স্কুলছাত্রকে মাটিতে ফে’লে পি’টিয়ে বাবাকে পুলিশে দিলেন কৃষি কর্মকর্তা

| আপডেট :  ২২ জুন ২০২২, ১০:১০ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২২ জুন ২০২২, ১০:১০ অপরাহ্ণ

নীলফামারীর ডোমার উপজে’লায় সিয়াম আহমেদ (১২) নামে এক স্কুলছাত্রকে মাটিতে ফে’লে বুকে লা’থি মা’রা এবং বে’ধড়ক মা’রধরের অ’ভিযোগ উঠেছে উপজে’লা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামানের বি’রুদ্ধে। স্থানীয়রা ওই শি’শুকে উ’দ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।মা’রধরের শি’কার সিয়াম আদর্শ স’রকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও ছোটরাউতা ডাঙ্গাপাড়া এলাকার মোফাজ্জল হোসেন মোফার ছেলে।

সোমবার (২০ জুন) বিকেলে ছেলেকে মা’রধরের কারণ জানতে উপজে’লা পরিষদে কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান মোফজ্জল হোসেন। সেখানে কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে তার বা’গবি’ত’ণ্ডা হয়। পরদিন মঙ্গলবার (২১ জুন) কৃষি কর্মকর্তা সিয়ামের বাবাসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে স’রকারি কাজে বা’ধা ও অফিস ভা’ঙচুরে অ’ভিযোগে মা’মলা করেন। পরে পুলিশ স্কুলছাত্রের বাবাসহ দুজনকে গ্রে’প্তার করে আ’দালতের মাধ্যমে কা’রাগারে পাঠায়।

ভু’ক্তভোগী স্কুলছাত্রের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, উপজে’লা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামানের ছেলে উপজে’লা আদর্শ স’রকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র রাহাদ আহমেদ মৃন্ময়ের সাথে একই বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র সিয়াম আহমেদের খেলার মাঠে সাইকেল চা’লানোকে কেন্দ্র করে ঝ’গড়া বাধে। ঝ’গড়ার এক পর্যায়ে দুইজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বি’ষয়টি মৃন্ময়ের মা উপজে’লা কৃষি কর্মকর্তার স্ত্রী দেখতে পেয়ে মাঠে গিয়ে স্কুলছাত্র সিয়ামকে মা’রধর করে টেনেহিঁচড়ে তাদের কোয়ার্টারের দিকে নিয়ে যায়।

একপর্যায়ে তিনি তার স্বামীকে ফোন করে অবগত করলে কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামান অফিস থেকে বেরিয়ে এসে উত্তেজিত হয়ে তাদের কোয়ার্টারের সামনে এসে সিয়ামকে মা’রধর শুরু করেন। তিনি তার বুকে লা’থি মা’রতে থাকেন। এ সময় মাঠে থাকা শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এসে কারণ জানতে চাইলে ওই কৃষি কর্মকর্তা তাদেরও মা’রধর করেন। পরে স্থানীয়রা সিয়ামকে উ’দ্ধার করে ডোমার উপজে’লা স্বা’স্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।

ওইদিন সন্ধ্যায় সিয়ামের বাবা মোফাজ্জল হোসেন মাঠে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে নিয়ে উপজে’লা পরিষদে কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান এবং কৃষি কর্মকর্তার কাছে ছেলেকে মা’রধরের কারণ জানতে চান। এসময় উভ’য়ে তর্ক-বির্তকে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে সেখানে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশ এ সময় সিয়ামের বাবা মোফাকে আ’টক করে। পরে রাতেই কৃষি কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান বা’দী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং কয়েকজনকে অ’জ্ঞাত করে স’রকারি কাজে বা’ধা, অফিসে ঢুকে কর্মকর্তাকে লা’ঞ্চিত করার অ’ভিযোগে থানায় মা’মলা করেন।

ভু’ক্তভোগী স্কুলছাত্রের মা স্বপ্না আক্তার বলেন, আমার ছেলে সিয়াম দীর্ঘদিন থেকে অ’সুস্থ। তার খাদ্যনালি চিকন হয়ে গেছে। ৫ম শ্রেণিতে পড়লেও অ’সুস্থ থাকার কারণে তাকে খাৎনা (মু’সলমানি) দেওয়া যায়নি। অপারেশনের জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। আমার ছেলে ভু’ল করলে তিনি আমাকে জানাতে পারতেন। আমি তাকে শাসন করতাম। কিন্তু তিনি এসে আমার অ’সুস্থ ছেলের বুকে লা’থি মারলেন।

তিনি বলেন, একজন দায়িত্বশীল অফিসার হয়ে এমন জঘন্য কাজ কীভাবে করেন তিনি? আবার উল্টো তিনি আমার স্বামীসহ এলাকার লোকজনের নামে মি’থ্যা মা’মলা দিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী মুন্না ইসলাম নামে একজন জানান, আমি অফিসার স্যারের কাছে সিয়ামকে কেন মারছেন জানতে চাইলে তিনি আমার কলার চে’পে ধরে উপজে’লায় কোনো ডাঙ্গাপাড়ার লোক আসতে পারবে না বলে হু’মকি দেন।

ডোমার উপজে’লা স্বা’স্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডা. নাহিদা বলেন, শি’শুটির গায়ে ও বুকে আ’ঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ভুক্তভোগী স্কুলছাত্র সিয়াম বলে, আমি বিকেলে সাইকেল নিয়ে মাঠে গেলে আমাকে দেখে মৃন্ময় (১১) বলে ‘যারা সাইকেল চা’লায় তারা মেথর। তাদেরকে কেউ দেখতে পারে না।‘ তখন আমি বললাম আমি তো সাইকেল চালাই, তাই বলে আমি কি মেথর? এরপর সে আমাকে মা’রধর করে, আমিও তাকে মারি। পরে আন্টি এসে আমাকে মা’রতে মা’রতে তাদের বাসার সামনে নিয়ে যান।

আন্টি আঙ্কেলকে ফোন দিয়ে ডেকে আনেন। তিনি এসে আমাকে মা’রেন এবং মাটিতে ফে’লে আমাকে বুকের ও’পরে পা তুলে দেন। আমি
আঙ্কেলকে হাতজোড় করে বলি, আঙ্কেল আমার ভু’ল হয়ে গেছে আমাকে মাফ করে দেন। কিন্তু উনি মা’রতেই থাকেন।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ডোমার উপজে’লা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। জে’লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বি’ষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তাছাড়া এটি ডোমার উপজে’লা পরিষদের বি’ষয়। তারা বসে হয়তো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

উপজে’লা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রমিজ আলম বলেন, স্কুলছাত্র সিয়ামকে মা’রধরের বি’ষয়টি জানা নেই। সোমবার সন্ধ্যায় উপজে’লা অফিসে এসে কিছু লোক হা’মলা করে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মা’মলার বি’ষয়টি নিশ্চিত করে ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রে’প্তার করে আ’দালতের মাধ্যমে কা’রাগারে পাঠানো হয়েছে।