নাইজেরিয়ান বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে লিভ টুগেদার করতেন আনারকলি

| আপডেট :  ৩ আগস্ট ২০২২, ০৮:১৩ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৩ আগস্ট ২০২২, ০৮:১৩ পূর্বাহ্ণ

বাসায় নি’ষিদ্ধ মা’দক মারিজু’য়ানা রাখার অ’ভিযোগে নাইজেরিয়ান বন্ধুসহ আ’টক হয়েছিলেন বাংলাদেশি কূটনীতিক কাজী আনারকলি। প্রায় ২৪ ঘণ্টা তিনি ব’ন্দি ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার মা’দক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ডিটেনশন সেন্টারে। সেখানে তাকে জি’জ্ঞাসাবাদ করা হয়।

পরে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় বিশেষত ইন্দোনেশিয়া স’রকারের বদান্যতায় তিনি মুক্তি পান। দূ’তাবাসের জিম্মায় তাকে ছাড়া হলেও শর্ত দেয়া হয় যত দ্রুত সম্ভব ইন্দোনেশিয়ার সীমানা ত্যাগ করতে। বি’ষয়টি সেগুনবাগিচার নোটিশে আসে তাৎক্ষণিক। জাকার্তার বাংলাদেশ দূ’তাবাসের মাধ্যমেই চলে নেগোসিয়েশন।

সূত্র বলছে, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ইন্দোনেশিয়ার মা’দক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত ক’ঠোরতার সঙ্গে কাজী আনারকলির বাসায় অ’ভিযান চা’লায়, মা’দক উ’দ্ধার করে এবং নাইজেরিয়ান বন্ধুসহ তাকে তুলে নিয়ে যায়। সূত্র মতে, যুক্তরাষ্ট্রের লস এনজে’লস থেকে জোগাড় হওয়া ওই বিদেশি বন্ধুর সঙ্গেই জাকার্তার বাসা শেয়ার করতেন আনারকলি। সূত্র মতে, এ দু’জনের সম্পর্ক ছিল লিভ টুগেদারের। তবে তার বয়ফ্রেন্ড বা যার সঙ্গে বাসা শেয়ার করতেন তার নাম জানা সম্ভব হয়নি। এটা নিশ্চিত যে, তিনি নাইজেরিয়ার নাগরিক।

সূত্র বলছে মা’দক নিয়ন্ত্রণে ইন্দোনেশিয়ার স’রকার অত্যন্ত ক’ঠোর। তারা চিকিৎসা কর্মেও এখন পর্যন্ত মারিজু’য়ানার ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি। মা’দক রাখা বা সেবনে যাবজ্জীবন এমনকি মৃ’ত্যুদ’ণ্ডেরও বিধান রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার আইনে।

সূত্র জানায়, কূটনীতিকের বাসায় মা’দক রয়েছে এটা নিশ্চিত হওয়ার পরই ৫ই জুলাই তারা অ’ভিযান পরিচালনা করে। তবে তার আ’টক এবং মুক্তির পর দেশত্যাগে ততটা চা’প তৈরি করেনি। বরং সেই চা’প ছিল ঢাকার পক্ষ থেকে। কারণ তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের পূর্ব নির্ধারিত ইন্দোনেশিয়া সফরের প্রস্তুতি চলছিল।

এদিকে আনাকলির আ’টক বি’ষয়ে আনুষ্ঠানিক ত’দন্ত শুরু করেছে স’রকার। এ নিয়ে পররাষ্ট্র ম’ন্ত্রণালয়ের স’চিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামসকে প্রধান করে উচ্চ পর্যায়ের একটি ত’দন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ থেকে ত’দন্ত কমিটি আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করবে।

তবে স’রকারের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, কূটনৈতিক দুনিয়ায় বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তিকে চ’রমভাবে ক্ষুণ্ন্ন করা আনারকলির মারিজু’য়ানা কাণ্ডের অনানুষ্ঠানিক ত’দন্ত আগে থেকেই চলছে। ১৬ই জুলাই জাকার্তা মিশনের উপ-প্রধান কাজী আনারকলি ইন্দোনেশিয়া ছেড়ে আসার পরদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন দেশটি সফরে যান। সেই সময় মন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছিলেন স’চিব মাশফি বিনতে শামস।

