ড. ইউনূস হবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী?

| আপডেট :  ৬ জুলাই ২০২২, ০৮:০০ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৬ জুলাই ২০২২, ০৮:০০ অপরাহ্ণ

গ্রামীণ টেলিকমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে শ্র’মিকদের পাওনা টাকা আ’ত্মসাতের অ’ভিযোগে দুই শ্র’মিক নেতাকে গ্রে’ফতার করেছে ঢাকা মহানগর গো’য়েন্দা গুলশান বিভাগ। গ্রে’ফতাররা হলেন গ্রামীণ টেলিকম শ্র’মিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি কামরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ।

তবে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ (২৬ কোটি টাকা) আ’ত্মসাতের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ও আগের এমডি জ’ড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া নানা প্রলোভন ও ভ’য় দেখিয়ে শ্র’মিকদের দমিয়ে রাখতে মধ্যস্ততাকারী হিসেবে আইনজীবী ১৬ কোটি টাকা নিয়েছেন বলেও প্রমাণ মিলেছে।

ডি’বি জানায়, লভ্যাংশ পাওনা পরিশোধ, অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার প্রলোভনের পাশাপাশি গ্রামীণ টেলিকম অফিস ক্যাম্পাসে শ্র’মিক কর্মচারী ইউনিয়ন গুজব ছড়িয়ে দেয় যে, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো হবে। ক্ষমতার পটপরিবর্তনে প্রধানমন্ত্রী হবেন গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. ইউনূস। তখন শ্র’মিকদের এসব মা’মলা কোনো কাজে আসবে না, শ্র’মিকরা কোনো ক্ষ’তিপূরণও পাবেন না। বরং তাদের চাকরি হা’রানো ও জে’ল খাটাসহ অন্যান্য নি’র্যাতনের মুখে পড়তে হবে।’

এই ভয়ে এবং কিছুই না পাওয়ার অনিশ্চয়তায় আইনজীবীর পরামর্শে একাধিকবার সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে টেলিকম ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও আইনজীবী বি’ষয়টি গো’পন রাখতে চা’প দেন। প্রাথমিক জি’জ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য জানান গ্রে’ফতাররা।বুধবার (৬ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডি’বি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ঢাকা মহানগর সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রা’ইম বিভাগের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মোহাম্ম’দ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় গ্রামীণ টেলিকমের বি’রুদ্ধে শ্র’মিকরা পাওনা আদায় ও দাবি-দাওয়াসহ মোট ১৯০টি মা’মলা করেন। এসব মা’মলা তুলে নেওয়ার জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে মোটা অংকের টাকার প্রস্তাব দেয় টেলিকম কর্তৃপক্ষ। একটা পর্যায়ে মা’মলা তুলে নেবেন, কোম্পানিকে দায়মুক্তি দেবেন, নিজেরা চাকরি থেকে অব্যাহতি নেবেন এবং ইউনিয়ন বিলুপ্ত করবেন— এসব কিছুর বিনিময়ে শ্র’মিকরা ৪৩৭ কোটি টাকা পাবেন বলে চুক্তি হয় শ্র’মিক ও গ্রামীণ টেলিকমের মধ্যে। কিন্তু সেই টাকার বড় একটি অংশ নামে-বেনামে আ’ত্মসাৎ হয়েছে। এই অ’ভিযোগে এক সিবিএ নেতা মিরপুর মডেল থানায় মা’মলা করেন। সেই মা’মলা ত’দন্ত করছে ডি’বির গুলশান টিম।

বা’দী অ’ভিযোগে উল্লেখ করেন, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানিতে বিভিন্ন সময়ে নিয়োজিত শ্র’মিক-কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ না করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ক্রমাগত নবায়ন করে। শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী বাৎসরিক লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ), শ্র’মিক কল্যাণ ফান্ড এবং শ্র’মিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে (৮০:১০:১০ অনুপাতে) দেওয়ার কথা ছিল। তবে প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা স্থায়ী নয় এবং কোম্পানি অলাভজনক- এ ধরনের কথা বলে শ্র’মিকদের আইনানুগ লভ্যাংশ দেওয়া হয়নি।

