সব
ঐতিহ্যের মাঝেই তার ভালোবাসা। যখন নিজের শিল্পগুণকে কাজে লাগিয়ে দারুণ কিছু সৃষ্টির অনুশীলন করছিলেন, তখন তাকে এ শিল্পের প্রতি অনেকেই নিরুৎসাহিত করত। ৪৫ বছর বয়সী সৌদি নারী মাসুমা সালেহ আল হামদানের কথা বলছি। যিনি খেজুরপাতার ফুল ও শো-পিস তৈরি করে শিল্পবিপ্লবের সূচনা করেছেন।
২০১৯ সালের জুলাইয়ে সৌদি আরবের উত্তরাঞ্চলীয় শহর সাফওয়ায় সর্বপ্রথম সালেহ আল হামদানের শিল্পকর্মের একক প্রদর্শনী হয়। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো মানুষের সামনে হামদানের ৩০টি শিল্পকর্ম উপস্থাপিত হয়েছে। তার মধ্যে সব’চে আকর্ষণীয় এবং হৃদয়গ্রহী হলো খেজুরপাতা দিয়ে বানানো বাহারিরকম গোলাপফুল ও ফুলেরতোড়া।
সামান্য কিছু থেকেও যে দারুণ কিছু সৃষ্টি করা সম্ভব-পুরো বিশ্বকে সেটাই দেখিয়েছেন সংগ্রামী এই সৌদি নারী শিল্পী। তিনি গোলাপফুল ছাড়াও খেজুরপাতা দিয়ে আরো কিছু সৌখিন সামগ্রী তৈরি করেছেন। আয়োজিত এ প্রদর্শনীতে মাসুমা সালেহ আল হামদানের হাতে তৈরি এসব শিল্পকর্ম ব্যাপক প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়।
সালেহ আল হামদান পনেরো বছর আগ থেকেই খেজুর পাতার দিয়ে হস্তশিল্পের কাজ করে আসছিলেন। সেসবের মধ্যে চাটাই ও মাদুর অন্যতম। তবে তা তৈরি করে দীর্ঘ সাত-আট বছরেও সালেহ আল হামদান তেমন সফলতা পাচ্ছিলেন না। সবশেষ ধৈর্য ও বুদ্ধির জোরে তার শিল্পকর্মে নতুন নতুন কিছু যুক্ত হয়েছে। যা মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আর সালেহ আল হামদান হয়েছেন স্বাবলম্বী এবং বিখ্যাত।
নতুন চোখধাঁধানো পণ্যগুলোর মধ্যে বিভিন্ন রকম গোলাপফুল এবং গোলাপের তোড়া, কারুকার্যময় বাহারিরকম হ্যান্ডব্যাগ ও মূল্যবান কথামালা লিখে সাজানো খেজুরপাতার তৈরি পাটি ইত্যাদি পণ্য রয়েছে।
নিজের অসামান্য এই শিল্পকর্ম সম্পর্কে সালেহ আল হামদান বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ঐতিহ্যের প্রতি আমি আলাদা টান অনুভব করতাম। খেজুর এবং খেজুরপাতা আমাদের ঐতিহ্যের বিরাট একটি অংশ। আমি ঘর থেকে এবং নারীত্ব রক্ষা করে খেজুরপাতা দিয়ে দারুণ কিছু সৃষ্টি করব বলে ইচ্ছে করেছিলাম।’
‘কিন্তু মায়ের কাছ থেকে শেখা এই শিল্পকে ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারছিলাম না এবং সফলতাও আসছিল না। কিন্তু আমি আমি হাল না ছাড়িনি। একবার ইন্টারনেট ঘেটে ঘেটে নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখলাম। মূলত, সেখান থেকেই গোলাপফুল এবং ব্যাগ বানানোর আইডিয়া পেয়ে যাই।’ বলছিলেন তিনি।
তিনি যোগ করেন, ‘পরবর্তীতে বিগত সাত বছরে আমার নিজের বুদ্ধি, ধৈর্য এবং আইডিয়ার সমন্বয়ে একটি সফলতার গল্প তৈরি হয়েছে। তাছাড়া আমি স্বাবলম্বীও হয়েছি। বিশেষত, নারীত্বের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রয়েছে এবং একই সঙ্গে একজন সাধারণ সৌদি নারী থেকে বিখ্যাত শিল্পী সালেহ আল হামদান হতে পেরেছি।’ সূত্র: আল-আরাবিয়া