ফাঁ’সি হলেও আমার নাম পরিবর্তন করব না : হিরো আলম

| আপডেট :  ৩০ জুলাই ২০২২, ০৮:০৯ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৩০ জুলাই ২০২২, ০৮:০৯ অপরাহ্ণ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত-সমালোচিত আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমকে সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গো’য়েন্দা পুলিশের (ডি’বি) কার্যালয়ে তুলে নেওয়ার অ’ভিযোগ উঠেছে। তাঁর সঙ্গে অশোভন আচরণ এমনকি চুলের মুঠো টেনে নাম পরিবর্তন করতেও বলা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে এনটিভি অনলাইনের কাছে এসব অ’ভিযোগ করেছেন হিরো আলম নিজেই।

আজ দুপুরে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে বিভিন্ন বি’ষয়ে বিস্তারিত কথা বলেন হিরো আলম। কথা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে ঘটা অনেক ঘটনা জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে ভবি’ষ্যতে তাঁর সঙ্গে আরও কিছু ঘটার আ’শঙ্কার কথাও প্রকাশ করেন হিরো আলম।

গত ২৭ জুলাই হিরো আলমের সঙ্গে কথা বলে গো’য়েন্দা পুলিশ। হিরো আলমের দাবি, যখন তাঁকে ডি’বি কার্যালয়ে নেওয়া হয়, তখন ডি’বি থেকে পাঁচটি অ’ভিযোগের কথা জানানো হয়েছিল। অ’ভিযোগুলো হলো, বি”কৃত করে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া, পুলিশ কনস্টেবলের পোশাক পরে ডিআইজি-এসপির অভিনয় করা ও অন্যকে ব্যঙ্গ করে গান গাওয়া। এরপর ২৭ জুলাই দুপুরে পুলিশের গো’য়েন্দা বিভাগের প্রধান হারুন অর রশীদ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, ‘হিরো আলমের বি’রুদ্ধে ডিসি সাইবারে অনেকগুলো অ’ভিযোগ জমা হয়েছিল। সেগুলোর বি’ষয়ে আজ বুধবার আমরা তাঁকে সকালে ডেকে জি’জ্ঞাসাবাদ করেছি।’

এ প্রসঙ্গে হিরো আলম বললেন, ‘ডি’বি আমাকে ডাকলেই পারত। আমি চলে যেতাম। আমাকে তুলে নেওয়া লাগত না। আমার সঙ্গে খা’রাপ আচরণ করা হয়েছে। তুই-তুকারি করা হয়েছে। আমি তো চোর-ডাকাত বা স’ন্ত্রাসী না।’

ডি’বি কার্যালয়ে নিয়ে হিরো আলমের চুলের মুঠ ধরে পুলিশ তাঁর নাম পরিবর্তন করতে বলেছে অ’ভিযোগ করে হিরো আলম বলেন, ‘চুলের মুঠ ধরে আমারে কচ্চে, আয়নায় তোর চেহারা কোনোদিন দেখছিলি? হিরো মানে কি, বুঝিস? বল, হিরো মানে কি? সিনেমা দেখিস না? গান দেখিস না? আজকে থেকে তোর যেসব জায়গায় ‘হিরো আলম’ নাম আছে, সব জায়গা থেকে চেঞ্জ করবি। এই নাম তুই কই পাইলি?’

জবাবে আপনি কিছু বলেননি, এমন প্রশ্নে হিরো আলম বলেন, ‘আমাকে তো আগেই বলে দেওয়া হয়েছে, যা প্রশ্ন করব, তার বাইরে একটাও কথা বলবি না। কথা বললে বি’পদ হবে। সেখানে তো কথা বলার সুযোগ ছিল না। মনে হলো, আমি কথা বলার অধিকার রাখি না।’

নাম পরিবর্তন করবেন কী না জিজ্ঞেস করলে হিরো আলম বলেন, ‘আমাকে যদি বলা হয়, নাম পরিবর্তন না করলে তোর ফাঁ’সি হবে, আমি তাও পরিবর্তন করব না।’

