পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের রেশ না কাটতেই এবার আ.লীগের টিকে থাকার কারণ জানালেন ভূমিমন্ত্রী

| আপডেট :  ২১ আগস্ট ২০২২, ০২:৫৯ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২১ আগস্ট ২০২২, ০২:৫৩ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের সব থেকে বড় রাজনৈতিক দল হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। দীর্ঘদিন ধরেই দলটি রয়েছে ক্ষমতার মসনদে। তবে দলের অনেক নেতাকর্মীর নানা ধরনের বেফাঁস মন্তব্যের কারনে সম্প্রতি দলটি নিয়ে হচ্ছে নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনা।

বিশেষ করে সরকার টিকিয়ে রাখতে ভারতের ভূমিকা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের পর থেকেই আলোচনা সমালোচনা যেন আরো বেশি হচ্ছে। আর সেই বক্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার আরেকটি মন্তব্যে করেছেন দেশের বর্তমান ভূমি মন্ত্রী। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ আওয়ামী লীগকে সব সময় গোপনে ও পরোক্ষভাবে সমর্থন দেয়ায় পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ভূমিমন্ত্রী বলেন,’পুলিশ যদি আওয়ামী লীগের প্রতি কঠিন, এগ্রেসিভ ও চরম আকার ধারণ করত, আওয়ামী লীগের টিকে থাকা কঠিন হতো।’ তিনি বলেন, ‘হয়তো টিকে থাকত, কিন্তু আরো বেশি কঠিন হতো।’

শনিবার (২০ আগস্ট) নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনে অনুষ্ঠিত এ সভায় ভূমিমন্ত্রী বলেন, ২১ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামের পর ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। কঠিন সময়ে পুলিশ প্রমাণ করেছে আওয়ামী লীগের প্রতি তাদের সবসময় দুর্বলতা ছিল। পুলিশকে সাধারণত সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হয়। তিনি তাই করেছেন, কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রতি পুলিশের দুর্বলতা সব সময়ই দেখেছি।

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি বা জাতীয় পার্টি যেই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের সব সময় বোঝাপড়া ছিল। সব সময় গোপনে ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করতে দেখা যায়।’

১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান ও এরশাদের শাসনামলে তার বাবা গ্রেফতার হন। এ সময় তিনি পুলিশের সহায়তা পেয়েছেন বলেও জানান।তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী অকৃতজ্ঞ নন। প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এসে পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে পুলিশ সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত। আগের কোনো সরকারই তাদের সঠিক মূল্যায়ন করেনি। তাদের পরিবারের দেখাশোনা করা হয়, তাদের চাহিদা, তাদের বেতন কাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না।

“আমাদের সরকার পুলিশকে সেই পর্যায়ে নিয়ে গেছে যেখানে ক্ষমতায় এসেছে, পুলিশকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। আমি মনে করি বিগত সরকার যারা ছিল, সব সরকারের চেয়ে আমাদের সরকারের আমলে আপনারা ভালো অবস্থানে আছেন। কেন থাকবেন না আমাদেরও দায়িত্ব আছে।’

ভূমি মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশকে আরো ওয়েল-ইকুইপড করা হয়েছে, হেলিকপ্টার দেওয়া হয়েছে। বিদেশে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, ব্যাংকও দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন অন্য উচ্চতায় যাচ্ছে। বাংলাদেশের সুখ, বাংলাদেশের অবস্থান কখনোই মেনে নেয়নি স্বাধীনতাবিরোধী মহল। তবুও মেনে নেবে না। কি বলা হবে তা দেখার দরকার নেই। জাতি দেখেছে তারা কিভাবে দেশ চালায়। তারা ব্যর্থ হয়েছে।’

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.শিরিন আখতার, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম সরওয়ার কামালসহ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

প্রসঙ্গত, গেল কয়েকদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে ‘আওয়ামীলীগ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে যায় যা করতে হয় তার সব কিছু ভারতকে করতে বলেছি’ এমন মন্তব্যে করেন দেশের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে মোমেন। আর সেই থেকেই সারা দেশে তার এই বক্তব্যে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা ধরনের আলোচনা আর সমালোচনা। বিশেষ করে সরকার দলের অনেকেই এখন তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।