শরীরে আগুন দেয়ার আগে হেনোলাক্স মালিকের বিচার চেয়ে ফেসবুকে যে স্ট্যাটাস দেন সাবেক ছাত্রলিগ নেতা

| আপডেট :  ৫ জুলাই ২০২২, ০৬:৫২ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৫ জুলাই ২০২২, ০৬:৫২ অপরাহ্ণ

প্রসাধন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হ্যানোলাক্সে বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত না পেয়ে হতাশায় নিজের গায়ে আ’গুন দিয়ে আত্মহ’’ত্যার চেষ্টা করেন কবি, ব্যবসায়ী ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. আনিসুর রহমান গাজী। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নিজের শরীরে প্রকাশ্যে আ’গুন দেন তিনি।এরপর মঙ্গলবার (৫ জুলাই) ভোর সোয়া ৬টায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মা’রা যান তিনি।

জানা গেছে, হ্যানোলাক্স কোম্পানির কাছে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা পাওনার দাবি নিয়ে গত ২ মাস আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একটি মা’নববন্ধন করেছিলেন আনিস। এরপর করেন সংবাদ সম্মেলন। বিভিন্ন সময়ে পাওনা টাকা ফেরত চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দেন তিনি। টাকা ফেরত না দেয়ায় বিচারের দাবি জানান হেনোলাক্সের মালিক মো. নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের।

এর আগে ৩১ মে আনিস টাকা ফেরত চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘প্রিয় শুভাকাঙ্ক্ষী ভাই বোন বন্ধু। আমি মো. আনিসুর রহমান(গাজী আনিস)একজন কবিতা প্রেমিক মানুষ। নিজে হয়তো ভালো কবিতা লিখতে পারি না কিন্তু আমি ভীষণভাবে কবিতা ভালবাসি।

আমি একজন ব্যবসায়ী এবং জীবনে প্রচুর রোজগার করেছি। আমার রোজগারের সবচেয়ে বড় অংশ স্থানীয় স্কুল মাদ্রাসা মসজিদ এবং অ’সহায় দুস্থ মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছি, সেইসাথে নিজেও সুখী স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং সৎ জীবন যাপন করেছি। আমি তিনটি কন্যা স’ন্তানের জনক। আমার বড় মেয়ে মেধা রহমান আঁচল এবার এইচ এস সি পরীক্ষার্থী। মেঝ মেয়ে প্রতিভা রহমান অহনা এস এস সি পরীক্ষার্থী এবং ছোট মেয়ে জয়িতা রহমান অবনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।

২০১৬ সাথে হেনোলাক্স গ্রুপের কর্ণধার মো. নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের সাথে আমার সখ্যতা এবং আন্তরিকতা গড়ে উঠে। আমি কুষ্টিয়া জে’লায় জন্মগ্রহণ করেছি এবং কুষ্টিয়া শহরেই বসবাস করি।

তবে প্রতিমাসেই নিজের প্রয়োজনে ঢাকা এলে তাদের সাথে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হতো এবং উপহার বিনিময় ও ভালো রেস্তোরাঁয় আমরা একসাথে খাওয়া দাওয়া করতাম এবং বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেতাম। যেহেতু আমি স্বাচ্ছন্দ্যে দিনযাপনে অভ্যস্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নিজস্ব গাড়িতেই সবসময় যাতায়াত করি। আমি মো. নুরুল আমিন এবং ফাতেমা আমিনের সঙ্গে নিজের খরচায় দেশের বাইরেও একাধিকবার বেড়াতে গিয়েছি।

২০১৮ সালে কলকাতা হোটেল বালাজীতে একইসাথে অবস্থানকালে উনারা আমাকে হেনোলাক্স গ্রুপে বিনিয়োগের এবং যথেষ্ট লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে বলে জানান। আমি প্রথমে অসম্মতি জ্ঞাপন করলেও পরবর্তীতে রাজি হই এবং প্রাথমিকভাবে এককোটি টাকা বিনিয়োগ করি। পরবর্তীতে তাদের পীড়াপীড়িতে আরও ছাব্বিশ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি(অধিকাংশ টাকা ঋ’ণ হিসেবে আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে নেয়া)।

স্ট্যাটাসে তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগ করার সময় পরস্পরের প্রতি সম্মান এবং বিশ্বাসের কারণে এবং তাদের অনুরোধে চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তি করা হয়নি তবে প্রাথমিক চুক্তি করা হয়েছে। বিনিয়োগ পরবর্তী চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তিপত্র সম্পাদন করার জন্য বারবার অনুরোধ করি কিন্তু উনারা গড়িমসি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে উনারা প্রতিমাসে যে লভ্যাংশ প্রদান করতেন সেটাও বন্ধ করে দেন এবং কয়েকবার উনাদের লোকজন দ্বারা আমাকে হে’নস্তা ব্ল্যা’কমেইল করেন এবং করার চেষ্টা করেন। বর্তমানে লভ্যাংশসহ আমার ন্যায্য পাওনা তিনকোটি টাকার অধিক।

তিনি বলেন, এ-বি’ষয়ে কুষ্টিয়া আমলী আ’দালতে আমি উনাদের আ’সামি করে দুইটি মা’মলা দা’য়ের করেছি যা বিচারাধীন রয়েছে এবং গত ২৯ মে জাতীয় প্রেসক্লাব ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলন করি এবং যাবতীয় ডকুমেন্টস সম্মানিত সাংবাদিকদের নিকট উপস্থাপন করি। এ বি’ষয়ে বিস্তারিত তথ্যাদি তুহিন আহমেদ মোবাইল এবং রাজু হামিদের মাধ্যমে জানা যাবে।

ভীষণ মা’নসিক নিপট খরায় আমি উল্লেখিত তথ্যাদি উপস্থাপন করলাম। আমার সামনে বিকল্প পথ না থাকায় ফেসবুকেও সবাইকে জানালাম।

আমি এই প্র’তারক দম্পতির দৃষ্টান্তমূলক শা’স্তি নিশ্চিত করার জন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট অনুরোধ করছি। সেইসাথে যারা আমার শুভাকাঙ্ক্ষী তারাও সোচ্চার হবেন বলে আশা করছি।’

জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় নিজের গায়ে আ’গুন দিয়ে আত্মহ’’ত্যার চেষ্টা করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা। তার নাম গাজী আনিস।

সোমবার (৪ জুলাই) বিকেল পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গু’রুতর দ’গ্ধ অবস্থায় তাকে উ’দ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশ শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করেছে।

চিকিৎসকরা জানান, আনিসের চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার বিকেলে প্রেসক্লাবের সামনে হঠাৎ করেই আনিস গায়ে আ’গুন ধরিয়ে দেন। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আ’গুন ছড়িয়ে পড়ে তার শরীরে। বি’ষয়টি আশপাশের মানুষের নজরে আসলে আ’গুন নেভানোর চেষ্টা করা হয়। ততক্ষণে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ দ’গ্ধ হয়। গু’রুতর দ’গ্ধ অবস্থায় তাকে উ’দ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশ শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে।মঙ্গলবার (৫ জুলাই) ভোর সোয়া ৬টায় আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মা’রা যান তিনি।