কলেজ অধ্যক্ষকে পুলিশের সামনে যেভাবে জু’তার মালা পরানো হলো

| আপডেট :  ২৯ জুন ২০২২, ১২:২১ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৯ জুন ২০২২, ১২:২০ পূর্বাহ্ণ

নড়াইল জে’লায় কলেজশিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের গ’লায় জুতার মালা পরানো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পর পুলিশ ঘটনায় জড়িত স’ন্দেহে তিনজনকে গ্রে’ফতার করেছে।স্থানীয় পুলিশ ঘটনার বেশ কয়েক দিন পর না’শকতা ও শিক্ষককে হে’নস্তা করার অ’ভিযোগে মা’মলা করে।

নবী মোহাম্ম’দ সা:-কে নিয়ে মন্তব্যের জন্য সমালোচিত ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার সমর্থনে ফেসবুকে নড়াইলের ওই কলেজের এক ছাত্রের পোস্টকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ১৮ জুন।

সেদিন সেখানে ধর্মীয় অনুভূতিতে আ’ঘাত দেয়ার অ’ভিযোগে বি’ক্ষো’ভ থেকে নড়াইল জে’লা ও পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই ওই শিক্ষককে জুতার মালা পরিয়ে হে’নস্তা করার অ’ভিযোগ উঠেছে।

জে’লা ও পুলিশ প্রশাসনের র্শীষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এ ধরনের ঘটনা কিভাবে ঘটলো- এই প্রশ্নে এখন তোলপাড় চলছে।শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানোর ঘটনাটি ঘটেছে নড়াইল সদর উপজে’লায় মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজে। তিনি ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।

কলেজটির এক হিন্দু ছাত্রের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে বি’ক্ষো’ভের একপর্যায়ে ওই ছাত্র ও শিক্ষক বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে কলেজ ভবন থেকে বের করে আনার ঘটনার কিছু ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে সেখানে পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে।

ঘটনার সময় নড়াইলের জে’লা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিস্থিতি সামলাতে সেখানে গিয়েছিলেন।ঘটনার ৯ দিন পর স্থানীয় পুলিশ না’শকতা ও শিক্ষককে জুতার মালা পরিয়ে হে’নস্তা করার অ’ভিযোগে মা’মলা করে। গ্রে’ফতার করা স’ন্দেহভাজন তিন ব্যক্তিকে জি’জ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এছাড়া জে’লা ও পুলিশ প্রশাসনের দু’টি ত’দন্তকমিটি এই ঘটনার ত’দন্ত শুরু করছে বলেও কর্মকর্তারা জানান।

নড়াইলের জে’লা প্রশাসক মোহাম্ম’দ হাবিবুর রহমান বলেন, শিক্ষককে যেখানে জুতার মালা পরানো হয়েছে, সেখান থেকে তিনি ও পুলিশ সুপার কিছুটা দূরত্বে ছিলেন। বি’ক্ষো’ভের উ’ত্তেজনা থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এই ঘটনা হয়েছ বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় জনগণের অ’ভিযোগ ছিল যে প্রিন্সিপাল সকাল থেকেই ওই ছেলেকে বা পারিপার্শ্বিক অবস্থা সামাল দিতে পারেননি। সেখানে দুর্বলতা বা অন্যান্য বি’ষয়ে অ’ভিযোগে তার (অধ্যক্ষ) প্রতি আক্রোশটা বেশি ছিল।’

পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, ১৮ জুন সকাল থেকে সারাদিন ওই কলেজে মু’সলিম শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয় ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ বি’ক্ষো’ভ করে। তাতে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিভিন্ন দল ও সংগঠনের লোকজনও অংশ নিয়েছিল। তারা বি’ক্ষো’ভে লা’ঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসও নি’ক্ষেপ করেছিলেন।

কিন্তু গু’লি চালিয়ে বলপ্রয়োগ করা হলে পরিস্থিতি আরো খা’রাপ হতে পারে এই আ’শঙ্কা থেকে তারা সে পথে যাননি বলেও জানান তিনি।

