ফারুকী-তিশার পর চলচ্চিত্রের মুক্তি নিয়ে মুখ খুললেন জয়া আহসান

| আপডেট :  ১১ আগস্ট ২০২২, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১১ আগস্ট ২০২২, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

প্রায় সাড়ে তিন বছর সেন্সর বোর্ডের হিমাগারে পড়ে রয়েছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত আলোচিত সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’। আপিলের সাড়ে তিন বছরে এসেও কোনো সুরাহা হয়নি। ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি আসলে কোন কারণে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সেটা এখনও সবার অজানা।

২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি গোপনে শুটিং করার কারণে এই সিনেমাটি প্রথম থেকেই দর্শকের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। সে সময় অনেকেই বলেছেন, সিনেমাটি হলি আর্টিজান ঘটনার পটভূমিতে নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু পরিচালক ফারুকী সে সময় বলছেন, ছবিটি হলি আর্টিজান ঘটনা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু সে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে নয়। হলি আর্টিজান ঘটনার সঙ্গে ‘শনিবার বিকেল’-এর গল্পের কোনো মিল নেই। কিন্তু কেন হিমাগারে ছবিটি? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালে সিনেমাটি দুবার দেখার পর প্রদর্শনের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এমন সিদ্ধান্তের বিপরীতে আপিল করে সিনেমাটির অন্যতম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া।

সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন ফারুকী। এরপর এই নির্মাতার স্ত্রী এবং সিনেমাটির অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশাও বিষয়টি নিয়ে স্ট্যাটাস দেন। এরপরই সিনেমাটি মুক্তির দাবিতে সামাজিকমাধ্যমে ঝড় তুলেছেন নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী থেকে শুরু করে আরো অনেকে।

এরপর ‘শনিবার বিকেল’-এর বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সমালোচনা করলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান বলেছেন, আমরা চলচ্চিত্রের মুক্তি চাই, সব শিল্পের মুক্তি চাই। কারণ আমরা মানুষের মুক্তি চাই। মোস্তফা সরওয়ার ফারুকির চলচ্চিত্র ‘শনিবার বিকেল’ সেন্সর বোর্ড আটকে দেওয়ার ঘটনায় তিনি এ কথা বলেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘পৃথিবীর নানা দেশে যখন সেন্সর বোর্ড নামের বালাইটা উঠে যাচ্ছে, আমাদের দেশে সেটা তখন ফাঁসির রজ্জুর মতো চলচ্চিত্রের গলায় চেপে বসছে। এর সর্বশেষ শিকার এখন মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’।’

বুধবার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যায় এক স্ট্যাটাসে নিজের মন্তব্য তুলে ধরেছেন এই অভিনেত্রী।
জয়া আহসান লেখেন, পৃথিবীর নানা দেশে যখন সেন্সর বোর্ড নামের বালাইটা উঠে যাচ্ছে, আমাদের দেশে সেটা তখন ফাঁসির রজ্জুর মতো চলচ্চিত্রের গলায় চেপে বসছে। এর সর্বশেষ শিকার এখন মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’।

তিনি লেখেন, কোনো চলচ্চিত্রের কাহিনী কী হবে, তারও কি এখন প্রেসক্রিপশন নিয়ে আসতে হবে? চলচ্চিত্রের বিষয় আকাশের তলায় মাটির পৃথিবীর যেকোনো কিছু। চূড়ান্ত কল্পনা, নিরেট বাস্তব, বাস্তব থেকে অনুপ্রাণিত কল্পনা। ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাতে হোলি আর্টিজানের শোচনীয় ঘটনাটির ছায়া আছে বলে? আসলেই আছে কিনা আমার জানা নেই। যদি থাকেও, তাহলেই বা ছবিটা আটকে দেওয়ার যুক্তি কি?

এই অভিনেত্রী আরো লেখেন, হোলি আর্টিজান ঘটেনি? আমাদের মন থেকে ধুয়েমুছে গেছে? সত্যি বলতে কী, এই ঘটনা কখনোই আমাদের মন থেকে মুছে যেতে পারে না। মুছে যেতে দেওয়া যায়ও না। যে ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা মোটেও চাই না, আমাদের ছেলে-মেয়েদের সামনে থেকে যে পথ চিরকালের জন্য অবরুদ্ধ করে রাখতে চাই, হোলি আর্টিজানের ঘটনা তার জোরালো সতর্কঘণ্টা হিসেবে মন থেকে মনে বাজিয়ে যেতে হবে। চলচ্চিত্র হচ্ছে ঘুম ভাঙানোর ঘণ্টা এমনটাই মনে করেন জয়া। তিনি লেখেন, ঘণ্টা বাজিয়ে ঘুম থেকে আমাদের মনটাকে জাগিয়ে তোলা তো চলচ্চিত্রেরই একটা কাজ।

সবশেষ এই অভিনেত্রী তার স্ট্যাটাসে লেখেন, আমরা চলচ্চিত্রের মুক্তি চাই, সব শিল্পের মুক্তি চাই। কারণ আমরা মানুষের মুক্তি চাই।

এদিকে ‘শনিবার বিকেল’ প্রসঙ্গে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেছে। সেই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমায় কোনো দেশবিরোধী বা ধর্মবিরোধী কিছু নেই। বরং এই সিনেমাটিতে আমাদের ধর্ম ও আমাদের দেশের সংস্কৃতিকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

এখানে উল্লেখ করছে যে বিশ্বখ্যাত পত্রিকা দ্য হলিউড রিপোর্টার ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি দেখে লিখেছে, ‘এই সিনেমাটি বাংলাদেশে ব্যান করা হয়েছে, বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কায়, কিন্তু ছবিটি দেখে আমাদের উপলব্ধি হলো, সিনেমাটি বাংলাদেশের ইমেজ বৃদ্ধি করবে, কমাবে না। এ নিয়ে নিজের কষ্ট, হতাশা নিয়ে কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে লিখছেন ফারুকী। তার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকে।