বাংলাদেশ ব্যাংকে আগুন, এসব কিসের আলামত?

| আপডেট :  ২০ জুন ২০২২, ১১:২৭ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২০ জুন ২০২২, ১১:২৭ অপরাহ্ণ

দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংক। স্পর্শকাতর এই প্রতিষ্ঠানে বেশ কয়েকবার অ’গ্নিকাণ্ডেের ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার বিকালেও ব্যাংকটির চতুর্থ তলার (উত্তর-পূর্ব পাশে অবস্থিত) চিকিৎসা কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় স্টোররুমে আ’গুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিটের প্রায় আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আ’গুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ওই চিকিৎসা কেন্দ্রে চারটি ফ্রিজ, বিপুল পরিমাণ ও’ষুধ ছিল। আ’গুনে কী পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষ’তি হয়েছে তা জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। আ’গুনের সূত্রপাত কোথা থেকে হয়েছে, তাও জানা যায়নি।

গত ৪ জুন রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনারে ভ’য়াবহ আ’গুনের ঘটনা ঘটে। এতে ১৫ থেকে ২০টি কন্টেইনারে বি’স্ফোরণ ঘটে। সেসময় প্রতিটি কন্টেইনার একেকটি শক্তিশালী বো’মায় পরিণত হয়। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃ’ত্যু হয়েছে। আ’হত হয়েছেন দুই শতাধিক ব্যক্তি।

এ ঘটনার সাত দিন পর গত ১১ জুন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ঢাকা থেকে সিলেটগামী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের পাওয়ার কার বগিতে আ’গুন লাগে। ২ ঘণ্টার চেষ্টায় আ’গুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এর আগের দিন রাজধানীর প্রগতি সরণিতে তুরাগ পরিবহণের একটি বাসে অ’গ্নিকাণ্ডে ঘটে। এতে বাসটি সম্পূর্ণ পু’ড়ে যায়।

এ ছাড়া ১১ জুন ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজে’লার শিমুলিয়া ঘাট থেকে যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে যাওয়ার সময় ফেরিতে আ’গুন লাগে। রোকেয়া নামে ফেরিটি শরীয়তপুরের মাঝিকান্দি ঘাটের দিকে যাচ্ছিল।এর আগে ৫ জুন পাবনার বেড়ায় কিউলিন ইন্ডাস্ট্রি নামে একটি পাটকাঠির কারখানায় আ’গুনের ঘটনা ঘটে। এক দিন পর ৭ জুন রাজধানীর মোহাম্ম’দপুরের বসিলায় একটি জুতার কারখানায় অ’গ্নিকাণ্ডে সংঘটিত হয়।

পরের দিন (৮ জুন) ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানার মালুম মসজিদ এলাকার জুতার কারখানায় আ’গুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট আ’গুন নেভাতে কাজ করে। ৯ জুন রাজধানীর পোস্তগোলায় একটি চিপস কারখানায় লাগা আ’গুন ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে।

এসব আ’গুনের ঘটনার সব কটিই ঘটেছে হয় কারখানায়, নয়তো যানবাহনে। বাস থেকে শুরু করে বাদ যায়নি ট্রেন ও ফেরি। প্রশ্ন উঠছে— একের পর এক এসব অ’গ্নিকাণ্ডে কি কেবলই অবহেলাজনিত দু’র্ঘটনা, নাকি এতে না’শকতার যোগসূত্র রয়েছে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ঘটনা তুচ্ছ করে দেখার সুযোগ নেই। না’শকতার স’ন্দেহ প্রকাশ করছেন তারা। এগুলো নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দক্ষ’তার পরিচয় দিতে হবে। না’শকতা আলামত পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে।

আর পুলিশ বলছে, এ ধরনের ঘটনার বি’ষয়ে তাদের কড়া নজরদারি রয়েছে। গো’য়েন্দারা মাঠে কাজ করছে। অ’পরাধী যেই হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

সাম্প্রতিক এসব ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও না’শকতার আ’শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। গত ১৫ জুন এসএসএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান ঘিরে না’শকতার পরিকল্পনার তথ্য রয়েছে স’রকারের কাছে। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

স’রকার-প্রধান বলেন, ‘২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান যেন করতে না পারি, সেজন্য একটা না’শকতা ঘটানোর চেষ্টা চলছে। আমরা তথ্য পেয়েছি যারা পদ্মা সেতু নির্মাণের বি’রোধিতা করেছিল, তারাই এ ধরনের না’শকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটানোর চেষ্টা করছে। তারা কী করবে তা জানি না। তবে এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে নজর রাখতে হবে।’

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক ঢাকা’টাইমসকে বলেন, ‘সম্প্রতি যেসব অ’গ্নিকাণ্ডেের ঘটনা ঘটেছে এতে গো’য়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশি করে সতর্ক থাকা উচিত। আর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জো’রদার প্রয়োজন। অগ্নিনির্বাপণে কোনো ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করা উচিত। সবাইকে চোখ, কান খোলা রাখতে হবে।’

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সবগুলো ঘটনায় পুলিশের নজরদারি ও গো’য়েন্দা নজরদারি সার্বক্ষণিক রয়েছে বলে জানান সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি, মিডিয়া) মো. কামরুজ্জামান। ঢাকা’টাইমসকে তিনি বলেন, এসব ঘটনা ত’দন্তকালে যদি অন্য কোনো বি’ষয় বেরিয়ে আসে বা অশুভ চ’ক্রের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স’রকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বা ২৫ জুন বড় অনুষ্ঠান (পদ্মা সেতুর উদ্বোধন) ঘিরে কোনো কুচ’ক্রিমহল যাতে কিছু করতে না পারে সেজন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে।’

একের পর এক আ’গুন লাগার ঘটনা নেহাত দু’র্ঘটনা নয় বলে মনে করেন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি নিশ্চিত এসব ঘটনায় না’শকতা আছে। এর পেছনে ষ’ড়যন্ত্র কাজ করছে।

বিচারপতি শামসুদ্দিন ঢাকা’টাইমসকে বলেন, `আমরা তো জানি, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনটা অনেকে ভালো চোখে দেখছে না। তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে উদ্বোধন না হয়। সীতাকুণ্ডের ঘটনা অনেকটা ষ’ড়যন্ত্রের ফল বলে মনে করা হচ্ছে। এটা বিক্ষি’প্ত ঘটনা না, বৃহৎ ষ’ড়যন্ত্রের অংশ। সবাই জানে পদ্মাসেতু খুললে বাংলাদেশের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে। এটা বি’রোধীরা সহ্য করতে পারছে না।’ এসব ঘটনায় অবশ্যই ত’দন্তের প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

ফায়ার সার্ভিসের সাবেক পরিচালক মেজর (অব.) এ কে এম শাকিল নেওয়াজ ঢাকা’টাইমসকে বলেন, ‘দেশে আ’গুন তিনভাবে লেগে থাকে। একটি ন্যাচারাল বা বজ্রপাতে। অপরগুলো হলো- নেগলেন্সি বা অসাবধানতা এবং শ’ত্রুতাবশত।

সম্প্রতি যেসব আ’গুনের ঘটনা ঘটেছে এসব বি’ষয় যারা অভিজ্ঞ তাদের নিয়ে ত’দন্ত করার তাগিদ দিয়ে এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ‘তাহলে বেরিয়ে আসবে কে কোন মোটিভ নিয়ে এই ধরনের কাজ করছে।’ সূত্রঃ ঢাকাটাইমস