সরকারি অনুদানের অর্ধেকও খরচ করেনি প্রযোজক

| আপডেট :  ১৮ আগস্ট ২০২২, ১১:৩৩ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৮ আগস্ট ২০২২, ১১:২৬ অপরাহ্ণ

৬০ লাখ টাকা সরকারি অনুদানের ছবি ‘আশীবার্দ’ করতে গিয়ে এর প্রযোজক জেনিফার ফেরদৌসের সঙ্গে মনোমানিল্য হয়েছে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির। ছবির নায়ক রোশানও এই প্রযোজকের আচরণে খুশি নন। ক’দিন আগে এই মাহি-রোশানকে নিয়ে নবীন এই প্রযোজক গণমাধ্যমে কটু মন্তব্য করেন। এতে করে ভীষণ চটেছেন এই দুই তারকা। তারা বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে নতুন প্রযোজক জেনিফারের ‘নয়-ছয়’ নিয়ে মুখ খুলেন তারা।

মাহি পরিষ্কার করে জানান, জেনিফার ফেরদৌস কোনো পেশাদার প্রযোজক নন। যেহেতু এটা সরকার ও জনগণের টাকার সিনেমা তাই জেনিফার ফেরদৌস এখানে লাইন প্রডিউসার। তাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল উনি বরং সেখান থেকে টাকা মেরেছেন।

মাহি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ছবি এবং সরকারি অনুদানের ছবি বলেই ‘আশীর্বাদ’ করতে রাজি হয়েছিলাম। আরেকটি কারণ হচ্ছে এর পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক। তার সঙ্গে আমার এতো ভালো বোঝাপড়া যে ১০ লাখের জায়গায় ৫ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নেই। আমি কিন্তু শুরু থেকে বলে আসছি জেনিফারকে দেখে আমি সিনেমাটি করিনি।

কিন্তু জেনিফার যে শুটিংয়ে এমন অপেশাদার আচরণ করবেন ভুলেও ভাবিনি। এতে করে আমি ঠকেছি। আমার সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। ছবি করতে গিয়ে যে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি গত ১০ বছরের ক্যারিয়ারে কোনো প্রযোজকের সঙ্গে এমন বাজে অভিজ্ঞতা হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে মাহিয়া মাহি জানান, তিনি কাউকে ছোট করে কথা বলছেন না। তার পরিবার মানুষকে অসম্মান করতে শেখায়নি।

তিনি বলেন, খুব স্বপ্ন নিয়ে অনুদানের সিনেমাটি করতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম কোনোভাবে যদি প্রধানমন্ত্রী কাজটি দেখেন! ৬০ লাখ টাকায় অনেক ভালো সিনেমা বানানো সম্ভব। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি, সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার মতো খরচ করেছেন প্রযোজক। বাকি টাকা প্রযোজক কোথায় খরচ করেছে সরকারের খতিয়ে দেয়া উচিত। তার জবাবদিহি করা উচিত। এই টাকা ওনার নয়। সরকারি অনুদান দেয়া হয় জনগণের ট্যাক্স থেকে।

‘”সরকার সংশ্লিষ্ট যারা আছে তাদের কাছে আবেদন জানাই বাকি টাকা জেনিফার ফেরদৌস কোথায় খরচ করেছেন নাকি শপিং করেছেন খুঁজে দেখার। প্রযোজক যখন সিনেমা রিলিজ দেয় তখন আগেই ভাবে কীভাবে বিনিয়োগ উঠবে। কিন্তু জেনিফারের কোনো মাথা ব্যথা নেই। নিজের প্রচারের জন্য বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছেন। আমাদের ছোট করছেন। এতে সিনেমাটি থেকে মানুষ মুখ ফেরাচ্ছে। আগামীতে যাদের সরকারি অনুদান দেয়া হবে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কি, আদৌ সিনেমা বানাতে পারে কিনা জেনে বুঝে তারপর অনুদান দেয়া উচিত।”

মাহিয়া মাহি বলেন, সবার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে সিনেমাটি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জেনিফার গোজামিল করে সিনেমার বাজেট কমিয়ে শেষ করেছে। শুটিংয়ে ক্যারেক্টারের সঙ্গে যায় না এমন অনেককে ডেকে ডেকে এনে শুটিং করিয়েছে। কারও পারিশ্রমিকও ঠিকমতো দেয়নি। তবে আমি আমারটা আগেই বুঝে নিয়েছি। জেনিফার সিনেমাটিকে নষ্ট করে দিচ্ছে। এই অধিকার তার নেই। কারণ এটা তার নিজের টাকার সিনেমা নয়।

সংবাদ সম্মেলনে রোশান বলেন, আমি মাত্র একলাখ টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছি। বলেছি আমার বাকি টাকা সিনেমাটির ভালোর জন্য খরচ করতে। কিন্তু জেনিফার তা করেনি। বরং নিজের মন মতো যা ইচ্ছে তাই করছেন। আমাদের না জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছেন যাতে তার ব্যক্তিগত প্রচার বাড়ে। আমাকে মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে নিজের কাটতি বাড়াচ্ছেন। যা আমি কোনোভাবে আশা করিনি। বাধ্য হয়েই আজ সবাইকে কথাগুলো জানাতে হলো।

রোশান-মাহি ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন ছবির পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত এই পরিচালক বলেন, প্রযোজক জেনিফার যেসব অভিযোগ তুলেছেন সবটাই অবান্তর। রোশান-মাহি যা বলেছেন একেবারেই ঠিক। তারা দুজনেই ভীষণ পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।