জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন সেই বায়েজিদ তালহা

| আপডেট :  ২৮ জুন ২০২২, ০৭:১৭ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৮ জুন ২০২২, ০৭:১৭ পূর্বাহ্ণ

পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হওয়ার দিনে প্রাইভেট কারে এক বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন বায়েজিদ তালহা। টোল প্লাজায় টাকা পরিশোধ করে সেতুর জাজিরা প্রান্ত ঘুরে ফেরার সময় ৩০ থেকে ৩৫ নম্বর পিলারের মধ্যবর্তী জায়গায় নামেন টিকটক ভিডিও তৈরির জন্য। তবে তাঁর আসল উদ্দেশ্য ছিল, এই ভিডিও বানিয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলা।

তাই পরিকল্পিতভাবে গাড়িতে থাকা টুলবক্সের সরঞ্জাম ব্যবহার করে প্রথমে তাঁরা সেতুর রেলিংয়ের নাট খোলেন। পরে ঢিলা করে রাখা নাট হাত দিয়ে খোলার ভিডিও করেন। সেই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

পদ্মা সেতুর নাট খোলার ঘটনায় গ্রেপ্তার বায়েজিদ তালহাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এসব কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট সিআইডি কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে ‘একটি নেতিবাচক ইস্যু তৈরি করতেই’ বায়েজিদ তালহা এই ভিডিও করেছিলেন। ঘটনার সময় কায়সার নামে তাঁর এক বন্ধু সঙ্গে ছিলেন। কায়সারকে খোঁজা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন। রোববার ভোর থেকে বহু প্রত্যাশার এই সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ওই দিন দুপুরের পর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক যুবক পদ্মা সেতুর পিলারের নাট খুলে তুলে ধরেছেন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিকেলে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে বায়েজিদ তালহাকে (৩১) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার তাঁর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার দুপুরে মালিবাগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পদ্মা সেতুর নাট খালি হাতে খোলা হয়নি, এ জন্য সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে।

কী ধরনের সরঞ্জাম দিয়ে নাট খোলা হয়েছে, সে প্রশ্নের জবাবে সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘পদ্মা সেতুর নাটবল্টু হাত দিয়ে খোলা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আমরা সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা করে জেনেছি, এত বড় একটা স্থাপনার নাটবল্টু হাত দিয়ে খোলা যাবে না।’

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বায়েজিদ নাট খোলার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি কীভাবে এ কাজ করেছেন, সে বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য দেননি। তাঁরা একটি গাড়ি নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন, এই গাড়িতে কায়সার নামের আরেকজন ছিলেন। নাট খোলার ৩০ থেকে ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওটি ওই কায়সারের আইডি থেকে আপলোড করা হয়েছিল।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সিআইডির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বায়েজিদ ও তাঁর বন্ধু যে গাড়িতে করে গিয়েছিলেন, ওই গাড়ির টোল দেওয়ার রসিদ পাওয়া গেছে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে গাড়ি শনাক্ত করে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বায়েজিদকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তাঁর দেখানো তথ্যের ভিত্তিতে আমরা ওই জায়গাও শনাক্ত করেছি। আলামত হিসেবে ওই জায়গার ছবি তোলা হয়েছে।’

সরঞ্জাম দিয়ে নাট খোলার ভিডিও পাওয়া গেছে কি না, জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘বায়েজিদের মোবাইলে এ ধরনের ভিডিও নেই। তবে আমরা জানতে পেরেছি, সেখানে উপস্থিত একজন ওই দৃশ্য ভিডিও করেছে। আমরা সেই ভিডিও উদ্ধারের চেষ্টা করছি।’

এদিকে সোমবার বিকেলে পটুয়াখালী সদর উপজেলার লাউকাঠি ইউনিয়নের তেলিখালী গ্রামে বায়েজিদের গ্রামের বাড়িতে হামলা চালিয়েছেন ছাত্রলীগের একদল নেতা–কর্মী। বায়েজিদ ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন বলে তাঁর এক স্বজন জানিয়েছেন।

স্থানীয় কয়েকজন বলেছেন, বায়েজিদ বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে তাঁদের জানা নেই। তবে বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে তাঁকে দেখা যেত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আসার পর এই দলের নেতাদের সঙ্গেও তাঁকে দেখা গেছে।

বায়েজিদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা সম্পর্কে জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বায়েজিদ একসময় বিএনপি করত। ও ইচ্ছা করেই পদ্মা সেতুর নাট খুলে এই ভিডিও ছড়িয়েছে, যাতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা যায়।’

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুর রশিদ চুন্নু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘বায়েজিদ কখনো বিএনপি করে নেই। ওর সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।’

তবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার আমলের ছাত্রদলের নেতা ও বর্তমানে যুবদলের এক নেতার সঙ্গে বায়েজিদ তালহার একটি ছবি সোমবার প্রথম আলোর পটুয়াখালী প্রতিবেদক দেখেছেন। সুত্রঃ প্রথম আলো