আনারকলির অল্প বয়সী বয়ফ্রেন্ড কে সেই নাইজেরিয়ান?

| আপডেট :  ৪ আগস্ট ২০২২, ০৮:১১ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৪ আগস্ট ২০২২, ০৮:১১ পূর্বাহ্ণ

বাসায় নি’ষিদ্ধ মা’দক মারিজু’য়ানা রাখার অ’ভিযোগে জাকার্তা থেকে প্রত্যাহার হওয়া উপ-রাষ্ট্রদূত কাজী আনারকলির বয়ফ্রেন্ড নাইজেরিয়ান ব্যবসায়ী উইলিয়াম ইরোমিসেলি বেনেডিক্ট ওসিগবেমের প্রতি স’ন্দেহের অঙ্গু’লি রেখেই ত’দন্ত নেমেছে স’রকার। পররাষ্ট্র ম’ন্ত্রণালয় এবং আনারকলির ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি উইলিয়ামের সঙ্গে সম্পর্কের পর থেকেই পাল্টাতে থাকেন ওই মেধাবী কূটনীতিক। সংসারে ‘ভাঙা-গড়ার খেলা’ আর বিশ্বস্ত বন্ধুদের ‘ছলনা’য় ব্যক্তিজীবনে চ’রম হতাশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।

এমন সময় ‘নির্ভরতার প্রতীক’- হিসেবে তার জীবনে আসেন উইলিয়াম ওসিগবেমে। ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ৫ বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পরিচয়, সে থেকে ঘনিষ্ঠতা। আনারকলি তখন যুক্তরাষ্ট্রের লসএঞ্জে’লসে কর্মরত। সেখানে তার অন্য রিলেশন ছিল, এর মাঝেই ঢুকে পড়েন উইলিয়াম। ঘনিষ্ঠ হয়ে যান অল্পদিনে।

উইলিয়ামের সঙ্গে সম্পর্কের কারণেই আনারকলির কথিত গৃহকর্মী সাব্বির (৪০) পা’লিয়ে যান! আগে থেকেই তাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। প্রায় ৬ মাস র’হস্যজনক নি’খোঁজ থাকার পর সাব্বির নিজের স্টে পারমিট পেতে আনারকলির বি’রুদ্ধে সোচ্চার হন। সে সময় তাদের মধ্যে অ’নৈতিক লেনদেনেরও খবর রটে।

কিন্তু বি’ষয়টি ত’দন্ত হয়নি। বরং স্টেট ডিপার্টমেন্টের বেঁ’ধে দেয়া সময়ের মধ্যেই আনারকলিকে জাকার্তায় জরুরি পদায়ন করে স’রকার। তার বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগের বি’ষয়টি গণমাধ্যমে আসার কারণে তখন ইন্দোনেশিয়ার ভিসা পেতেও জটিলতায় পড়েন ওই কূটনীতিক। অবশ্য বিলম্বে হলেও তিনি ভিসা পান এবং যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগে বা’ধ্য হন। কিন্তু সেই ঘটনাটি আরও দু’টি ঘটনার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়ায় ত’দন্ত এবং জবাবদিহিতা থেকে রেহাই পেয়ে যান অনায়াশে।

আনারকলির জ্যেষ্ঠ সহকর্মীদের অনেকেই এখন সে সময় ত’দন্ত না হওয়া এবং আনারকলিকে ঢাকায় ফিরিয়ে না এনে জাকার্তা পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত যারা নিয়েছিলেন তাদের সমালোচনা করছেন। সেই সময়ে ঢাকায় থাকা বর্তমানে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিয়ে বিদেশে অবস্থানকারী একাধিক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক গত দু’দিনে মানবজমিনকে ফোন করে আনারকলির অধঃপতনের জন্য সেগুনবাগিচার সেই সময়ের প্রশাসনকে দায়ী করেন।

পূর্বের একটি বড় দেশে থাকা একজন রাষ্ট্রদূত বলেন, সেই সময়ে আনারকলিকে জাকার্তায় না পাঠিয়ে ঢাকায় ফিরিয়ে ঘটনাটি ত’দন্ত করলে হয়তো আজ তার এ অবস্থা হতো না! সে সময় যারা তার ঘটনাটিকে ছাইচা’পা নয় বরং রীতিমতো মাটিচা’পা দিয়েছিলেন তাদের বি’ষয়ে এখন ত’দন্ত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন ওই জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক।