আপনি অ’ভিযোগ করছেন, আপনাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে? জবাবে হিরো আলম বলেন, ‘আমি রামপুরা মহানগর প্রজেক্টে থাকি। তখন ঘুমিয়ে ছিলাম। অনুমানিক সকাল ৬টা বাজে। দরজায় শব্দ হয়। আমার সঙ্গে আরেকজন ছেলে ছিল। তখন আমি তাকে দরজা খুলতে বললাম। দরজা খোলা মাত্র ধামধাম করে ডি’বির ৫ থেকে ৬ জন সদস্য ঘরের মধ্যে ঢুকল। তাঁদের মধ্যে নাজমুল হক নামের একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে মোট ৮ জন আমার কাছে আসেন। পরে তারা আমার রুমে সার্চ করেন।’

‘তারপর আমার পিসি (কম্পিউটার) খুলতে বলে। খুললাম। এরপর জানতে চাওয়া হয় আমার হার্ডডিস্ক কই। আমি বললাম, ফুটেজ আনতে পাঠাইছি। পুলিশ আমার বাসায় সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট ছিল। আমি তাঁদের পরিচয় জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, তাঁরা পরিচয় দেয়নি। তাঁরা তো ডাকাত বা স’ন্ত্রাসীও হতে পারত। তারপর আমাকে গাড়িতে করে ডি’বি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।’

হিরো আলম বলেন, ‘ডি’বিতে নেওয়ার পর তাঁরা আমার সঙ্গে খা’রাপ আচরণ শুরু করে। আমার সঙ্গে কথা বলার সময় ৮ জন উপস্থিত ছিল। সব সময় তুই-তুকারি করে কথা বলেছে। খা’রাপ শব্দ ব্যবহার করেছে। কিন্তু, রাষ্ট্রের এমন কোনো আইন নেই যেখানে বলা আছে, পুলিশ তুই-তুকারি করে কথা বলবে।’

‘তারপর আমাকে বলা হলো, তোর নামে তো অনেক অ’ভিযোগ পড়ছে। আমি জানতে চাইলাম কি কি অ’ভিযোগ। একইসঙ্গে অ’ভিযোগকারীর নামও জানতে চাইলাম। নতুবা আপনি (পুলিশ) হুটহাট জিজ্ঞেস করলে কি উত্তর দিব আমি? তখন পুলিশ আমাকে বলল, তোকে যে প্রশ্ন করব, সেটার উত্তর দিবি। এক লাইন বেশি কথা বলবি না। বেশি উত্তর দিবি না। বেশি কথা বললে, তোর স’মস্যা হবে।’

হিরো আলম বলেন, ‘আমি বললাম, ঠিক আছে বলেন। আপনাদের কথাই শুনি। তখন আমাকে বললো, তোর নামে রিপোর্ট করছে মডেল বিপাশা ও মডেল মৌ। তোর নামে অ’ভিযোগ করছে, ডাক্তার মুরাদ হাসান। তোর নামে অ’ভিযোগ আছে, তুই পুলিশের পোশাক পরে অভিনয় করছিস। তুই রবীন্দ্রসংগীত কেন গেয়েছিস? মোট পাঁচটি অ’ভিযোগ পুলিশ আমার কাছে বলেছে।’

‘‘কী কী অ’ভিযোগ জানতে চাইলে পুলিশ বললো, মৌ আর বিপাশার যখন গ্যানজ্যাম হয়, তখন আমি ‘রাতের রানী’ শিরোনামে একটি গান করেছিলাম। এ গান গাওয়াতে আমি না কি বিপাশা আর মৌ-এর সম্মানহানি করছি। কিন্তু, আপনি ইউটিউবে সার্চ দেন, ওঁদের নামে ব্যঙ্গ করে অনেকে গান করছে। অনেকে গা’লিগা’লাজ করে গান করছে। তাঁদের কিন্তু ধরল না পুলিশ। খালি (শুধু), আমাকে কেন ধরল? ডাক্তার মুরাদ হাসানের নামে অনেকে ব্যঙ্গ করে গান গাইছে। তাঁদের দোষ ধরল না।’’