বিভিন্ন আইনানুগ দাবি-দাওয়ার কারণে ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর একযোগে ৯৯ জন শ্র’মিককে ছাঁটাই করে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ। শ্রম আইন অনুযায়ী শ্র’মিকদের স্থায়ীকরণ ও লভ্যাংশ পাওনা, বেআইনিভাবে শ্র’মিক ছাঁটাইয়ের পরে কোম্পানিতে পুনর্বহাল, আ’দালতের আদেশ অনুযায়ী পুনর্বহালের পরেও দায়িত্ব না দেওয়ায় আ’দালত অবমাননা, কোম্পানির অবসায়নসহ অন্যান্য দাবিতে শ্র’মিকরা এবং শ্র’মিক ইউনিয়ন গ্রামীণ টেলিকমের বি’রুদ্ধে বিভিন্ন সময় মা’মলা করেন। এ বি’ষয়ে শ্রম আ’দালত এবং হাইকোর্টে ১৯০টি মা’মলা ও রিট পিটিশন দায়ের করেন তারা। তবে তড়িঘড়ি করে অনেকটা গো’পনে এসব মা’মলা উত্তোলন, শ্র’মিকদের অর্থ দেওয়া এবং প্র’তারণা ও অর্থ আ’ত্মসাতের ঘটনা লক্ষ্য করা যায়।

ডি’বির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, গ্রামীণ টেলিকম এবং গ্রামীণ টেলিকম শ্র’মিক-কর্মচারী ইউনিয়নের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী গত ১০ মে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় একটি সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। ২০১০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর কোম্পানির মোট লভ্যাংশের ৫ শতাংশ হারে এ সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টে প্রায় ৪৩৭ কোটি টাকা দেওয়া হয়। অ্যাকাউন্টটি থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বা’ধ্যতামূলক দস্তখতকারী (সিগনেটরি) এবং ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অন্য দুই সিগনেটরি হিসেবে রাখা হয়।

শ্র’মিকদের সব পাওনাদি ওই অ্যাকাউন্ট থেকেই পরিচালিত হওয়ার কথা। চুক্তি অনুযায়ী সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে শ্র’মিকদের পাওনা এবং ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ছাড়া অন্য কোনো অর্থ ছাড় করার সুযোগ নেই। এরপরও কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং ওই দুই সিবিএ নেতাসহ ইউনিয়নের কিছু নেতার যোগসাজশে ওই অ্যাকাউন্টে থাকা ৪৩৭ কোটি টাকা থেকে গত ১৭ মে এবং ২৫ মে ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়। গ্রামীণ টেলিকম শ্র’মিক ইউনিয়নের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ওই টাকা নিয়ে আসা হয়।

গ্রামীণ টেলিকম শ্র’মিক ইউনিয়নের ওই অ্যাকাউন্টের মোট তিনজন সিগনেটরি ছিলেন। তারা হলেন- ইউনিয়নের সভাপতি (গ্রে’ফতার), সাধারণ সম্পাদক (গ্রে’ফতার) এবং অর্থ সম্পাদক মোহাম্ম’দ আকতারুজ্জামান (মা’মলার বা’দী)। অন্যান্য শ্র’মিকদের মতো টাকা পাওয়ার পরেও শ্র’মিকনেতা কামরুজ্জামান, ফিরোজ মাহমুদ ও মাইনুল হাসান ইউনিয়নের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা স্থানান্তর করেন। ডাচ-বাংলা ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে তিন কোটি করে মোট ৯ কোটি টাকা স্থানান্তর করে আ’ত্মসাৎ করেন তারা। সূত্রঃ জাগোনিউজ