স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকেন ভারতে, নয় বছর ধরে বেতন নেন দেশ থেকে

| আপডেট :  ২১ জুন ২০২২, ০৬:১৪ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২১ জুন ২০২২, ০৬:১৪ অপরাহ্ণ

বিগত নয় বছর ধরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে। অথচ মাস শেষে তার স্বজনরা অগ্রিম সই করে রাখা চেক বইয়ের চেক দিয়ে বেতন তুলে নিতেন দেশ থেকে।কয়েক মাস পর পর তিন/চার দিনের জন্য দেশে এসে সই করে যেতেন কাগজপত্র। কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন মর্মে মাসিক রিপোর্টও জমা থাকত নিয়মিত।

অর্থের বিনিময়ে হাতিয়া উপজে’লা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে ম্যানেজ করে গত নয় বছর ধরে এমন দু’র্নীতির আশ্রয় নিয়ে স’রকারি বেতন-ভাতা ও বাড়তি নানান সুবিধা নিয়ে আসছিলেন নোয়াখালীর দ্বীপ উপজে’লা হাতিয়ার চরঈশ্বর ইউনিয়নের চরঈশ্বর রায় স’রকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রিংকু মজুম’দার।

স্কুলটিতে বর্তমানে চারজন সহকারী শিক্ষক রয়েছেন এবং শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৫০। এত বড় অনিয়ম নিয়ে এলাকাবাসী ফুঁসে ওঠায় গত ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে তার বেতন বন্ধ হয়ে যায়।রিংকু মজুম’দার উপজে’লার উত্তর চরঈশ্বর (দাসপাড়া) এলাকার সাবেক সহকারী শিক্ষক বারেন্দ্র দাসের স্ত্রী। রিংকু স্বামী-স’ন্তান নিয়ে গত নয় বছর ধরে ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন বলে জানা যায়।

স্থানীয় একাধিক সূত্র এবং বিদ্যালয়ের অভিভাবক চয়ন দাস, শোভা রানী, মল্লিকা দাস, নিশান বাবু, পাপন দাস ও অসীম দাসসহ অনেকে জানান, গত আট/নয় বছর ধরে প্রধান শিক্ষিকা রিংকু মজুম’দার ভারতে থাকেন। কয়েক মাসের বেতন ব্যাংকে জমা হলে বেতন তোলার সময় তিনি দেশে আসেন।

মাঝে মধ্যে তার আত্মীয়রা চেক দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে নেন। তার এ অনিয়মের ব্যাপারে হাতিয়া উপজে’লা শিক্ষা অফিসে জানালেও কোনো কাজ হয়নি। কারণ ওই সময়ের শিক্ষা কর্মকর্তা ভবরঞ্জন বাবু সম্পর্কে রিংকু মজুম’দারের ভগ্নিপতি। তার ছত্রছায়ায় প্রধান শিক্ষক রিংকু মজুম’দার এ দু’র্নীতি ও অনিয়ম করে আসছিলেন।

তারা আরও জানান, রিংকু মজুম’দার সম্ভবত আর চাকরি করবেন না, তবে এতো বছর ধরে তিনি যে অন্যায়-অনিয়ম করেছেন, এর কোনো শা’স্তি হয়নি এবং তার ভগ্নিপতি শিক্ষা কর্মকর্তা ভবরঞ্জন বাবুরও কোনো বিচার হয়নি। অ’ভিযোগ অস্বীকার করে হাতিয়া উপজে’লার সাবেক শিক্ষা অফিসার ভবরঞ্জন বাবু জানান, আমি অনিয়ম করার এতো সুযোগ দেইনি।

এদিকে চরঈশ্বর রায় স’রকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা রূপ কুমার দাস জানান, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ১ মাসের মেডিক্যাল ছুটিতে যান প্রধান শিক্ষক রিংকু মজুম’দার। কিন্তু আজ পর্যন্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে দেশে আসেননি। প্রধান শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয় পরিচালনা, স্লিপের টাকা, উপবৃত্তি, কন্টিজেন্সিসহ বিভিন্ন কাজ আ’টকে আছে। আট-নয় বছর ধরে এমন অনিয়ম চলছে। ক’রোনার আগের বছরগুলোতেও তিনি এক মাস, দুই মাস অথবা তিন মাস ভারতে থেকে তিন/চারদিন স্কুল করে জমে থাকা কাগজপত্রে সই দিয়ে আবার ভারত চলে যেতেন।

স্কুল সভাপতি রণলাল দাস বলেন, প্রধান শিক্ষক রিংকু মজুম’দারের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ। অ’ভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি।এ অনিয়ম ও দু’র্নীতির ব্যাপারে ওই ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, প্রধান শিক্ষক রিংকু মজুম’দার গত ডিসেম্বরে এক মাসের মেডিক্যাল লিভ নিয়ে আর বিদ্যালয়ে না ফেরায় আমি রিপোর্ট দিয়েছি। বর্তমানে তার বেতন বন্ধ রয়েছে। এর আগের বি’ষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।

নোয়াখালী জে’লা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম জানান, প্রধান শিক্ষিকা রিংকু মজুম’দার অনিয়ম দু’র্নীতির আশ্রয় নিয়ে দেশে ও কর্মস্থলে না থেকে বেতন ভাতা নেওয়ার অ’ভিযোগ পেয়েছি। উপজে’লা শিক্ষা অফিস কেনো এ অনিয়মকে এতোদিন ধা’মাচা’পা দিয়ে রেখেছে, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিস্তারিত জানার পর এ বি’ষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্রঃ বাংলা নিউজ