যা চেয়েছি, তার চেয়ে অনেক বেশি পেয়েছি: আবুল হায়াত

| আপডেট :  ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:৫৫ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:৫৫ অপরাহ্ণ

বরেণ্য অভিনয়শিল্পী আবুল হায়াত ৭৯ বছরে পা রেখেছেন। নাট্যকার, পরিচালক হিসেবেও সফল তিনি। অসংখ্য টেলিভিশন নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনে কাজ করে দর্শকের মুঠো মুঠো ভালোবাসা কুড়িয়েছেন এই শিল্পী। গুণী এই অভিনেতা বহুবছর ধরে টিভি নাটকে, সিনেমা আর বিজ্ঞাপনে সফলতার সঙ্গে অভিনয় করে আসছেন। জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ রচিত প্রচুর নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। ‘মিসির আলি’ তার একটি স্মরণীয় চরিত্র। তার প্রথম নাটক ইডিপাস ১৯৬৯ সালে বের হয়েছিল। এর পর একে একে ৫০০ এরও অধিক নাটকে অভিনয় করেছেন।

জন্মদিনে আবুল হায়াত জানালেন তার জীবনে কোনো অপ্রাপ্তি নেই। যা চেয়েছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি পেয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘আমি আমার বাবার দ্বারা খুব প্রভাবিত। বাবা বলতেন, জীবনের চাওয়াগুলো ছোট ছোট রাখবে; তাহলে তোমার পাওয়াগুলো বড় বড় হবে। কারণ এতে করে তুমি যা চাইবে তারচেয়ে বেশি পাবে। বেশি বেশি চাওয়া থাকলে বেশি বেশি হতাশ হবে। আমি বাবার কথা শুনেছি। যে কারণে কোনো ক্ষেত্রে আমার জীবনে অপ্রাপ্তি নেই। কোনো দিনই আমি বেশি বেশি চাইনি। যা চেয়েছি আল্লাহ তারচেয়ে বেশি দিয়েছেন। এটি আমার জীবনের আদর্শ।’

তিনি একটা অপূর্ণ চাওয়ার ইঙ্গিত দয়ে বলেন, ‘কিছু কিছু চরিত্র আছে, যা করতে পারলে ভালো লাগতো। যেমন—শেক্সপিয়রের কিং লিয়র। আমার অনেক দিন ধরেই মনে হচ্ছে এই চরিত্রটি করতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু সেই সুযোগ এখনো পাইনি’

জন্মদিনে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত কন্যা বিপাশা হায়াতকে মিস করছেন বলে জানান এই অভিনেতা। তিনি বলেন, বিপাশা বিদেশ থেকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। আমরা ওকে খুব মিস করব।এছাড়া পরিবারের সবাইকে নিয়েই জন্মদিন উদযাপন করা হয়। সবাই মিলে কেক কাটি, আড্ডা দেই, এটাই আমাদের উদযাপন। তিনি বলেন, সাধারণত আগের রাতেই জন্মদিন উদযাপন হয়ে যায়। একই দিনে আমার নাতনি (নাতাশার কন্যা তৃষা) ও আমার জন্মদিন। নাতাশা দুটো কেক নিয়ে বাসায় এসেছে। আমরা দুজনে মিলে হইচই করে কেক কেটেছি, খেয়েছি। ওরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। এটি আমাদের প্রধান উদযাপন।

তিনি আরও বলেন, বন্ধু-বান্ধব, সাংবাদিক, সহকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষিরা ফোন করে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। আর আজকে চ্যানেল আইয়ের একটি অনুষ্ঠানে যাব। ওরা প্রতি বছরই ডাকে। সেখানে কিছুক্ষণ সময় কাটাব। আর রাতের বেলায় পরিবারের সবাই একত্রিত হবো।

জীবনের অর্থ কী, এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল হায়াৎ বলেন, আনন্দের মধ্য দিয়ে কাজ করাই জীবনের অর্থ। তিনি বলেন, কাজই প্রধান। আমি সারাটি জীবন শুধু কাজই করে গেছি। আমার ফুর্তি বলতেও ওইটুকুই। আমি যখন চাকরি করেছি, তখন পেশাগত জায়গায় শতভাগ সৎ ছিলাম। পাশাপাশি নাটক-সিনেমায় কাজ করেছি। একসময় চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরো সময়টা অভিনয়ে দিই। এখানেও আমি আমার শতভাগ দিয়েছি, কেউ কখনো বলতে পারবে না আমি কখনো কাজে ফাঁকি দিয়েছি। এটিই আমার জীবনের আনন্দ!

বর্ণাঢ্য জীবনে অসংখ্য কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ আবুল হায়াত পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একুশে পদক। ভারতের পশ্চিমববঙ্গে জন্ম হলেও দেশ বিভাগের পর চলে আসেন চট্টগ্রামে। বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা পাঠ চুকিয়ে প্রকৌশলী হিসেবে নিযুক্ত হন ওয়াসায়। ওয়াসার সেই ইঞ্জিনিয়ার অভিনয় দিয়ে হয়ে উঠেন টিভি নাটকের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘বাবা’। ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৭০ সালে আবুল হায়াতের সঙ্গে বিয়ে হয় মাহফুজা খাতুন শিরিনের। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ জন্ম নেয় তাদের প্রথম সন্তান বিপাশা হায়াত। এর ছয় বছর পর জন্ম নেয় নাতাশা।