এত বড় হয়েছে তবুও ছেলেকে স্মার্টফোন দিইনি : ঢাবিতে প্রথম নুয়েলের মা

| আপডেট :  ২৭ জুন ২০২২, ০৮:৪৬ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৭ জুন ২০২২, ০৮:৪৬ অপরাহ্ণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘খ’-ইউনিটে (কলা অনুষদ) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ফরিদপুরের শিক্ষার্থী নাহানুল কবির নুয়েল (২০)। পরীক্ষায় ১২০ নম্বরের মধ্যে তিনি ৯৬.৫ পেয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি।

সোমবার (২৭ জুন) দুপুর ১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রশাসনিক ভবনের অধ্যাপক আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে আনুষ্ঠানিকভাবে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন। নাহানুল কবির নুয়েল ময়মনসিংহ সদরের ভাবোখালী ইউনিয়নের ঘাগড়া গ্রামের বাসিন্দা চাঁদপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আনোয়ারুল কবীরের একমাত্র সন্তান। তার মা মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার মৎস্য ও সম্প্রসারণ কর্মকর্তা।

নাহানুল কবির নুয়েলের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নুয়েলের বাবা ও মা সরকারি চাকুরিজীবী হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। পড়াশোনা করতে হয়েছে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ২০০২ সালে ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়া এলাকায় জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। এরপর বাবার চাকরির কারণে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন খুলনা শহরের একটি স্কুলে।

এর মধ্যে ২০১২ সালে নুয়েলের বাবা আনোয়ারুল কবিরের বদলি হয়ে যায় ফরিদপুরে। তার কর্মস্থল ছিল ফরিদপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। সেখানে তিনি উপাধ্যক্ষ পদে চাকরি করেন। ২০১৪ সালে ফরিদপুর জেলা স্কুলে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উর্ত্তীর্ণ হন। পরে বাবার পরামর্শে বিজ্ঞান বিভাগ পরিবর্তন করে মানবিক বিভাগে ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ফরিদপুরের মানবিক শাখায়।

সেখান থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে মানবিক বিভাগে ঢাকা বোর্ডের সমন্বিত মেধা তালিকায় ২৮তম হয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে ঢাকার একটি কোচিং সেন্টার থেকে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কোচিং করেছেন তিনি। নুয়েল বর্তমানে তার মায়ের সঙ্গে মায়ের কর্মস্থল ঘিওরে আছেন। তার বাবা রয়েছেন চাঁদপুরে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ সূত্রে জানা গেছে, ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১ হাজার ৭৮৮টি আসনের বিপরীতে মোট অংশ নেন ৫৬ হাজার ৯৭২ জন শিক্ষার্থী। সেখানে কৃতকার্য হয়েছেন ৫ হাজার ৬২২ জন। পাসের হার ৯.৮৭ শতাংশ। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন ৯০.১৩ শতাংশ।

নিজের ছেলের সফলতা প্রসঙ্গে চাঁদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ নুয়েলের বাবা আনোয়ারুল কবির বলেন, ছেলের সফলতার খবরে ভালো লাগছে। আমি নিজেও একজন শিক্ষক। ছেলের দেশসেরা হওয়ার আনন্দ বলে বোঝাতে পারব না। আমি যেভাবে, যতটুকু চেয়েছি আমার সন্তান তার চেয়েও বেশি দিয়েছে। ফলাফল ঘোষণার পর বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন পাচ্ছি। ছেলের জন্য আমার গর্ব হচ্ছে। আমি আমার ছেলের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।

নুয়েলের মা মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নাজমুন নাহার বলেন, আমার ছেলে প্রতিদিন আট-নয় ঘণ্টা পড়াশোনা করত। ও এত বড় হয়েছে তবুও ওর বাবার পরামর্শে ওকে স্মার্টফোন দিইনি। আমার ছেলের সফলতার অন্যতম কারণ আমার কাছে এটাই মনে হচ্ছে ছেলের হাতে স্মার্টফোন না দেওয়া।

নাজমুন নাহার বলেন, ওর বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ওকে ছোট একটা মুঠোফোন দেওয়া হয়েছিল। দিনের ২৪ ঘণ্টায় তিন বেলা খাওয়ার সময়ে হয়ত ২০/২৫ মিনিট আমার স্মার্টফোন ও চালাত। এখন ছেলে স্নাতক শ্রেণিতে উঠেছে এখন ওর হাতে স্মার্টফোন দিব।

নিজের সফলতা প্রসঙ্গে নাহানুল কবির নুয়েল বলেন, আমি যতটুকু পেয়েছি, যা হয়েছে এটা আমার বাবা-মায়ের অবদান। আমার বাবা চাইতেন আমি প্রশাসনের দিকে যাই। তাই বাবার স্বপ্নের সাথে আমার স্বপ্ন মিলিয়ে বিজ্ঞান বিভাগের এস এস সি পাস করেও উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিক বিভাগে ভর্তি হই। আমার স্বপ্ন এখন আইন অনুষদে পড়াশোনা করে জেলা জজ হওয়া।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। কারণ, আমার এই স্বপ্ন আমি বাবা-মায়ের সাহায্য-সহযোগিতা বন্ধুর মতো পেয়েছি। এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে আমার মায়ের অবদান আমি ভুলতে পারব না।

সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ফরিদপুরের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসীম কুমার সাহা বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থী দেশসেরা হয়েছেন এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরব এবং আনন্দের। ফলাফল শুনে আমি ওই শিক্ষার্থীর বাবার সঙ্গে কথা বলেছি। কলেজের পক্ষ থেকে নুয়েলকে একটা সংবর্ধনা দেওয়ার কথা ভাবছি।

ওই শিক্ষার্থী এখন তার মায়ের সঙ্গে মানিকগঞ্জে অবস্থান করায় আজ তা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা দ্রুতই তাকে আমাদের কলেজে এনে সংবর্ধনা দেওয়ার ব্যবস্থা করব।