ঘরের পেছনে বাবা-মা শায়িত, কবরের সামনে দাঁড়িয়ে নির্বাক অবুঝ ভাই-বোন

| আপডেট :  ১৭ জুলাই ২০২২, ০১:২৫ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৭ জুলাই ২০২২, ০১:২৫ অপরাহ্ণ

ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচা’পায় একই পরিবারের তিনজন (স্বামী, অ’ন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও মেয়ে) নি’হতের ঘটনায় শো’কে স্তব্ধ পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসী। শনিবার (১৬ জুলাই) রাতে জানাজা শেষে উপজে’লার রায়মণি এলাকার নিজ বাড়িতে তাদের দাফন করা হয়।

রোববার সকালে রায়মণি ফকির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বসতঘরের পেছনে একসঙ্গে নতুন তিনটি কবর। যেখানে শায়িত আছেন দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী রত্না ও মেয়ে সানজিদা। একসঙ্গে তিনজনকে হা’রিয়ে তাদের কবরের পাশে বসে অনবরত বিলাপ করছিলেন মা সুফিয়া আক্তার। আর বাকরুদ্ধ হয়ে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বাবা-মা-বোনকে খুঁজছিলেন জাহাঙ্গীর-রত্না দম্পতির ১০ বছর বয়সী মেয়ে জান্নাত ও সাত বছর বয়সী ছেলে এবাদত।

অথচ নতুন অতিথির আগমনে বাড়িতে থাকার কথা ছিল আনন্দ-উচ্ছ্বাস। একটি দু’র্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে সবকিছু, আনন্দকে পরিণত করেছে বি’ষাদে। এ ঘটনায় শো’কে স্তব্ধ শুধু রায়মণি গ্রামই নয়, শো’কের ছায়া নেমেছে পুরো ত্রিশালে।

নি’হত জাহাঙ্গীরের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু ও মা সুফিয়া আক্তার দুইজনই শা’রীরিক প্রতিব’ন্ধী। তারা জানান, জায়গা না থাকায় বসতঘরের পেছনে বানিয়েছেন কবর। থাকার ঘরটিও ভাঙা টিন আর মাটির তৈরি। দরিদ্র পরিবারে মোস্তাফিজই ছিল উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকেসহ তিনজনকে একসঙ্গে হা’রিয়ে আরও অ’সহায় হয়ে পড়েছেন তারা। এখন ন’বজাতকসহ তিন স’ন্তানের ভবি’ষ্যতও অনেকটা অনিশ্চয়তার মুখে। এদিকে শো’কস্তব্ধ বাড়িতে আলোচনায় এখন অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া ন’বজাতক। মৃ’ত মায়ের পেট থেকে জন্ম নেওয়া শি’শুকন্যাকে এক নজর দেখতে ব্যাকুল সবাই।

ন’বজাতকের বড় বোন জান্নাত আক্তার (১০) বলে, মোবাইলে আমার বোনের ছবি দেখেছি। আমরা তার জন্য অপেক্ষা করছি। সে বাড়িতে আসলে আমি তাকে খুব আদর করব। দাদা-দাদি ও আমি মিলে তাকে লালন পালন করব। কথা বলতে বলতেই তার চোখ বেয়ে পানি পড়ছিল।

প্রসঙ্গত, শনিবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ত্রিশালের কোর্টভবন এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাকচা’পায় প্রা’ণ হা’রান অ’ন্তঃসত্ত্বা রত্না বেগম (৩২), তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (৪০) এবং তাদের ছয় বছরের মেয়ে সানজিদা। এ সময় অলৌকিকভাবে মায়ের গর্ভ ফে’টে ভূমিষ্ঠ হয় ফুটফুটে এক ন’বজাতক। ভূমিষ্ঠ হয়ে রাস্তায় পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যায় পুলিশ ও আশপাশের লোকজন। পরে ন’বজাতকটিকে উ’দ্ধার করে নেওয়া হয় উপজে’লা স্বা’স্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে নেওয়ার পরই জানা যায়, জীবিত আছে ন’বজাতকটি।

সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উন্নত চিকিৎসার জন্য ন’বজাতকটিকে ময়মনসিংহ সদরের সিবিএমসি হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে এক্সরে রিপোর্টে জানা যায়, তার ডান হাতের দুটি হাড় ভে’ঙে গেছে। বর্তমানে শি’শু বিশেষজ্ঞ ডা. কামরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে নগরীর লাবীব হাসপাতালে শি’শুটি চিকিৎসাধীন রয়েছে।

শি’শুটি বি’পদমুক্ত রয়েছে জানিয়ে ডা. মোহাম্ম’দ কামরুজ্জামান বলেন, শি’শুটির সামগ্রিক অবস্থা আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। সে ভালো আছে এবং শঙ্কামুক্ত। যেহেতু তার মা নেই, তাই তাকে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। আশা করছি, তার কোনো ধরনের স’মস্যা হবে না।

এদিকে শি’শুটির চিকিৎসা খরচ ও ভরণপোষণসহ সব দায়িত্ব পালনের কথা জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ত্রিশালের এক ব্যক্তি। এছাড়া তার পাশে থাকার কথা বলেছেন ময়মনসিংহের জে’লা প্রশাসক মোহাম্ম’দ এনামুল হক।