দুই মেয়েকে বিক্রি করে বিদ্যুৎ বিল ও ঋণ পরিশোধ করলেন বাবা

| আপডেট :  ২০ জুলাই ২০২২, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২০ জুলাই ২০২২, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলা একাত্তর ডেস্কঃ দুই মেয়েকে বিক্রি করে বিদ্যুৎ বিল-ঋণ পরিশোধ করলেন বাবা। এমন ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে। এনিয়ে দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যম বুধবার (২০ জুলাই) দেশ রুপান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এক প্রতিবেদন । প্রতিবেদনটি লিখেছেন মেহেদী হাছান পাপ্পু।

প্রতিবেদন অনুসারে, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে নিজের দুই শিশু কন্যাসন্তানকে মায়ের অগোচরে বিক্রি করে দিয়েছেন এক বাবা। বছরখানেক আগে প্রথমে দেড় বছর বয়সী ছোট সন্তান রিয়াকে বিক্রি করে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেন সাত নম্বর বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের নাটেহরা গ্রামের বাসিন্দা এমরান হোসেন। এর চার-পাঁচ মাসের মাথায় ঋণ পরিশোধের জন্য তিন বছর বয়সী সন্তান ইভাকে বিক্রি করে দেন তিনি। আর ওই সময় শিশু দুজনের মা জান্নাত বেগম চট্টগ্রামের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন।

এতে আরও বলা হয়, বিক্রি করে দেওয়ার পর দুই সন্তানের সব ছবি এবং তাদের জন্মগ্রহণের প্রমাণসংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্রও নষ্ট করে ফেলেন পেশায় বেকারি পণ্যের ব্যবসায়ী এমরান হোসেন। এদিকে দুই শিশু সন্তানকে হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় তাদের মা জান্নাত বেগম। চট্টগ্রামের কর্মস্থল থেকে ফিরে নিজের সন্তানদের বিক্রি করে দেওয়ার তথ্য জানতে পারেন তিনি। তারপর থেকে সন্তানদের ফিরিয়ে আনার জন্য স্বামীকে চাপ দিয়ে এলেও গত এক বছর ধরে বিভিন্ন অজুহাতে সময় পার করছেন এমরান হোসেন। এমন পরিস্থিতিতে সন্তানদের ফিরে পেতে প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেছেন জান্নাত বেগম।

জানা গেছে, দুই সন্তানকে ৪০ হাজার টাকা করে মোট ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন নাটেহরা গ্রামের মিজি বাড়ির এমরান হোসেন। তার দুই স্ত্রী। দ্বিতীয় স্ত্রীকে চট্টগ্রামের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরির জন্য পাঠিয়ে তার গর্ভে জন্ম নেওয়া দুই সন্তানকে কৌশলে বিক্রি করে দেন এমরান।

সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় জান্নাত বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে গতকাল মঙ্গলবার তার নিজ বাড়িতে বসে বলেন, ‘আমার স্বামী এমরান হোসেন আমাকে চট্টগ্রামে পাঠানোর পর তার প্রথম স্ত্রী ইয়াছমিনের কাছে আমার দুই মেয়েকে নিয়ে রাখে। সেখান থেকে পরে কৌশলে মেয়েদের বিক্রি করে দেয়। সন্তানদের ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ দিলে গত এক বছর ধরে বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে সন্তানদের ফিরে আনবে বলে সময় পার করে আসছে আমার স্বামী। আমি আমার সন্তানদের আমার কোলে ফেরত চাই।’ সন্তানদের ফিরে পেতে স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সহায়তাও কামনা করেন তিনি।

এই প্রতিবেদক জানতে চাইলে সন্তানদের বিক্রি করে দেওয়ার কথা অকপটে স্বীকারও করেন এমরান হোসেন। তিনি জানান, ছোট মেয়ে রিয়াকে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার কলাবাগান মহল্লার এক পরিবারে বিক্রি করেছেন। আর এতে তাকে সহযোগিতা করেন প্রত্যাপপুরের পল্লী চিকিৎসক আমেনা বেগম। আর বড় মেয়ে ইভাকে বিক্রি করেন চাঁদপুর সদর উপজেলার মহামায়া পাকিস্তান বাজার এলাকার একটি পরিবারে। এ কাজে সহযোগিতা করেন নাটেহরা গ্রামের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম। তার বোনের আত্মীয়রা ওই সন্তানকে নিয়েছেন।

দুই শিশুসন্তানকে বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে এমরান হোসেনের প্রথম স্ত্রী ইয়াছমিন জানান, তার স্বামী দুই কন্যাসন্তানকে বিক্রি করেছেন জানেন, কিন্তু কোথায় বিক্রি করা হয়েছে তা জানেন না।

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার ওসি মো. জোবাইর সৈয়দ। তিনিবলেন, ‘আমাদের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ নিয়ে কেউ আসেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম। তিনি গতকাল বিকেলে বলেন, ‘সন্তান বিক্রির ঘটনাটি আমি অবগত ছিলাম না। কোনো পক্ষই আমাদের কিছু জানায়নি। যেহেতু এখন জানতে পেরেছি, খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’