পদ্মা সেতুকে ঘিরে খুলনায় পরিবহন খাতে শত কোটি টাকার বিনিয়োগ

| আপডেট :  ২৯ জুন ২০২২, ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৯ জুন ২০২২, ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ

ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, উত্তাল পদ্মায় ভয়ে ভয়ে লঞ্চে নদী পারাপার, ফেরিতে নির্ঘুম রাতের দীর্ঘশ্বাস শেষ হয়েছে। মাত্র তিন দিন আগেই খুলনা অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্টগাথা স্মৃতিতে রূপ নিয়েছে। সেতুর ওপর দিয়েই পদ্মা পাড়ি দেওয়া এখন আর স্বপ্ন নয়, আনন্দময় গর্বের এক বাস্তবতা।

এমন অবস্থায় বসে নেই খুলনার পরিবহন খাতের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় খুলনার যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। এরই মধ্যে এই খাতে পরিবহন ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ শতকোটি টাকা ছুঁয়েছে। ২৬ জুন থেকে কোম্পানিগুলো ঢাকা-মাওয়া-খুলনা সড়কে নামিয়েছে নতুন নতুন বাস। আরও অর্ধশতাধিক বাস নামার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

জানা যায়, পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক যাত্রী পরিবহনের বাজার ধরতে চলতি মাসেই খুলনায় যাত্রা শুরু করেছে প্রচেষ্টা পরিবহন প্রাইভেট লিমিটেড নামের নতুন একটি কোম্পানি। শুরুতে ১০টি এসি এবং ১০টি নন এসি পরিবহন নামিয়েছে তারা। ২৬ জুন প্রথমবারের মতো সেতু দিয়ে যাত্রী নিয়ে গেছে এই কোম্পানি।

এ ছাড়া এ মাসেই খুলনা মেট্রোপলিটন প্রাইভেট লিমিটেড নামের আরেকটি কোম্পানি নিবন্ধন করেছে। চলতি মাস থেকে তারা ৫টি এসি এবং ৫টি নন-এসি বাস নামানোর চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে ফাল্কগ্দুনী, ইমাদ ও টুঙ্গিপাড়া পরিবহন কোম্পানির বহরে যুক্ত হয়েছে ১৯টি বিলাসবহুল বাস। ঈদের আগে আরও ১৫টি বাস নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। পরিবহন খাতের পুরোনো ব্যবসায়ী গ্রিন লাইন খুলনা-ঢাকা রুটে ডাবল ডেকারসহ এক ডজন নতুন বাস নামিয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানি করা চেসিসের সঙ্গে নিজেরাই ডিজাইন করে পরিবহনের বডি তৈরি করছেন। প্রতিটি পরিবহনের পেছনে নূ্যনতম ৮০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। সেই হিসাবে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ কোটি টাকার বাস সড়কে চলছে। নির্মাণের পর্যায়ে রয়েছে আরও ২০ কোটি টাকার বাস। পদ্মা সেতু চালুর পর পরিবহন খাতের পুরোনো কোম্পানি সোহাগ, হানিফ, ঈগল, গ্রিনলাইন পরিবহনও দুই ডজন নতুন বাস ঢাকা-মাওয়া রুটে পরিচালনার পরিকল্পনা করছে। তাতে বিনিয়োগ হবে আরও ৪০ কোটি টাকা।

মাওয়া রুটের পুরোনো ব্যবসায়ী ফাল্কগ্দুনী পরিবহন প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মামুন হাসান রিপন সমকালকে বলেন, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে পরিবহন খাত রিমডেলিং হচ্ছে। এখানে সব কোম্পানিকেই নতুন বাস নামাতে হবে। পুরোনো বাস দিয়ে এই খাতে টিকে থাকা যাবে না। এরই মধ্যে আমরা আমাদের ১৫টি পুরোনো বাস বিক্রি করে দিয়েছি। নতুন করে ১০টি বাস পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা-খুলনা রুটে চলাচল শুরু করেছে। সবক’টিই এসি। কয়েকদিন যাত্রীর চাপ দেখে আরও কিছু পরিবহন নামার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ইমাদ পরিবহনের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম জানান, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে গত মাসে তাঁদের ১০টি নতুন বাস নেমেছে। আগামী মাসে ২৭ আসনের বিলাসবহুল আরও ১১টি বাস নামছে। টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের পরিচালক দুলাল শেখ বলেন, ‘আমরা ৪টি ২৭ আসনের বিলাসবহুল বাস নামিয়েছি। পুরোনো সব গাড়ি রিমডেলিংয়ের পরিকল্পনা আছে।’

খুলনা মেট্রোপলিটন প্রাইভেট লিমিটেডের উদ্যোক্তা আবদুল গফফার বিশ্বাস বর্তমানে খুলনা মেট্রোপলিটন বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি। সমকালকে তিনি বলেন, সবাই বাস নামাচ্ছে। এসব পরিবহন কত দিন টিকবে, বুঝতে পারছি না। কারণ যেই হারে নতুন পরিবহন যুক্ত হচ্ছে, যাত্রী কি সেই পরিমাণ বেড়েছে? তিনি বলেন, অবস্থা ভালো বুঝলে আরও বিনিয়োগ করব।