বাংলাদেশি নারীর প্রেমে পড়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে এক অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক

| আপডেট :  ২ জুলাই ২০২২, ০৪:৫২ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২ জুলাই ২০২২, ০৪:৫২ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাস নিয়ে বই লিখতে বাংলাদেশে এসে হালিমা নামে এক নারীর প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করেন সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা ম্যালকম আর্নল্ড। কিন্তু বাংলাদেশে এক প্রতারকের খপ্পরে পড়ে অনাহারে দিন কাটছে তার। এ নিয়ে ফেসবুক পেজ ‘সিডনি প্রতিদিন’ এ আউয়াল খান নামে এক ব্যক্তি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

পাঠকদের জন্য তার লেকাটি তুলে ধরা হলো-
‘সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা ম্যালকম আর্নল্ড, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর আমন্ত্রণে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাস নিয়ে বই লিখতে ২০০১ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন। এ সময় তারা সুন্দরবন ভ্রমণে গেলে মোংলায় ওয়ার্ল্ড ভিশন এনজিওতে কর্মরত হালিমা বেগমের সঙ্গে আর্নল্ডের পরিচয় হয়।

সাত-আট দিন বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যান আর্নল্ড। কিন্তু তিনি নিয়মিত অস্ট্রেলিয়া থেকে হালিমার কাছে চিঠি লিখতেন।কিন্তু হালিমা ইংরেজি না জানায় সবসময় তার চিঠির উত্তর দেওয়া সম্ভব হতো না। তবে হালিমা বুঝতে পারতেন সে তাকে ভালোবাসে। এর মধ্যে ২০০৩ সালে হালিমার জরায়ু ক্যান্সার ধরা পড়ে। হালিমা তখন বাধ্য হয়ে চিঠির মাধ্যমে তাকে তার অসুস্থতার কথা জানায়। হালিমার অসুস্থতার খবর পেয়ে ২০০৩ সালের শেষের দিকে ম্যালকম বাংলাদেশে আসেন এবং নিজ খরচে হালিমার চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তোলেন। হালিমা সুস্থ হয়ে উঠলে তিনি তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। হালিমাও বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়।

বিয়ের পর খুলনায় বসবাস শুরু করেন এই দম্পতি। দীর্ঘ ১৮ বছর খুলনার সোনাডাঙ্গায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন তারা। স্বামী পরিত্যক্তা হালিমা সে যাত্রায় নতুন জীবন পেলেও বাংলাদেশে থাকার মূল্য দিয়ে প্রায় নিস্ব হয়েছেন ম্যালকম আরনল্ড। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ফিরেছিলেন থিতু হতে। কিন্তু হালিমার জন্যই আবার ফিরতে হয়েছে বাংলাদেশে। এ দেশের নোনা মাটি কাদায় অভ্যস্ত হালিমার মেয়েটি তো রূপসার পাড়ে থাকে। এরপর সে বাংলাদেশে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। সে জন্য জন্মভূমি অস্ট্রেলিয়ায় থাকা সব সম্পদ বিক্রি করে চলে আসেন খুলনায়।

কিন্তু খুলনায় এক বন্ধু প্রতারকের খপ্পরে পড়ে সরল মনের ম্যালকম বাড়ি বিক্রির অধিকাংশ অর্থ হারান। তারপরও ছবি বিক্রির আয় দিয়ে স্বচ্ছলভাবে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে তার ছবি বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। আস্তে আস্তে জমানো অর্থও শেষ হয়ে যায়। ফলে এখন সংসার চালানোর পাশাপাশি চিকিৎসা করানোর মতো অর্থও তার কাছে নেই। ইতোম্যধ্যে ম্যালকমের হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে, ঠিকমতো দাঁড়াতে ও হাঁটতেও পারেন না তিনি। ডায়াবেটিস, হাড় ক্ষয়, হৃদরোগে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে ম্যালকম। হাতটা অচল বলে বাংলাদেশের মানুষের মুখ, খুলনা শহরে রূপসা ঘাটের পাশে দেখা শীতের চাদরে ঢাকা মানুষের দৃশ্য উঠে আসে না। আগের ছবিগুলোও অবিক্রিত অবস্থায় রয়েছে ঘরে।

অন্যদিকে অর্থাভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা, দিতে পারছেন না বাড়ি ভাড়াও। এমনকি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়াও হচ্ছে না। বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু সহয়তা পাওয়া গেলে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। ইচ্ছা করলেই ফিরতে পারতেন অস্ট্রেলিয়াতে। পেতে পারেন অবসরকালীন ভাতা ও চিকিৎসা সেবা। কিন্তু ম্যালকম জানান, বাংলাদেশকে আমার দ্বিতীয় জন্মভূমি বা মাতৃভূমি মনে হয়। দেশের মানুষ, প্রকৃতি ও সবুজের সমারোহ আর মানুষের আন্তরিকতায় তিনি মুগ্ধ।

তিনি বলেন, যতই দিন যাচ্ছে ততই এ দেশের প্রতি আমার ভালোবাসা ও ভালোলাগা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশ সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। কিন্তু এ দেশের মানুষের মতো আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা ও আতিথেয়তা কোথাও পাওয়া যায় না। যতদিন বাঁচবেন, বাংলাদেশেই থাকতে চান তিনি। তবে তার ভিসার মেয়াদ আছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত।

বাংলাদেশের ক্রিকেটের ওপর নিয়ে ম্যালকমের লেখা বইয়ের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তার স্ত্রী হালিমা বলেন, বিয়ের পর ম্যালকম তার কাঙ্ক্ষিত বইয়ের কাজ শেষ করেন। প্রকাশের জন্য ঢাকার একটি পাবলিকেশনে বইয়ের পাণ্ডুলিপি জমা দেওয়া হয়।তবে বইটি এখনও প্রকাশিত হয়নি। ম্যালকম জানান, তা জীবনের একটাই ইচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ওপর তার অপ্রকাশিত বইটি প্রকাশ করা।

অস্ট্রেলিয়াতে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশির বসবাস। জরুরি প্রয়োজনে সে দেশে চাইলে প্রায় সব ধরনের সহযোগিতা বাংলাদেশিরা পেয়ে থাকেন। সেই দেশেরই একজন নাগরিক জীবনের শেষবেলায় এসে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবেসে বিনাচিকিৎসায়, অর্ধাহারে, অনাহারে দিনযাপন করছেন। তাই অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সবার কাছে অনুরোধ, আসুন আমরা এই অসহায় মানুষটির পাশে দাঁড়াই।