ড. মোমেন এখন কী করবেন?

| আপডেট :  ২২ আগস্ট ২০২২, ১০:১১ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২২ আগস্ট ২০২২, ১০:১১ পূর্বাহ্ণ

একের পর এক বক্তব্য দিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। তার বক্তব্য ঘিরে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারতের সমর্থন চাওয়ার বিষয়ে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা দলের বক্তব্য নয়- এমনটি দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন ড. মোমেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ নন। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা একান্তই তার ব্যক্তিগত।

বিরোধীরা বলছেন, ড. মোমেন সত্য ভাষণই দিয়েছেন। তিনি তার বক্তব্যের মাধ্যমে সরকারের অবস্থানই প্রকাশ করেছেন। তিনি এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে শপথ ভঙ্গ করেছেন। এ কারণে তিনি আর মন্ত্রী পদে থাকতে পারেন না। ঘরে-বাইরে তোপের মুখে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে এবার আইনি চ্যালেঞ্জও এসেছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে তাকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন একজন আইনজীবী।

নোটিশে বলেছেন, পদত্যাগ না করলে উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন। এমন পরিস্থিতিতে মন্ত্রী মোমেন আসলে কী করবেন- এটাই এখন বড় প্রশ্ন। যদিও তার ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, নিজের দুই বক্তব্যের বিষয়ে ইতিমধ্যে মন্ত্রী ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এরপর এ নিয়ে আর আলোচনার অবকাশ নেই। পদত্যাগ বা দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার মতো বিষয় বিবেচ্য নয়। দল থেকে এমন কোনো চিন্তা হচ্ছে তার কোনো ইঙ্গিতও আপাতত নেই।

পদত্যাগ করতে নোটিশ: সামপ্রতিক ‘বিতর্কিত’ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। গতকাল ডাক ও রেজিস্ট্রারযোগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এই নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ইরশাদ হোসেন রাশেদ। নোটিশ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে।

অন্যথায় আইনি প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে জানানো হয়। নোটিশে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে আপনি ভারত সরকারকে যে অনুরোধ করেছেন, এটা আপনি করতে পারেন না। কারণ সংবিধানে বলা হয়েছে, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। আপনি সংবিধানবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। আপনি মন্ত্রী পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।

কারও ব্যক্তিগত আলাপের দায়ভার সরকার নেবে না-তথ্যমন্ত্রী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন দলীয় সংসদ সদস্য হলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ নন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন দলের কেউ নন, ‘তার বক্তব্য দলের কোনো বক্তব্য নয়’- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমানের এমন মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. হাছান বলেন, তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য অবশ্যই, কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তো কেউ নন।

যেহেতু কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ নন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে বিদেশে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ তো নন, সেটা সঠিক বলেছেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য সেটা ঠিক আছে, কিন্তু যেহেতু আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ নন সুতরাং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে বিদেশে গিয়ে কিছু বলা, সে দায়িত্ব আওয়ামী লীগ কাউকে দেয়নি, ওনাকেও দেয়নি। কিন্তু একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সেটি দায়িত্ব কিনা, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তিনি যদি কোথাও গিয়ে কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপ করে আসেন বা গল্প করে আসেন, সেটির দায়ভার তার, দল বা সরকারের নয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেহেতু ভারতে গিয়ে কথা বলেছেন তিনি ব্যক্তি হিসেবে বলেননি, ক্যাবিনেটের সদস্য হিসেবে বলেছেন। সে দায়িত্ব কেন ক্যাবিনেট নিচ্ছে না-এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রীরা কোনো দেশে গেলে অফিসিয়াল এবং আন-অফিসিয়ালি বিভিন্ন জনের সঙ্গে দেখা করেন। আমরা যখন বিদেশে যাই, অফিসিয়াল পার্ট থাকে আবার আন-অফিসিয়াল বা ব্যক্তিগতভাবে অনেকের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়।

এখন তিনি ব্যক্তিগতভাবে কার সঙ্গে কি বলেছেন, সেটার দায়ভার সরকার কিংবা দলের নয়। তিনি অবশ্যই দলীয় সংসদ সদস্য। তবে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো নেতা নন যে দলের পক্ষ থেকে তিনি বিদেশে গিয়ে কথা বলবেন। সুত্রঃ মানবজমিন