তাকে বি’ষয়টির প্রাথমিক অনুসন্ধান করে আসতে বলা হয়েছিল। তিনি এ নিয়ে কিছু তথ্য সংগ্রহ করে এসেছেন। সেই সময়ে ইন্দোনেশিয়া স’রকারের কাছে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্টের অনুরোধ করা হয়েছে। ওই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে ঢাকা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আনারকলিকে ডাকা এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া দ্রুতই সম্পন্ন হবে। উল্লেখ্য, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনও এ বি’ষয়ে অবহিত জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, আনারকলিকে ফিরিয়ে আনা এবং তার বি’ষয়ে আনুষ্ঠানিক ত’দন্তের কাজটি নীরবেই করতে চেয়েছিল ম’ন্ত্রণালয়। অনেক আগেই তার ত’দন্তের ফাইল ইনিশিয়েট করা হয়েছে এবং তা অনুমোদন হয়ে আছে। কিন্তু চিঠি ইস্যু হয়নি। আজ চিঠি ইস্যু এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে নিশ্চিত করেছে সেগুনবাগিচা।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যা বলেছেনঃ এদিকে ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশ মিশনের উপ-প্রধান কাজী আনারকলির বাসায় মা’দক পাওয়া এবং তাকে প্রত্যাহারের ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক ও বিব্রতকর’ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র ম’ন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘আমরা এটা ইনভেস্টিগেট করছি। নিউজটা আমরা দেখেছি, নিউজটা শুধু দেখার বি’ষয় না, আমরা সেই কর্মকর্তার বি’ষয়ে কয়েক দিন আগ থেকেই জানি। আমরা ত’দন্ত করছি। এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, একজন কর্মকর্তা এটার মধ্যে ইনভলবড, এটাকে স্টোরি বলি বা ঘটনা বলি, বা ইনসিডেন্টই বলি, তিনি ইনভলবড। তিনি নিজে করেছেন, না তার বন্ধু করেছে- সেটা পরে ত’দন্তে নিশ্চিত হওয়ার আশা করে তিনি বলেন, পুরো জিনিসটা আমাদের দুর্ভাগ্যজনক এবং বিব্রতকর। ত’দন্তে তিনি দো’ষী সাব্যস্ত হলে যথোপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে এমন আশ্বাস দিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, পররাষ্ট্র ক্যাডারের যে হাই স্ট্যান্ডার্ড, এটার সঙ্গে আমরা কখনোই কমপ্রোমাইজ করবো না। ত’দন্তে যদি সে (আনারকলি) দো’ষী সাব্যস্ত হয়, অবশ্যই তার বি’রুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে, এটুকু বলতে পারি।

জাকার্তায় বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রদূত আনারকলি ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী পুরোপুরি কূটনৈতিক দায়মুক্তির আওতাধীন ছিলেন। বাংলাদেশকে না জানিয়ে তার বাসায় মা’দক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অ’ভিযান কীভাবে হলো? এমন প্রশ্ন ছিল প্রতিমন্ত্রীর কাছে। সাংবাদিকরা এ-ও জানতে চেয়েছিলেন এ নিয়ে বাংলাদেশ স’রকার ঢাকাস্থ ইন্দোনেশিয়ার দূ’তাবাস বা দেশটির পররাষ্ট্র ম’ন্ত্রণালয়ের কাছে প্রশ্ন তুলেছে কি-না? জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, এখানে তারা কোনো ভু’ল করেনি। কারণ সেই বাসায় আরেকজন বিদেশি নাগরিক ছিলেন বলে আমরা শুনেছি। সেক্ষেত্রে পুলিশ যেতেই পারে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা ধন্যবাদ জানাই ইন্দোনেশিয়া স’রকারকে তারা আমাদের এ নিয়ে সহযোগিতা করেছেন। আমাদের ডিপ্লোম্যাটকে ফিরিয়ে দিয়েছে। তিনি এখন আমাদের কাস্টডিতে আছেন, আমাদের নিয়ন্ত্রণই রয়েছেন। এটা আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে।’

উল্লেখ্য, কূটনৈতিক দায়িত্ব থেকে আনারকলিকে ফেরত আনার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে বাসার গৃহকর্মী নিখোঁজের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জে’লস থেকে ২০১৭ সালে তাকে ফেরত আনা হয়েছিল। পররাষ্ট্র ক্যাডারের ২০ ব্যাচের কর্মকর্তা আনারকলি ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জে’লসে বাংলাদেশের ডেপুটি কনসাল জেনারেল ছিলেন। মা’র্কিন স’রকারের বেঁ’ধে দেয়া সময়ের মধ্যে তাকে জাকার্তায় জরুরি পদায়ন করা হয়েছিল এবং ইন্দোনেশিয়ার ভিসা পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে বা’ধ্য হয়েছিলেন। সূত্রঃ মানব জমিন