উল্লেখ্য, আনারকলির মতো চৌকস অফিসারের আজকের এ অবস্থার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এমনকি গণমাধ্যমে লিখেও অনেক গুণীজন হতাশা ব্যক্ত করছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনও এ নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি তার বি’ষয়ে দ্রুত ত’দন্তের কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

আনারকলির বয়ফ্রেন্ড কে এই নাইজেরিয়ান?: পুরো নাম উইলিয়াম ইরোমিসেলি বেনেডিক্ট ওসিগবেমে। তিনি নাইজেরিয়ার নাগরিক। জন্ম ১৯৯৩ সালের ২৫শে মে। লাগোসে তার আদি নিবাস। তবে জাকার্তায়ও তার কিছু বি’ষয় সম্পত্তি রয়েছে বলে জানা গেছে।

উইলিয়াম নাইজেরিয়ার লাগোসের একটি রেজিস্টার্ড কোম্পানির পরিচালক। ইকোই লাগোসের ঠিকানায় নাইজেরিয়া স’রকারের নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ কর্পোরেট এফেয়ার্স কমিশনে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ৭ই মে ২০১৮ সালে। আনারকলির সঙ্গে পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতার সুবাদে উইলিয়াম চলে আসেন ইন্দোনেশিয়ায়। সেখানে তিনি তার কোম্পানির শাখা খোলেন।

পিটি বেনোস ইন্ডাস্ট্র্রিয়াল রিসোর্সেস নামের ওই কোম্পানির ব্যবসা এবং বিনিয়োগ দেখিয়ে তিনি ২০১৮ সালে জাকার্তায় স্টে পারমিট জোগাড় করেন। বর্তমানে তিনি এ-০৮৫৫৬৫১৭ নম্বরের পাসপোর্ট বহন করছেন। যার মেয়াদ আগামী ১১ই সেপ্টেম্বর শেষ হবে। মানবজমিন-এর হাতে আসা নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় উইলিয়াম ইন্দোনেশিয়ার স্টে পারমিট পেয়েছেন। যার কেআইটিএস নাম্বার- 2C11JE3769AT এবং এনআইকে নাম্বার- ৩১৭৪০২২৫০৫৯৩১০০২. নথি বলছে, জাকার্তা শহরের কোটা আদম এলাকার কেলসিমার বাটু কেমায়োরানের আইটিসিসি সেমপাকা মাস ব্লক-এ এলটি-৩ নম্বর-২২ এ তার কোম্পানি অফিসের বর্তমান অবস্থান।

তিনি প্রায়ই ব্যবসায়িক প্রয়োজন দেখিয়ে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওসসহ বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করতেন। ঢাকার এক অবসরপ্রাপ্ত গো’য়েন্দা কর্মকর্তার ধারণা, ট্যুরিস্ট ভিসায় তার এসব যাত্রা ব্যবসার আড়ালে অন্য কারবার হতে পারে। যা ট্রান্সন্যাশনাল ক্রা’ইম নিয়ে কাজ করা কোনো এজেন্সি ত’দন্ত করলে হয়তো সামনে আসবে।

ছুটি বাতিল, আজ ত’দন্ত কমিটির মুখোমুখি হবেন আনারকলি: সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য বলছে, জাকার্তা থেকে ফেরানোর পরপরই পররাষ্ট্র ক্যাডারের ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা কাজী আনারকলি বিদেশে যাওয়ার ছুটি নিয়েছিলেন। কিন্তু তার বি’ষয়টি ফাঁ’স হওয়ার পর পররাষ্ট্র ম’ন্ত্রণালয় তা বাতিল করেছে। আজ তাকে ত’দন্ত কমিটির সামনে হাজির হতে নোটিশ দেয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্র ম’ন্ত্রণালয়ের স’চিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামসের নেতৃত্বে ঘটনাটি ত’দন্ত হচ্ছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের আইনে কোন কূটনীতিকের বিদেশীকে বিয়ে করা বারণ। লিভ টুগেদারের তো প্রশ্নই আসে না। আইনের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, একজন কূটনীতিকের রাষ্ট্রীয় তথ্যের গো’পনীয়তা রক্ষা অন্যতম শর্ত। সূত্রঃ মানবজমিন