টি২০ নেতৃত্ব হারাচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ, অধিনায়ক হচ্ছেন সাকিব

| আপডেট :  ১৭ জুলাই ২০২২, ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৭ জুলাই ২০২২, ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ

বিসিবির আজকের সভা মূলত শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের পরামর্শক নিয়োগ নিয়ে। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে উত্থাপিত হবে বাকি ইস্যুগুলো। যেখানে থাকছে টি২০ অধিনায়ক পরিবর্তনের বিষয়টিও। তাই আজকের সভার আলোচ্য সূচিতে না থেকেও থাকছেন টি২০ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।

গতকাল ক্রিকেট সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ঘুরে ফিরে এসেছে এ বিষয়টি। প্রায় সবাই জানতে চেয়েছেন সাকিব আল হাসানকে টি২০ অধিনায়ক করা হচ্ছে কিনা। আসলে টি২০-তে বাংলাদেশ দলের ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণেই ছন্দহীন মাহমুদউল্লাহকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে জনমত তৈরি হয়েছে।

ক্রিকেটানুরাগীদের এই কৌতূহল মেটাতে বিসিবি পরিচালকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, কৌশলগত কারণে জিম্বাবুয়ে সফরে মাহমুদউল্লাহকে অধিনায়ক রাখা হলেও এশিয়া কাপে নেতৃত্বের হাত বদল হবে। টেস্টের পর টি২০ অধিনায়ক করা হবে সাকিবকে।

জুলাই-আগস্টে জিম্বাবুয়েতে তিনটি করে ওয়ানডে এবং টি২০ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। জাতীয় দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটারের কাছে জিম্বাবুয়ে প্রিয় প্রতিপক্ষ। কারণ জিম্বাবুয়েকে সামনে পেলে সবার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। সুযোগটি কাজে লাগাতে মাহমুদউল্লাহরাও উন্মুখ হয়ে আছেন।

বিসিবি বিশ্রাম দিতে চাইলেও তাই সাকিব ছাড়া বাকি সিনিয়ররা জিম্বাবুয়েতে খেলতে যাবেন। কারণ এক-দুটি ভালো ইনিংসে খেলে ফেলতে পারলেই তো ‘জাতীয় দল নামক বাসের’ হ্যান্ডেল ধরে আরও কিছুদিন ঝুলে থাকা যাবে। এমন সুবর্ণ সুযোগ কেউই হেলায় হারাতে চায় না। ব্যক্তিগত লাভ যেখানে লোভের সঞ্চার করে সেখানে দেশ বা দলকে তুচ্ছ জ্ঞান করা অস্বাভাবিক নয়।

বিসিবি কর্মকর্তারা পরিকল্পনা করছেন এই ধারা থেকে জাতীয় দলকে বের করে আনার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বকাপের আগেই অধিনায়কের হাত বদল করতে চায় বোর্ড। বিসিবির একজন পরিচালক নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন,’বিশ্বকাপের পরই টি২০ অধিনায়কত্বে পরিবর্তন হওয়া উচিত ছিল। কারও কারও অনুরোধে তা করতে পারেননি বোর্ড সভাপতি।

বিশ্বকাপের আগেই একজন দক্ষ অধিনায়কের হাতে দলকে তুলে দিতে পারলে ভালো হবে। এ বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে অনেকদিন ধরেই। সাকিব থাকলে জিম্বাবুয়ে সিরিজেই হয়তো অধিনায়কের পরিবর্তন দেখতে পারতেন। এখন সেটা করতে হবে এশিয়া কাপে।’

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত হোম সিরিজের পর থেকেই টি২০-তে ভালো খেলছে না বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে আট ম্যাচ খেলে দুটিতে জিতেছে। সে জয়ও ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে। স্কটল্যান্ডের কাছে হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু, অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজয়ে শেষ। বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ও ভালো যাচ্ছে না। শেষ ১২ ম্যাচে একটি মাত্র জয়।

দলের ধারাবাহিক ব্যর্থতার পেছনে অধিনায়কের ছন্দে না থাকাকেও কারণ মনে করা হচ্ছে। শেষ ১৩ ইনিংসের প্রভাববিস্তারী একটি ইনিংসও নেই তাঁর। গত টি২০ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৪ বলে করা ৩১ রানই মাহমুদউল্লাহর সর্বোচ্চ। এই ১৩ ইনিংসের বেশিরভাগের স্ট্রাইক রেট শতকের নিচে। তাই আড়ালে আবডালে মিডল অর্ডার এ ব্যাটারের ব্যাটিংকে বর্ণনা করা হচ্ছে ‘বিগত যৌবনা’ বিশেষণে।

বিসিবির একজন কর্মকর্তার মতে, ‘ক্রিকেটারদের সবাই আমাদের পছন্দের। কিন্তু ব্যক্তিগত পছন্দের চেয়েও দলের প্রয়োজন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি দলের এবং দেশের ভালোর জন্য মাহমুদউল্লাহকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়াই ভালো হবে। মুমিনুল ছন্দে ছিল না, তাঁকে সরে যেতে হয়েছে। মাহমুদউল্লাহকেও ধন্যবাদ বলে দেওয়ার সময় হয়েছে।’

এ থেকেই বোঝা যায়, দলের টানা ব্যর্থতা এবং ১৩ ইনিংসে ১৮২ রান করা মাহমুদউল্লাহর নেতৃত্বে আর আস্থা রাখতে পারছে না বোর্ড। ডান-বাঁহাতের ব্যাটারের বিপরীতে অনুরূপ বোলার পরিবর্তনের কৌশলকে আর গলাধঃকরণ করতে পারছেন না নীতিনির্ধারকরা। দেশের ক্রিকেটপাড়ায় কান পাতলেই তাই শোনা যায় টি২০ অধিনায়কত্বে পরিবর্তনের স্লোগান। যেটা বাস্তবে রূপ নিতে পারে আগস্ট সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় টি২০ এশিয়া কাপ দিয়ে।