ঈদে এক পোয়া ব্রয়লার মুরগিও কিনতে পারেননি শহর আলী

| আপডেট :  ৮ জুলাই ২০২২, ০৮:৫৯ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৮ জুলাই ২০২২, ০৮:৫৯ অপরাহ্ণ

‘দুই মাস থাকি বান (বন্যা)। কাজ-কামাই নাই। নিজের জায়গা-জমিন নাই। মানষের জায়গাত বাড়ি করি আছি। হামার বউ মানষের বাড়িত কাজ করে। তাহে দিয়া কোনোরকম চলছি। হাতোত কোন টেহা (টাকা) পয়সা নাই। ঈদোত যে এক পোয়া বয়লারের (ব্রয়লার) গোস্ত কিনমো, তারও ব্যবস্থা নাই।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের নওয়ানি পাড়া এলাকার ভূমিহীন দিনমজুর শহর আলী (৫০)। তিনি আরও বলেন, কামাই (কর্ম) না থাকার কারণে হাতে টেহা (টাকা) নাই। একটা যে গেঞ্জি কিনমো, তাইও হওয়ার নয়। তারপর ফির ঘরটা ঠিকঠাক করতে কয়টা বাঁশের দরকার, তারও উপায় নাই। টেহা (টাকা) নাই কিসের ঈদ হামার, দিন গেলেই হইবে।

জানা গেছে, শহর আলীর নিজের কোনো জমি না থাকায় অন্যের এক শতক জমিতে একটি ঘর তুলে স্ত্রীসহ বসবাস করছেন। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে ভালোই চলছিল তাদের সংসার। দুই মাস ধরে বন্যার পানিতে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে থাকায় দিনমজুরের কাজ বন্ধ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এ দম্পতি। বর্তমানে তার স্ত্রী অন্যের বাড়িতে কাজ করে যেটুকু চাল পাচ্ছেন, তা দিয়েই চলছে অভাব-অনটনের সংসার।

প্রতিবেশী লাভলী বেগম নামের এক নারী বলেন, শহর আলী অন্যের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করছেন। দিনমজুরের কাজ করে তাদের সংসার চলে। বন্যার কারণে এখনো এখানকার জমিগুলোতে পানি। তাই তার হাতে কোনো কাজ নেই। তার স্ত্রী অন্যের বাড়িতে খেটে যা পাচ্ছেন, তা দিয়েই চলছেন আপাতত।

বন্যার প্রভাবে শুধু শহর আলী নন, তার মতো সদরে শত শত দিনমজুর মানুষের মাঝে এবার ঈদের আনন্দ নেই। কাজ হারিয়ে তারা এবার বেকায়দায় আছেন। পরিবারের শিশুরা পাচ্ছে না ঈদের কোনো আনন্দ। অনেক পরিবারের শিশুদের মনেও নেই আনন্দ।

এদিকে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট এখনো স্বাভাবিক হয়নি। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের খেটে খাওয়া দিনমজুররা। এসব এলাকায় এখনো তীব্র সংকটে রয়েছে গবাদি পশুর খাদ্য-সংকটও। সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণসহায়তা দেওয়া হলেও অনেকে না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।

সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, বন্যায় এবার আমার ইউনিয়নে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ১০০ বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। সেই সঙ্গে আমনের বীজতলা নষ্ট হওয়ায় এখানকার কৃষকরা এখনো আবাদ করতে পারেননি। এদিকে ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফ ১০ কেজি করে চাল ইউনিয়নে প্রায় ৫ হাজার পরিবারকে দেওয়া হয়েছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, সাম্প্রতিক বন্যায় যাদের বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে, পাশাপাশি যারা নদীভাঙনের শিকার হয়েছেন, আমরা সেই তালিকা করেছি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪৯টি ইউনিয়নের দরিদ্রদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে দেড় কোটি টাকা সহায়তা পেয়েছি, তা পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।