আপনারা মাঠে খেলবেন আর আমরা রেফারি : সিইসি

| আপডেট :  ১৭ জুলাই ২০২২, ১২:৪৭ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৭ জুলাই ২০২২, ১২:৪৭ অপরাহ্ণ

নির্বাচনের সময় কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায় তাহলে প্রতিপক্ষকে রাইফেল নিয়ে দাঁড়াতে বললেন প্রধান নির্বাচন নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। রোববার সকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে জাতীয়তাবা’দী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে সংলাপে এমন কথা বলেন তিনি।

সিইসি বলেন, আমরা সহিং’সতা বন্ধ করতে পারবো না। রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ খেলোয়াড় তো আপনারা। আপনারা মাঠে খেলবেন আর আমরা রেফারি। আমাদের অনেক ক্ষমতা আছে। ক্ষমতা প্রয়োগ করবো। নির্বাচনকে অংশগ্রহণ করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। দলগুলোর সহায়তা ছাড়া আমরা ব্যর্থ হয়ে যাবো। আপনাদের সমন্বিত প্রয়াস থাকবে।

কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়িয় তাহলে আপনাকে রাইফেল বা তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে। আপনি যদি দৌড় দেন, তাহলে আমি কি করবো? কাজেই আমরা সাহায্য করবো। পুলিশের উপর, স’রকারের উপর আমাদের কমান্ড থাকবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় যেটি থাকবে সেটি কিন্তু স’রকার। আমি বারবার বলেছি, রাজনৈতিক দল আর স’রকার এক নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। কিন্তু যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী তখন তিনি স’রকার প্রধান আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নয়। এটি বুঝতে হবে। আমরা স’রকারের সাহায্য চাইবো। স’রকার যদি সহায়তা না করে, তাহলে নির্বাচনের পরিণতি খুবই ভ’য়াবহ হতে পারে।

এর আগে স্বাগত বক্তব্যে সিইসি বলেন, ইতোপূর্বে আমরা বহুবার বলেছি সকল রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিশেষ করে প্রধানতম দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেওয়া খুবই প্রয়োজন। কোনো দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অবশ্যই বা’ধ্য করতে পারবো না। তবে সকল দলকে কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করতে আমরা বারবার আহ্বান করে যাবো। সে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আজকেও আপনাদের মাধ্যমে সকল দলকে আহ্বান জানাচ্ছি। নির্বাচনে প্রতিদ্ব’ন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা না থাকলে জনমতের সঠিক প্রতিফলন হয় না। পক্ষ-প্রতিপক্ষের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্ব’ন্দ্বিতা মাঠ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সম্ভাব্য অনিয়ম, কারচুপি, দু’র্নীতি, অর্থ শক্তির বৈভব ও পেশি শক্তির প্রয়োগ ও প্রভাব বহুলাংশে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। নির্বাচন কমিশন সকলের অংশগ্রহণ, সহযোগিতা ও সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করতে চায়। অন্যথায় অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমাদের প্রয়াস যতই আন্তরিক হোক, ব্য’র্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। সেটা কাম্য নয়।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। একটি মাত্র দল ৩০০টি আসনে জয়ী হয়ে স’রকার গঠন করতে সাংবিধানিকভাবে কোনো বা’ধা নেই। তবে ইতিহাস বলে সেক্ষেত্রে অচিরেই গণতন্ত্রের অপমৃ’ত্যু হবে। স্বৈরতন্ত্র মাথা জাগিয়ে তুলবে। গণতন্ত্রের আরাধ্য পুনরুদ্ধার হয়ে পড়বে দুরূহ।

সিইসি বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সং’সদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নানাবিধ আশা, হতাশা ও তর্ক-বিতর্ক চলছে। বিতর্কগুলো নিরসন হওয়া প্রয়োজন। ইতিপূর্বে কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা কয়েটি উন্মুক্ত সংলাপ করেছি। এতে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে। কমিশনের সক্ষমতা ও সাধ্যের সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা নির্ধিদায় তা স্বীকার করে নিয়ে কারণগুলো বারবার ব্যাখ্যা করে বলেছি।

ইভিএম নিয়ে পাঁচ-সাতটি কর্মশালা করার পর আমরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এবং বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে উন্মুক্ত সভা করেছি। কেউ কোনো ত্রুটি দেখাতে পারেনি। ইভিএম এবং ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচনে তুলনামূলক সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আরপিও ২৬ অনুযায়ী, কারচুপির বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো প্রতিপালন করা হলে কারচুপি প্রতিরোধ করা সম্ভব বলেও জানান সিইসি।

এতো কিছুর পরেও অ’পপ্রচার সমানে চলছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ইভিএম সম্পর্কে বিভ্রান্তি সংশয় থেকেই যাচ্ছে। আমরা সত্যি উ’দ্বি’গ্ন হচ্ছি। কেন্দ্রে কেন্দ্রে অনিয়ম, সহিং’সতা, ব্যালট পেপার ছি’নতাই হলে প্রতিরোধ কতটা সম্ভব হবে। আমাদের প্রত্যাশা জাতীয় নেতৃবৃন্দ ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে নিবিড়ভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা ও মতৈক্য হয়ে বি’তর্কি’ত বি’ষয়গুলোর নিরসন করে আগামী সাধারণ নির্বাচনের জন্য অনকূল পরিবেশ ও সমতল ভিত্তি সৃষ্টি করবেন।

তিনি বলেন, অরাজনৈতিক সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিগত সংগঠিত হয়ে এগিয়ে এসে জাতির একটি সং’কটময় মুহূর্তে তাদের প্রজ্ঞা ও জ্ঞান প্রয়োগ করে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সংলাপে আহ্বান করে আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক মতৈক্য সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারেন। আমরা নির্বাচন করতে চাই অনুকূল পরিবেশ ও শক্ত ভিত্তির ও’পর। এজন্য সকলের সহায়তা কাম্য।