বন্ধুকে খু’নের পর মোবাইল বিক্রির টাকায় বান্ধবীকে নিয়ে হোটেলে রাত কাটায় কিশোর

| আপডেট :  ২৮ জুন ২০২২, ০৭:০৪ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৮ জুন ২০২২, ০৭:০৪ অপরাহ্ণ

মোবাইল ফোনের জন্য স্কুলছাত্র নওফেল শেখকে (১৪) খু’ন করেছে তারই বন্ধু। এ ঘটনায় অ’ভিযুক্ত কি’শোরকে গ্রে’প্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (২৭ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকার টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রে’প্তার করা হয়। গ্রে’প্তারকৃত ওই কি’শোরের বাড়ি শাজাহানপুর হলেও সে ঢাকায় তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে লন্ড্রির দোকানে কাজ করতো। খু’নের ঘটনার পর মোবাইল বিক্রির কাজে জ’ড়িত ওই কি’শোরের কথিত বান্ধবীকে (২০) গ্রে’প্তার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (২৮ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চ’ক্রবর্ত্তী নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস কনফারেন্সে এসব তথ্য জানান। এর আগে গত ২০ জুন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শাজাহানপুরের খরনা ইউনিয়নের দাড়িগাছা গ্রামের জঙ্গল থেকে নওফে’লের ম’রদেহ উ’দ্ধার করে পুলিশ। সে উপজে’লার খরনা ইউনিয়নের দাড়িগাছা হাটপাড়া গ্রামের ইসরাফিলের ছেলে এবং দাড়িগাছা ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র।

পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চ’ক্রবর্ত্তী জানান, নওফেল এবং হ’’ত্যায় অ’ভিযুক্ত কি’শোর একে অপরের বন্ধু ছিল। তারা একসঙ্গে চলাফেরা করতো এবং দাড়িগাছা গ্রাম থেকে দুই কিলোমিটার দূরের একটি জঙ্গলে গিয়ে মাঝেমধ্যে ধূমপান করতো।

প্রায় দুই মাস আগে নওফে’লের বাবা শখের বশে জমি বিক্রির টাকা দিয়ে নওফেলকে ১৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি মোবাইল কিনে দেন। নওফে’লের সেই নতুন ফোন কীভাবে পাওয়া যায় সেই পরিকল্পনা করতে থাকে ওই কি’শোর। গত ১৮ জুন নওফে’লের জন্ম’দিন থাকায় ওই কি’শোর নওফেলকে ওই জঙ্গলে গিয়ে ধূমপান করে একটু আনন্দ করে আসার প্রস্তাব দেয়। সেদিন জন্ম’দিন থাকায় নওফেল উৎফুল্ল ছিল এবং সে তার কথায় রাজি হয়ে যায়।

ওই কি’শোর নওফেলকে হ’’ত্যা করে সেই স্মার্ট ফোনটি পাওয়ার পরিকল্পনা মাফিক তার গ’লায় পূর্ব থেকেই একটি মাফলার রাখে। পরে ওইদিন বেলা ১১টার দিকে ধূমপান করার জন্য নওফেল ও ওই কি’শোর দাড়িগাছা গ্রামের ফুলবাড়ীয়া এলাকায় বাগানের মধ্যে যায়।

নওফেল জঙ্গলের একটি গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে ধূমপান করার একপর্যায়ে ওই কি’শোর তার গ’লায় থাকা ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি লম্বা মাফলার হাতে নিয়ে নওফেলকে বলে, ‘মামা তোমাকে যদি এই মাফলার দিয়ে সিনেমার স্টাইলে খু’ন করা হয় তাহলে কেমন হবে। তখন নওফেল হেসে বলে যে, ‘মামা তুমিতো আমকে খু’ন করবে না।’ তখন অভিনয়ের ছলে ওই কি’শোর মাফলার দিয়ে নওফে’লের গ’লায় দুটি প্যাঁচ দিয়ে গাছের সঙ্গে শক্ত করে পেছন দিক থেকে টেনে ধরে।

এতে নওফেল ছ’টফট করতে থাকে এবং একপর্যায়ে মা’রা যায়। নওফেল নিস্তেজ হয়ে মাটিতে পরে গেলে ওই কি’শোর তখন নওফে’লের মৃ’ত্যুর বি’ষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য পাশের জমিতে থাকা একটি বাঁশের লা’ঠি হাতে নিয়ে নওফে’লের মাথায় পরপর দুটি আ’ঘাত করে। এতেও নওফেল নড়াচড়া না করলে ওই কি’শোর নিশ্চিত হয় যে নওফেল মা’রা গেছে। তখন ওই কি’শোর ঘটনাস্থল থেকে ১০ থেকে ১৫ হাত দূরে ঝোপের ভেতর নওফে’লের ম’রদেহ টেনে নিয়ে গু’ম করে রাখে। অতঃপর নওফে’লের স্মার্ট ফোনটি নিয়ে সবার অগোচরে চলে যায় ওই কি’শোর।

পুলিশ সুপার বলেন, ওইদিন দুপুর ১টার দিকে ওই কি’শোর তার বান্ধবীকে মোবাইল ফোনে শেরপুর থেকে ডেকে নিয়ে বগুড়া শহরের সাতমাথা একটি পুরাতন মোবাইল ক্রয়-বিক্রয়ের দোকানে যায়। তারা ভাই-বোনের পরিচয় নিয়ে নিজেদের অভাব অনটনের কথা বলে নওফে’লের ওই মোবাইল ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। সেখান থেকে তারা দুইজন বগুড়া শহরের গালা পট্টিতে অবস্থিত একটি হোটেলে মোবাইল বিক্রির দুই হাজার টাকা দিয়ে একটি রুম ভাড়া করে সময় কা’টায়। পরে ওই কি’শোর তার এক বন্ধুকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওই মেয়ের সঙ্গে সময় কা’টানোর জন্য আসতে বলে। পরে মোবাইল বিক্রির দেড় হাজার টাকা বান্ধবীকে দিয়ে তারা যার যার এলাকায় চলে যায়।

পরে ২০ জুন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে খরনা ইউনিয়নের দাড়িগাছা গ্রামের জঙ্গল থেকে নওফে’লের অ’র্ধগলিত ম’রদেহ উ’দ্ধার করে পুলিশ। তখন চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়লে খু’নি ওই কি’শোর ঢাকায় দিয়ে আত্মগো’পন করে। পরে পুলিশের ব্যাপক অ’ভিযানে ঢাকার টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে ২৭ জুন দুপুর দেড়টার দিকে খু’নি ওই কি’শোরকে গ্রে’প্তার করা হয় এবং হ’’ত্যার কাজে ব্যবহৃত সেই মাফলার উ’দ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চ’ক্রবর্ত্তী বলেন, এ ঘটনায় জ’ড়িত কি’শোরকে আজ আ’দালতে পাঠানো হবে। এছাড়াও মোবাইল বিক্রিতে সহায়তাকারী ওই নারীও আ’দালতের মাধ্যমে কা’রাগারে পাঠানো হয়েছে।

প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন জে’লা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অ’পরাধ) আব্দুর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোতাহার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) হেলেনা খাতুন এবং শাজাহানপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন।