক্ষের সদস্য হিসেবে দাবি করেন রিয়াজ। রিয়াজ জানান, ওয়াহিদ উন নবী’র চক্র তাকে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছিলো। ওয়াহিদ উন নবী সম্পর্কে রিয়াজ বলেন, ‘আমি ওনাকে চিনি। তিনি অবসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লিডার। আমার জুনিয়র। ওই কোর্সে তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন।’

এরপর রিয়াজ ওয়াহিদ উন নবীকে স্বাধীনতা বিরোধী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে বলেন, “বর্তমানে ওয়াহিদ যে সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছেন সেটা স্বাধীনতা বিরোধীপক্ষের একটি সংগঠন। মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোই তাদের একমাত্র কাজ। তার প্রতীকী নাম হচ্ছে ‘গুরু’। তিনি বিদেশে পালিয়ে আছেন। এর আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। এখনও তার নামে মামলা চলমান।”

এ সময় নিজেকে স্বাধীনতার পক্ষের উল্লেখ করে রিয়াজ বলেন, ‘স্বাধীনতা বিরোধীপক্ষের যে সাইবার গুজব সেল আছে ওয়াহিদ তার অন্যতম সদস্য। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে নিয়মিত অপপ্রচার, প্রপাগান্ডা ছড়ান তারা। আমি যেহেতু স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলি সে কারণে আমার বিরুদ্ধে তারা গুজব ছড়াচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি চিন্তিত না। কারণ তারা শুধু আমাকে নিয়ে না, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যারা আছেন তাদের সবাইকে নিয়েই অপপ্রচার চালান। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর নামেও অপপ্রচার চালান তারা।’

প্রাণনাশের হুমকি প্রসঙ্গে রিয়াজ বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই ওয়াহিদ উন নবীদের এই চক্র আমাকে নিয়ে অপপ্রচার চালায়, ট্রল করে। ২০১৮ সালের দিকে আমাকে হত্যার হুমকি দেয় তারা। সেসময় আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি অবগত করি।’

সবশেষে রিয়াজ বিমান বাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়ার প্রসঙ্গটি টেনে আনেন। ওয়াহিদ উন নবীর অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি জানান, বিষয়টি সত্য নয়। মূলত নাটক দেখার অপরাধেই বিমান বাহিনী থেকে সরে আসতে হয়েছিল তাকে।

গত বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমার পোস্টার উন্মোচন অনুষ্ঠানে নিজের অভিনেতা হওয়ার সেই গল্প শোনান রিয়াজ। এ সময় তিনি জানান, আসাদুজ্জামান নূর অভিনীত বিখ্যাত নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’- এর শেষ পর্বের কারণে তিনি এখন অভিনয় জগতে। তার অভিনয় জীবনের এই নাওটকের প্রভাবই মূখ্য বলে জানান রিয়াজ।

তখন রিয়াজ বলেন, ‘বিমানবাহিনীতে থাকার সময় সিলেট শমসেরনগর জঙ্গল সারভাইভাল কোর্স করছিলাম। সেই সময় ‘কোথাও কেউ নাই’ নাটকের শেষ পর্ব চলছিল। আমি সেই নাটকের শেষ পর্ব দেখার জন্য আমার সিনিয়রের কাছে আবেদন জানাই। কিন্তু তিনি সেটা গ্রহণ করেননি। একটা সময় তাকে অমান্য করে আমরা বাকের ভাইয়ের অভিনয় দেখার জন্য চলে যাই। সেই কারণে বিমানবাহিনী থেকে আমি আজ এখন এখানে।’

বাংলাদেশের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা রিয়াজের জন্ম ২৬ অক্টোবর ১৯৭২ সালে।  তিনি ১৯৯৫ সালে ‘বাংলার নায়ক’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ করেন।  ১৯৯৭ সালে মহাম্মদ হান্নান পরিচালিত প্রাণের চেয়ে প্রিয় চলচ্চিত্রে রিয়াজ অভিনয় করেন যা বসায়িকভাবে সফল হয় এবং একইসঙ্গে রিয়াজকে জনসাধারণের মাঝে জনপ্রিয় করে তোলে। চলচ্চিত্র জগতে তার অবদানের জন্য সরকার তাকে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতার পুরস্কারে ভূষিত করে।  পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলো যথাক্রমে- দুই দুয়ারী (২০০০), দারুচিনি দ্বীপ (২০০৭) এবং কি যাদু করিলা (২০০৮)।