ছেলের প্রেমিকাকে বউ সাজিয়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে র’ক্তাক্ত করলো আ.লীগ নেতা

| আপডেট :  ২৩ জুন ২০২২, ০৮:০৫ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৩ জুন ২০২২, ০৮:০৫ পূর্বাহ্ণ

বউ সাজিয়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে বাড়িতে নিয়েও স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়নি মাহমুদা আক্তার প্রিয়া (২১) নামে এক কলেজ ছাত্রীকে। উল্টো প্রেমিকের বাবা রাজবাড়ী সদর উপজে’লা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি মুলঘর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ওহিদুজ্জামান নিজে নি’র্যাতন করে র’ক্তাক্ত অবস্থায় বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন তাকে। আ’হত অবস্থায় ওই কলেজছাত্রীকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার রাতে রাজবাড়ী সদর উপজে’লার মূলঘর ইউনিয়নে এড়েন্দা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আ’হত কলেজছাত্রী মাহমুদা আক্তার প্রিয়া ফরিদপুর জে’লার ভাঙ্গা উপজে’লার আজিমনগর ইউনিয়নের ব্রাক্ষ্মণদিয়া গ্রামের কালাম মাতুব্বরের মেয়ে। তিনি শিবচরের ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী।

মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের বেডে শুয়ে মাহমুদা আক্তার প্রিয়া জানান, তার মামার বাড়ি রাজবাড়ীতে। মামার বাড়িতে আসা-যাওয়ার মধ্য দিয়ে মূলঘর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ ওয়াহিদুজ্জামানের ছেলে হিমেলের সঙ্গে গত পাঁচ বছর আগে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

এ সম্পর্কের জেরে সোমবার দুপুরে হিমেল তাকে বিয়ে করবে বলে তার বাড়ির সামনে থেকে প্রাইভেটকার যোগে ফরিদপুর নিয়ে আসেন। সঙ্গে তার ছোট বোন রিয়াও আসে। এরপর ফরিদপুর থেকে তারা খাওয়া দাওয়া করে বিকালে হিমেল তাদেরকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন।

প্রিয়া আরও জানান, এর আগে হিমেল তার বিকাশ নম্বরে দুই হাজার টাকা পাঠিয়ে দিয়ে তাকে বিয়ের শাড়ি কিনতে বলেন। হিমেলের কথামতো তিনি বিয়ের শাড়ি কেনেন এবং তার সঙ্গে আসার আগে সেটি পরেও আসেন। হিমেলের বাড়িতে আসার পর হিমেল তাদের দুই বোনকে বাড়িতে রেখে পা’লিয়ে যান।

এরপর হিমেলের বাবা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ওয়াহিদুজ্জামান ও তার স্ত্রী তাদের দুই বোনকে ঘরে নিয়ে যান। সেখানে শেখ ওয়াহিদুজ্জামান ও তার স্ত্রী তাকে শা’রীরিক নি’র্যাতন করে রাতে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। এই ঘটনার পর সে ৯৯৯ এ ফোন করলে পুলিশ তাদেরকে রাজবাড়ী থানায় গিয়ে অ’ভিযোগ করতে বলেন। এরপর তিনি তার ছোটবোনকে নিয়ে মামাদের সহযোগিতায় থানায় এসে বিস্তারিত জানান। পরে আ’হত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

প্রিয়ার ছোট বোন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার রিয়া জানায়, তার বড় বোন প্রিয়াকে যখন মা’রপিট করা হচ্ছিলো তখন সে তাকে রক্ষা করতে যায়। এসময় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ওয়াহিদুজ্জামান তাকেও মা’রপিট করেন। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চায় রিয়া।

প্রিয়ার মা শাফিয়া বেগম জানান, প্রিয়ার সঙ্গে হিমেলের পাঁচ বছরের প্রেম ছিল। এর মধ্যে হিমেল বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার মেয়ের সঙ্গে শা’রীরিক সম্পর্কও করেছে। বি’ষয়টি তার মেয়ে তাকে বলেছে। সোমবার (২০ জুন) হিমেল প্রিয়াকে বিয়ে করবে বলে হিমেলদের বাড়িতে নিয়ে আসে। কিন্তু হিমেলের বাবা প্রিয়াকে মা’রপিট করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। এই ঘটনায় থানায় মা’মলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ ব্রাদার আব্দুল্লাহ্ আল মামুন জানান, প্রিয়ার নাক-মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আ’ঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রেখে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এই বি’ষয়ে কথা বলতে মোবাইলে হিমেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রিয়ার সঙ্গে আমার ফেসবুকে কথাবার্তা হতো। এর বাইরে তার সঙ্গে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই। সে আমার ঠিকানা যোগাড় করে সোমবার বিকালে বাড়িতে এসে ওঠে। এরপর সে আমাকে বিয়ের জন্য চা’প দেয়। যে কারণে আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে কালুখালীতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে এসেছি। এখন বিয়ে করার জন্য প্রিয়া আমাকে ব্লাকমেইল করছে।

আপনার বাবা ঘরে আ’টকে রেখে প্রিয়াকে মা’রধর করেছে বলে প্রিয়া ও তার ছোট বোন রিয়া অ’ভিযোগ করেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে হিমেল বলেন, এসব ষ’ড়যন্ত্র। ষ’ড়যন্ত্র করে আমাকে ও আমার বাবাকে ফাঁ’সানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ওয়াহিদুজ্জামানের মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তিনি জানান, এসব মি’থ্যা। তার বি’রুদ্ধে কিছু কুচ’ক্রী মহল ষ’ড়যন্ত্র করে এ সব করে।

রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্ম’দ শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বি’ষয়টি আমি শুনেছি। মা’মলা হয়েছে। ত’দন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।