পুলিশ সুপার দাবি করেন, শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে বের করে আনার সময় বি’ক্ষো’ভকারীদের কেউ আকস্মিকভাবে হয়ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি, যাতে গু’লি না করে বা র’ক্তপাতহীনভাবে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের রেসকিউ (উ’দ্ধার) করা যায়। কারণ, ওখানে গোলাগু’লি হওয়ার পর যদি কোনো ঘটনা ঘটতো, তাহলে ওই অঞ্চলে হিন্দু মুসলামান সং’ঘর্ষ ছাড়িয়ে পড়ত এবং সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ত।’

তিনি বলেন, তাদের মূল চেষ্টা ছিল, পরিস্থিতি শান্ত করে দ্রুত সেখান থেকে অধ্যক্ষকে উ’দ্ধার করা।

কলেজের অধ্যক্ষকে উ’দ্ধারের সময় সেখানে বি’ক্ষো’ভকারীদের মধ্যে কেউ দ্রুত জুতার মালাটি পরিয়ে দিয়েছে বলে তাদের ধারণা। তিনি বলেন, পরে জুতার মালা পুলিশের নজরে আসার সাথে সাথেই তা সরিয়ে ফেলা হয়।

পুলিশ সুপার অবশ্য ঘটনার পেছনে ধর্মীয় অনুভূতিতে আ’ঘাত হা’নার অ’ভিযোগের পাশাপাশি কলেজের অভ্যন্তরীণ দ্ব’ন্দ্বকেও একটি কারণ বলে ধারণা করছেন।

নড়াইলের পুলিশ সুপার বলেন, ‘ঘটনার ক্ষেত্রে ধর্মীয় বি’ষয় আছে, এলাকার রাজনৈতিক বি’ষয় আছে, তারপরে কলেজের ম্যানেজিং কমিটির বি’ষয়ও আছে। সব মিলিয়ে চারদিক থেকে বি’ষয়টি একটা কঠিন আকার ধারণ করেছিল।’

পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আ’ঘাত হা’নার অ’ভিযোগ ওঠার পর সেটাকে ব্যবহার করে অনেকে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে।

কলেজটির ব্যবস্থাপনা কমিটিরও এক সদস্য বলেন, ঘটনার পেছনে শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ দ্ব’ন্দ্বের বি’ষয় থাকতে পারে।

যে শিক্ষকের দিকে এমন ইঙ্গিত করা হচ্ছে, তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন নেতা। তবে ওই শিক্ষক অ’ভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের শিক্ষকদের মধ্যে কোনো দ্ব’ন্দ্ব নেই।

ওই শিক্ষক অ’ভিযোগ করেন, রাজনৈতিক চিন্তা থেকে বিএনপি ও জামায়াত ঘটনায় জড়িত ছিল। স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত এই অ’ভিযোগ অস্বীকার করেছে।

শিক্ষক আরো বলেন, তাদের কলেজের একজন হিন্দু ছাত্র ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বি’তর্কি’ত মন্তব্যের সমর্থনে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মু’সলিম’দের ধর্মীয় অনুভূতিতে আ’ঘাত হেনেছেন। এই অ’ভিযোগে গত ১৮ই জুন কলেজের মু’সলিম শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজনের বি’ক্ষো’ভের মুখে হিন্দু ছাত্রটি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিশ্বাসের অফিসে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

শিক্ষক জানান, ‘সে সময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেসবুকে পোস্ট দেয়া ছাত্রের পক্ষ নিয়েছেন- এমন অ’ভিযোগ ছড়িয়ে পড়লে বি’ক্ষো’ভ থেকে উ’ত্তেজনা বেড়ে যায়। পরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটে।

নড়াইল সদর এলাকার সং’সদ সদস্য বি এম কবিরুল হক বলেন, ‘ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতে পারে কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের লোকজন দিন শেষে এটাকে সামলাতে সক্ষম হয়েছি এবং এই আ’গুনকে আমরা চা’পা দিতে সমর্থ হয়েছি।

শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন। তার পক্ষে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বাস ত’দন্ত কমিটির কাছে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন।

আর যে হিন্দু ছাত্রের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে ঘটনাটি ঘটে, ওই ছাত্র ধর্মীয় অনুভূতিতে আ’ঘাত দেয়ার অ’ভিযোগে মাদরাসার একজন শিক্ষকের করা মা’মলায় গ্রে’ফতার রয়েছেন।
কর্মকর্তারা বলেন, কলেজটি যে এলাকায়, সেখানে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে এবং ঘটনার পরদিন থেকেই পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে।
সূত্র : বিবিসি