‘সাজানো সংসার ছিলো আমার, জমি-জমা গোলাভরা ধন সবই ছিলো

| আপডেট :  ১ জুলাই ২০২২, ০৩:২২ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১ জুলাই ২০২২, ০৩:১৮ অপরাহ্ণ

বাংলা একাত্তর ডেস্কঃ ‘সাজানো সংসার ছিলো আমার। টাকা-পয়সা, জমি-জমা, হালের গরু, গোলাভরা ধন সবই ছিলো। যমুনার স্রোত তার সবই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আমাকে পথের ফকির বানিয়েছে যমুনা। বসতবাড়ী জমিজমা সবই খেয়েছে যমুনা। একে একে তিনবার বসতবাড়ী নির্মান করেও রক্ষা করতে পারিনি। ভিটামাটি হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসে ছিলাম। অন্যের বাড়ীতে আশ্রিত থেকেছি ২০টি বছর।’ আক্ষেপ করে এসব কথা বলছিলেন অসহায়ের মতো যমুনার তীর রক্ষা বাঁধে দাড়িয়ে এভাবেই বিলাপ করছিলেন সত্তোর্ধ হযরত আলী।

তিনি আরও জানান, ভেবেছিলাম যমুনার বাম তীর রক্ষা বাঁধে বসতঘর বানালে আর ভাঙ্গবে না। তাই চেয়ে চিন্তে টাকা-পয়সা জমিয়ে দুই বছর আগে যমুনার তীরে বসত গড়েছি। চলতি বন্যায় সেই বাঁধেও ভাঙ্গন ধরেছে। বাঁধই টিকছে না, আমার ঘর টিকবে কি করে। যমুনার স্রোতে শেষ আশ্রয়স্থল ভেঙে গেলে যাবো কই, আমার তো আর যাওয়ার জায়গা নেই।

সহায় সম্বল হারিয়ে হযরত আলীর মতো অনেকেই বসতি গড়েছেন যমুনার ঐ তীরে। নদীর তীর রক্ষা পেলেই রক্ষা পাবে হযরত আলীরা এমনটাই দাবি তাদের। দ্রুত বাম তীরটি রক্ষা বাধ মেরামতের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড় কর্মকর্তা।

জানা যায়,যমুনার ভাঙন ঠেকাতে সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা ইউনিয়ন এলাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ফুটানী বাজার পর্যন্ত ৩টি পয়েন্টে ৪৫৫ কোটি টাকার ব্যায়ে ১৬ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার যমুনার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প বাঁধ নির্মান করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বাঁধ নির্মানের কাজ ২০১০ সালে শুরু হয়ে ২০১৭ সালে শেষ হয় এ প্রকল্পের কাজ।

গত সোমবার রাত থেকে হঠাৎ জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা ইউনিয়নের পিংনা উত্তর পাড়া এলাকার ছকমানের বাড়ী সংলগ্ন এলাকায় যমুনা নদীর বাম তীর রক্ষা বাধের প্রায় ২৫ মিটারে ধস যায়। এতে হুমকির মুখে তারাকান্দি-ভুয়াপুর মহাসড়ক ও শত শত বসতভিটাসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। স্থানীয়দেও মধ্যে দেখা দিয়েছে আতংক। গত সোমবার রাত থেকে ধস দেখা দিলেও মেরামতের কোন উদ্যোগ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড় এমনটাই জানিয়েছে স্থানীয়রা।

বন্যার পানি কমতে শুরু করায় বানভাসিদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বাধে ধস নামায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা। এ বাধ ভেঙ্গে গেলে শত শত বসতবাড়ি, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, হাট-বাজার,ইউপি ভবন, হাসপাতাল, ফসলী জমিসহ নানা স্থাপনা হুমকির মুখে পড়বে। স্মৃতিচিহ্ন মুছে যাবে কবি কায়কোবাদের নির্মিত রস পাল মসজিদ ও পোষ্ট অফিস।

এছাড়াও বাঁধ ভেঙে গেলে তারাকান্দি-ভুয়াপুর মহাসড়কটিও হুমকির মুখে পড়বে। এতে তারাকান্দি যমুনা সারকারখানার উৎপাদিত ইউরিয়া সার উত্তরবঙ্গেও ১৯টি জেলার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই দ্রুত বাঁধটিতে জিও ব্যাগ ফেলে রক্ষার দাবি এলাকাবাসীর।

এ বিষয়ে পিংনা ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, যমুনার তীর রক্ষা বাঁধটি কয়েকটি যাবৎ ভাঙতে শুরু হয়েছে। এভাবে ভাঙলে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির মুখে। এখনি বাঁধটি ভাঙন রোধ না করতে পারলে মহাসড়ক ভেঙে সরিষাবাড়ীর সাথে টাংগাইল ও ঢাকার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। দ্রুত বাঁধের ভাঙন মেরামতের দাবি এই জনপ্রতিনিধির।

এ নিয়ে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ জানান, সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা এলাকায় যমুনার তীর রক্ষা বাঁধে ২০ মিটার কিছুটা দেবে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডেও লোক গিয়ে সেখানে সার্ভিয়ার কওে এসেছে। পানি কমে গেলে নদীর বাম তীর রক্ষা বাঁধ মেরামতের জন্য দ্রুত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।