কেমন আছে পদ্মা সেতু নিয়ে গুজবে প্রাণ হারানো রেণুর পরিবার!

| আপডেট :  ২৬ জুন ২০২২, ০১:৫৯ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৬ জুন ২০২২, ০১:৫৯ অপরাহ্ণ

২০১৯ সাল। দেশজুড়ে একটি গুজব চাউর- ‘পদ্মা সেতুতে শি’শুর মাথা লাগবে।’ স’রকার প্রজ্ঞাপন কিংবা বিভিন্ন প্রচার করে সেই গুজব বন্ধের চেষ্টা করে। ততক্ষণে ছেলেধরা স’ন্দেহে একে একে পাঁচজনকে হ’’ত্যা করেছে বিক্ষু’ব্ধ জনতা। সব নি’র্মমতাকে যেন ছাপিয়ে যায় ঢাকায় তাসলিমা বেগম রেণু (৪০) নামের এক নারীকে ছেলেধরা স’ন্দেহে হ’’ত্যার ঘটনা।

২০১৯ সালের ২০ জুলাই। রাজধানীর বাড্ডার একটি স্কুলে স’ন্তানদের ভর্তি করানোর জন্য সেদিন খোঁজ-খবর নিতে বের হয়েছিল তাসলিমা বেগম রেণু। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন নারী তাকে ছেলেধরা স’ন্দেহ করে বাইরে গুজব ছড়িয়ে দেন। মুহূর্তে নানান বয়সী কয়েকশ’ নারী-পুরুষ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েন। তাদের রোষানল থেকে রক্ষা করতে রেণুকে দোতলায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়।

তারপরও রক্ষা হলো না দুই স’ন্তানের জননী রেণুর। উচ্ছৃঙ্খল লোকজন সেখানকার লো’হার গেট ভে’ঙে রেণুকে টেনে-হিঁচড়ে নিচে নামিয়ে এনে এলোপাতাড়ি লা’থি, কিল, ঘু’ষি ও লা’ঠি দিয়ে পে’টাতে থাকে। পি’টুনিতে নি’হত হন রেণু। পরে এ ঘটনায় ৫০০ জনকে আ’সামি করে মা’মলা করা হয়।

এই নি’র্মমতার দিন সাভারে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলেন তার বড় বোন নাজমুন নাহার নাজমা। রেণুর ঘটনা শুনে এলাকায় ছুটে এসে দেখতে পান সারা গায়ে র’ক্ত মাখা তার বোন। স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন নিয়ে নিজের অনুভুতি জানাতে গিয়ে এভাবে ঘটনার বিবরণ দিলেন তিনি।

তিনি জানান, গুজব ছড়িয়ে রেণুকে নিষ্ঠুরভাবে পি’টিয়ে হ’’ত্যা করা হয়েছে। প্রতি মুহূর্তে সেই ব’র্বরতার চিত্র চোখে ভেসে ওঠে। আজ পদ্মা সেতু নিয়ে উচ্ছ্বাসের এই ক্ষণে আমার বোনের কথাও মনে পড়ে। সব গুজব ছাড়িয়ে পদ্মা সেতু চালু হয়েছে শুনে ভালো লাগছে বলে জানান তিনি।

নাজমুন নাহার হ’’ত্যাকাণ্ডে অ’ভিযুক্তদের সর্বচ্চ শা’স্তি দাবি করে বলেন, ইতোমধ্যে মা’মলার অ’ভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। বিচার শুরু হয়েছে। বোনের হ’’ত্যায় জ’ড়িতদের সর্বোচ্চ শা’স্তি চাই। এতে কাউকে আর এমন নি’র্মম গণপি’টুনির শি’কার হতে হবে না।

মা’মলার বা’দী ও নি’হত তাসলিমা আক্তার রেণুর ভাগনে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু বলেন, ‘গুজব আমার খালার প্রা’ণ কেড়ে নিলেও ষ’ড়যন্ত্রকারীরা পদ্মা সেতুর নির্মাণ থামিয়ে রাখতে পারেনি। যে পদ্মা সেতুর জন্য আমার খালাকে জীবন দিতে হয়েছে, আজ সেই সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত সেতুর উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে গুজব রটনাকারী ও আমার খালার হ’’ত্যাকারীদের ফাঁ’সি দেখতে পারলে আমরা আরও খুশি হতাম। সান্ত্বনা দিতে পারতাম তার অবুঝ দুই শি’শু স’ন্তানকে।’

মেয়ের নি’র্মম মৃ’ত্যুতে আজও কাঁদছেন বৃ’দ্ধা ছবুরা খাতুন (৭৫)। মাকে খুঁজে ফিরছে দুই কোমলমতি স’ন্তান তাহসিন আল মাহির (১৩) ও তাসমিম মাহিরা তুবা (৭)। মায়ের মৃ’ত্যুর পর থেকে তুবা তার মায়ের বড় বোনের (খালা) সঙ্গে থাকে এবং তাকেই মা বলে ডাকে। এখন পড়ালেখা করছে প্রথম শ্রেণিতে। অন্যদিকে মাহিরকে ভর্তি করা হয়েছে মাইলস্টোন স্কুলে। সেখানে হোস্টেলে রেখে চলছে তার পড়াশোনা। উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু নির্মাণে শি’শুদের মাথা প্রয়োজন, এই গুজবে ২০১৯ সালে ছেলেধরা স’ন্দেহে সারাদেশে ২১টি গণপি’টুনির ঘটনায় পাঁচজনের মৃ’ত্যু হয়।