২৫ বছরের জীবনে সালমান শাহ’র কিংবদন্তি হয়ে ওঠার গল্প

| আপডেট :  ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ

যুগের থেকেও অনেক এগিয়ে ছিলেন তিনি। তাঁর অভিনয় দক্ষতা যেমন অসাধারণ ছিল, তেমনি তাঁর স্টাইল ও ফ্যাশন সচেতনতাও ছিলো অনবদ্য৷ এ প্রজন্মের তারকাদের কাছেও প্রিয় একটি নাম। সবাই তাঁকে আজও খুঁজে বেড়ান। মাত্র ২৫ বছরের জীবন তাঁর। চার বছর কাজ করেছেন চলচ্চিত্রে। এই স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে রেখে গেছেন অসাধারণ সব চলচ্চিত্র। হয়ে উঠেছেন কিংবদন্তি।

তাঁর সময়ে দেশের চলচ্চিত্রে নতুন একটি ধারার সূচনা হয়েছিল বলা যায়। চলচ্চিত্রে তাঁর উপস্থিতি মানেই ছিল নিশ্চিত সাফল্য, প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের উপচে পড়া ভিড়। ব্যবসায়িক সাফল্য আর জনপ্রিয়তা—দুটিই সমানতালে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তিনি। অভিনয়ের স্বতন্ত্র ধারা আর ফ্যাশন সচেতনতা তাঁকে নিয়ে যায় ভিন্ন এক উচ্চতায়। হয়ে উঠেছিলেন নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের ক্ষণজন্মা নায়ক সালমান শাহ। পুরো নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। দেখতে দেখতে তাঁর মৃত্যুর দুই যুগ পেরিয়েছে। আজ তাঁর ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী।

১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের দারিয়াপাড়ায় নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন সালমান শাহ। তাঁর বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সালমান বড়। ছোট ভাই শাহরান চৌধুরী ইভান। বৃশ্চিক রাশির জাতক সালমানের বিনোদনজগতে যাত্রা শুরু হয় বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হিসেবে। তিনি ইস্পাহানি গোল্ডস্টার টি, জাগুয়ার কেডস, মিল্ক ভিটা, কোকাকোলা, ফানটা এবং জাগুয়ার কেডসের বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেন। ১৯৮৫ সালের দিকে হানিফ সংকেতের ‘কথার কথা’ নামের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন সালমান। তখন অবশ্য তিনি ইমন নামেই পরিচিত ছিলেন।

গায়ক হিসেবেও সালমানের পরিচিতি ছিল। ছোটবেলা থেকেই শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি দারুণ আগ্রহ ছিল তাঁর। বন্ধুমহলে সবাই তাঁকে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে চিনতেন। ১৯৮৬ সালে ছায়ানট থেকে পল্লিগীতিতে উত্তীর্ণও হয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৩ সালে চলচ্চিত্রে অভিনয়ে আসার আগেই মায়ের বান্ধবীর মেয়ে সামিরার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সালমান।

নব্বইয়ের দশকে বাংলা চলচ্চিত্র এক চরম দুঃসময় পার করছিল। ঠিক তখনই এ দেশের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে সালমান শাহর। ১৯৯৩ সালের মার্চ মাস। জনপ্রিয় হিন্দি ছবি ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ছবির কপিরাইট কিনে নেয় আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেড। বলিউডের জনপ্রিয় ছবিটির আদলে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবি নির্মাণের প্রস্তুতি নেন নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান। তখনকার জনপ্রিয় মডেল ও আনন্দ বিচিত্রা ফটোসুন্দরী মৌসুমীর সঙ্গে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন সালমান। প্রথম ছবি দিয়ে তিনি জয় করে নেন অগণিত ভক্ত-দর্শকের হৃদয়। রাতারাতি তিনি হয়ে ওঠেন ঢাকাই ছবির নির্ভরযোগ্য তারকা। সালমানের জনপ্রিয়তার পারদ এতটাই আকাশচুম্বী ছিল যে পরবর্তী সময়ে আর কোনো নায়কই সেই উচ্চতা অতিক্রম করতে পারেননি।

সালমানই একমাত্র নায়ক, সর্বমহলে যাঁর গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে এবং তরুণদের স্টাইল আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন। শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির দর্শকদের হলে গিয়ে ছবি দেখার অনভ্যাস দূর করেছিলেন সালমান শাহ। সালমানকে তাঁরা প্রিয় নায়ক হিসেবে বরণ করে নিয়েছিলেন। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিটি মুক্তির পর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রও যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়। এরপর শুধুই এগিয়ে চলা।

সালমানের ক্যারিয়ারে একের পর এক যোগ হতে থাকে সাফল্যের পালক। প্রথম ছবি থেকে শুরু করে শেষ ছবিটি পর্যন্ত সমানতালে নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিলেন সালমান শাহ। প্রথম ছবিতে মৌসুমীর সঙ্গে জুটি বাঁধলেও পরে শাবনূরের সঙ্গেও একটি সফল জুটি গড়ে ওঠে সালমানের। সালমান-শাবনূর জুটির একেকটি ছবি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সোনালি অতীত হয়ে আছে। এ ছাড়া সালমানের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাবনাজ, শাহনাজ, লিমা, শিল্পী, শ্যামা, সোনিয়া, বৃষ্টি, সাবরিনা ও কাঞ্চি।

মাত্র চার বছরের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার সালমানের। সময়টা অল্প হলেও একাই রাজত্ব করে গেছেন তিনি। এই চার বছরে উপহার দিয়েছেন ব্যবসাসফল ২৭টি ছবি। সালমান শাহ অভিনীত ছবিগুলো হচ্ছে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ (১৯৯৩), ‘তুমি আমার’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘সুজন সখী’, ‘বিক্ষোভ’, ‘স্নেহ’, ‘প্রেম যুদ্ধ’ (১৯৯৪), ‘কন্যাদান’, ‘দেনমোহর’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘আঞ্জুমান’, ‘মহামিলন’, ‘আশা ভালোবাসা’ (১৯৯৫), ‘বিচার হবে’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘প্রিয়জন’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘জীবন সংসার’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’ (১৯৯৬), ‘প্রেমপিয়াসী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘শুধু তুমি’, ‘আনন্দ অশ্রু’ ও ‘বুকের ভেতর আগুন’ (১৯৯৭)।

আজ সালমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা কোটি ভক্তরা শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন নানা আয়োজনে। কেউ লিখছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কেউ আবার মিলাদ মাহফিলেরও আয়োজন করছেন নিজ উদ্যোগে। এভাবেই ভক্তদের মাঝে অমর হয়ে থাকবেন এই চিরসবুজ নায়ক।