হিরো আলম বলেন, ‘আজ থেকে চার বছর আগে আমি পুলিশের পোশাক পরে একটি শুটিং করছিলাম। আমি ওটার পরিচালক ছিলাম না। আমি জাস্ট অভিনয় করছি। আমি পুলিশের পোশাকের বি’ষয়ে অতোকিছু বুঝতামও না। আমার বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগ হলো, কনস্টেবলের পোশাক পরে আমি কেন পুলিশের অন্য চরিত্রে অভিনয় করলাম। এটার জন্য কিন্তু আমি দায়ী হতে পারি না। দায়ী থাকলে পরিচালক থাকতে পারে।’

ঘটনার দিন হারুন অর রশীদ বলেছিলেন, ‘হিরো আলম মুচলেকা দিয়েছেন যে, জীবনেও আর নজরুলগীতি ও রবীন্দ্রসংগীত বি”কৃত করে গাইবেন না। এ ছাড়া এ ধরনের ভিডিও বানাবেন না।’ পরে ডিএমপির জনসংযোগ শাখা থেকে কয়েকটি ভিডিও পাঠানো হয় সাংবাদিকদের কাছে। ভিডিওতে হিরো আলমকে ভু’ল স্বীকার করে বিভিন্ন বক্তব্য দিতে শোনা গেছে।

এ প্রসঙ্গে হিরো আলম বলেন, ‘আমি মুচলেকা ও ভিডিওতে যা বলেছি, তার প্রত্যেকটি কথা পুলিশের শিখিয়ে দেওয়া। তাঁরা আগেই আমাকে বলেছিল, তারা যা বলবে; তাই বলতে। এ কথাগুলো বলার কারণে আমার কি হবে, আমি নিজেও জানি না। আমাকে আবার ডি’বিতে নিয়ে যেতে পারে, ট’র্চারও করতে পারে। তবে, আমি যা সত্য, তা বলেই যাব। আমি মনে করি, আমার সঙ্গে ১০০ ভাগ অন্যায় করছে পুলিশ।’

‘জি’জ্ঞাসাবাদ করার সময় ডি’বি পুলিশ আমাকে বলে, তুই যে অ’পরাধগুলো করেছিস, সেগুলোর জন্য এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে। ৫ থেকে ৭ বছরের জে’ল হতে পারে। তখন আমাকে বলে, তুই এগুলো করবি, না কি করবি বল? আমি তখন বা’ধ্য হয়ে বললাম, ঠিক আছে আমি এ ধরনের (রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলগীতি) কাজ আর করব না। তখন আমাকে বলা হলো, তোর এ কথার ভিত্তি কি? তুই তাহলে মুচলেকায় সই দে। তখন আমি সই করেছি।

আমি কোনোরকম আপস করিনি। অ’ত্যাচার ও নি’র্যাতনের কারণে বা’ধ্য হয়ে আমি এ কথা বলেছি, কাজগুলো করেছি। তবে, আমি কিন্তু জীবনে গান করব না, সে কথা বলিনি। আমি বলেছি, রবীন্দ্রসংগীত বা নজরুলগীতি, এ ধরনের কোনো গান করব না এবং কারও বি’রুদ্ধে গান করব না।’

হিরো আলম আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি জানতে চাই, পুলিশ কি চায় ? যারা আমার পেছনে লাগছে, তারা কি চায় ? আমি দেশে থাকব, না কি দেশ ছেড়ে চলে যাব?’কথা শেষে হিরো আলমের কাছে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনি এখন কেমন আছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মা’নসিকভাবে টেনশনে আছি।