যুক্তরাষ্ট্রে বসে অনলাইনে অফিস করার ইচ্ছাপূরণ হচ্ছে না ওয়াসার এমডির

| আপডেট :  ৭ জুলাই ২০২২, ১০:৪২ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৭ জুলাই ২০২২, ১০:৩৯ অপরাহ্ণ

বাংলা একাত্তর ডেস্কঃ ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব অন্য কাউকে না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসে নিজেই অনলাইনে সেই দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছিলেন সংস্থাটির বর্তমান এমডি তাকসিম এ খান। কিন্তু সংস্থাটির বোর্ড সদস্যদের বিরোধিতার মুখে তার এই আবদার পূরণ হলো না। বোর্ড সদস্যরা তাকসিম এ খানের আমেরিকায় বসে ‘ভার্চ্যুয়াল অফিসের’ আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কারওয়ানবাজারে ঢাকা ওয়াসা ভবনে অনুষ্ঠিত ওয়াসা বোর্ডের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের সদস্য ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দ্বীপ আজাদ বলেন, তিনি দুই মাসের ছুটি চেয়েছিলেন। এমন পদ্ধতিতে ছুটি চেয়েছিলেন যাতে তিনি আমেরিকায় বসে অনলাইনে অফিস করবেন। বোর্ড সেটা অনুমোদন করেনি। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের জন্য তাকে দুই মাসের ছুটি মঞ্জুর করা হয়েছে। ছুটি মানে ছুটি। এ সময় অন্য কেউ এমডির দায়িত্ব পালন করবেন।

জানা গেছে, অতীতেও একাধিকবার এভাবে ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসে একাধিকবার অফিস করেছেন তাকসিম এ খান। সেসময় একজনকে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দিলেও তা আমলে না নিয়ে নিজেই অনলাইনে এমডির দায়িত্ব পালন করেছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয় তার বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বোর্ড সদস্য বলেন, এবারও তিনি ওইভাবেই ছুটি ও অফিস করার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাকে আগস্ট সেপ্টেম্বর মাসে ছুটি দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সাথে বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য ১০ ঘণ্টা। যেমন বাংলাদেশে যদি সকাল ৯টায় অফিস শুরু হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্রে রাত ১১টা বাজে। আবার বাংলাদেশের বিকাল ৫টায় অফিস শেষের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে সকাল ৭টা বাজবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে ঢাকা ওয়াসার সব কাজ দেখভালের ক্ষেত্রে সময়ের ব্যবধানও একটি বড় সমস্যা।

আরেকজন সদস্য জানান, এমডির পরিবারের সদস্যরা সবাই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেন। এমডি নিজেও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এ জন্য তিনি মাঝে মাঝেই পরিবারের সাথে সময় কাটানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে থাকেন। পরিবারের সাথে সময় কাটানো বা চিকিৎসার প্রয়োজনে যদি আমেরিকা যাওয়ার প্রয়োজন পড়লে তাকে দুই মাসের পুরোপুরি ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জানা গেছে, বৈঠকে এমডির ভার্চুয়াল অফিসের প্রস্তাব উঠলে বোর্ড সদস্যরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। কয়েকজন সদস্য এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের প্রচলিত কোনো বিধি-বিধানে এমন কোনো সুযোগ না থাকলেও এমন প্রস্তাব উত্থাপন করে বোর্ড বিব্রত করা হচ্ছে। যদিও কয়েকজন সদস্য প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয়ের পাঠানোর পক্ষে মত দেন। বোর্ডের প্রস্তাবের পক্ষে বেশির ভাগ সদস্য ভিন্নমত প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার এমডি প্রায় এক ঘণ্টা ধরে নানা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। কিন্তু বেশিরভাগ সদস্যই তার প্রস্তাব আমলে নেননি। ভিন্ন যুক্তি দিয়ে এমডির যুক্তিকে খণ্ডন করে দেন।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. গোলাম মোস্তফা বলেন, বোর্ড সভায় এমডির ভার্চুয়াল অফিসের প্রস্তাব নাকচ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস ভার্চুয়াল অফিসের অনুমতি নিয়ে আমেরিকা যান ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান। তিন মাসের অনুমতি নেওয়া থাকলেও সেখানে থেকে চার মাস ভার্চুয়াল অফিস করেন তিনি। ওইবার ছুটিতে যাওয়ার অল্প কিছুদিন আগে তার চুক্তি নবায়ন করে ঢাকা ওয়াসা বোর্ড।

তখন তার কোনো ছুটি পাওনা ছিল না। এরপরও টানা চার মাস আমেরিকা থেকে ভার্চুয়াল অফিস করেন বহুল আলোচিত-সমালোচিত তাকসিম এ খান।