আশ্রয়কেন্দ্রে ক্ষুধার্ত বন্যার্তদের আর্তি, চিড়া আর মুড়ি খেয়ে ৪ দিন

| আপডেট :  ২০ জুন ২০২২, ০১:৫৯ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২০ জুন ২০২২, ০১:৫৯ অপরাহ্ণ

বাংলা একাত্তর ডেস্কঃ সিলেটসহ দেশের বহু স্থানে চলমান বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কঠিন বিপদের মধ্যে জীবন যাপন করছে সেসব অঞ্চলের পানিবন্দি অসংখ্য মানুষ। পানির মধ্যেই বসবাস করতে হচ্ছে তাদের। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন অনেক পরিবার। দিনে দিনে যেন ভয়াবহ রুপের দিকেই এগোচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি। আজকের এই প্রতিবেদনে আশ্রয়কেন্দ্রে ক্ষুধার্ত নারীর আর্তি বিস্তারিত জানানো হবে।

‘রবিবার রাত সাড়ে ১১টা। স্পট সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ। এখানে আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা কবলিত ২৫/৩০টি পরিবার। সারাদিন খাবার ও ত্রাণের জন্য ছোটাছুটি করা মানুষগুলো তখন বিছানায় । কিন্তু রাতে ইউনিয়ন পরিষদের নিচে গাড়ি থামার শব্দ শুনে সবাই জেগে উঠে। কয়েক মিনিটের ভেতরে পরিষদের বিভিন্ন তলা থেকে নেমে সবাই গাড়ির কাছে আসে। তারপর অসহায়ের মতো খাবার চাওয়া শুরু করে বানভাসি অভুক্ত মানুষগুলো। কার আগে কে কাছে আসবে সেই যুদ্ধ শুরু হয়।’

এদিকে মানবজমিন পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে “আশ্রয়কেন্দ্রে ক্ষুধার্ত নারীর আর্তি- ‘চিড়া আর মুড়ি খেয়ে ৪ দিন পার করেছি’” এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি করেছেন সাংবাদিক শুভ্র দেব।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘তারপর অসহায়ের মতো খাবার চাওয়া শুরু করে বানভাসি অভুক্ত মানুষগুলো। কার আগে কে কাছে আসবে সেই যুদ্ধ শুরু হয়। এদের ভিড় থেকে আনুমানিক ৮ বছর বয়সী এক শিশু বলে- স্যার খাবার দেন, আর পারছি না। কিন্তু একজন সংবাদকর্মী হিসাবে তাদের কাছে খাবার নিয়ে নয় বরং তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরার জন্য গিয়েছি এটা বলার সাহস মিলেনি।’

“ক্ষুধার্ত মানুষগুলোকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষাও ছিল না। খাবারের জন্য হাহাকার করা ৫০ বছর বয়সী এক নারী বলেন, চিড়া আর মুড়ি খেয়ে ৪ দিন পার করেছি। এখন চিড়া মুড়িও নাই। এই কদিনে একটু ভাতের দেখা পাইনি। পারলে একটু ভাতের ব্যবস্থা করেন। অপারগতা প্রকাশ ও পরিস্থিতি সামাল দিতে তখন আলাদাভাবে তাদের কষ্টের কথা শুনতে চাইলাম। পকেট থেকে নোট প্যাড আর কলম বের করতেই পরিস্থিতি আবার পাল্টে গেল।”

“এখন কে কার আগে খাবারের জন্য নাম লেখাবে তার প্রতিযোগিতা শুরু হলো। উপায়ন্তর না পেয়ে একে একে ৪০টির মতো নাম নোটপ্যাডে লিখতে হয়েছে। বিদায় নিয়ে আসার সময় পেছন থেকে একজন বলে, স্যার আমার কমলা নামটা লিখছেনতো? আর কালকে কি আমরা খাবার পাবো?” ওই প্রতিবেদন থেকে।

ওই প্রতিবেদক সংবাদে জানায়, ‘কমলা বেগমের বাড়ি ইউনিয়নের রাণীগঞ্জ গ্রামে। তিন ছেলে ও দুই মেয়ের জননী কমলার স্বামী মারা গেছেন মাত্র ২ মাস আগে। দিনমজুর স্বামীর শোক তখনো কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন কিনা কে জানে। অন্যের জমিতে স্বামী ছোট এক খুপরি ঘর তৈরি করেছিলেন। সেই ঘরেই ৫ সন্তান ও স্বামী-স্ত্রী বসবাস করতেন।’

“কিন্তু বন্যার পানিতে সেই ঘর ও সকল আসবাবপত্র ভেসে গেছে। ঠাঁই হয়েছে নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদে। কমলা বলেন, ১টা পাতিলও আনতে পারি নাই। পানি বাড়তে থাকায় ছোট ছোট ৫টা সন্তান নিয়ে এখানে এসেছি। বুধবার থেকে এখানে আসার পর মানুষ কিছু চিড়া মুড়ি দিয়েছে। ৬ জন মিলে এই কদিন ধরে এগুলো খেয়েছি। এখন আর খাবার মত কিছু নাই। সাথে টাকাও নাই কিছু কেনার মত। বাজার থেকে ১টা মোমবাতি কিনতে ২০ টাকা লাগে। চিড়া ১২০ টাকা কেজি। মুড়িরও দাম বেশি। সবসময় পাওয়াও যায় না। সন্তানরা ভাত খাওয়ার জন্য পাগলপ্রায়। কিন্তু কোথা থেকে তাদেরকে ভাত দিবো।”

একই এলাকার পারভিন বেগম ওই প্রতিবেদককে জানায়, বন্যায় আমাদের ঘরবাড়ি সব ভেঙ্গে গেছে। পরিবারের ৬ জন এখানে আছি। আমাদেরকে কেউ কিছু দেয় না। শুকনা খাবার গলা দিয়ে নামে না। একি খাবার আর কত খাওয়া যায়। ইউনিয়ন পরিষদে আছি অথচ চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা তেমন কিছুই করে না আমাদের জন্য।

এই প্রতিবেদনে সেলিম মিয়া বলেন, গাড়ির শব্দ পেলে আমরা দৌড় দিয়ে যাই। মনে হয় কেউ খাবার নিয়ে এসেছে। মাঝেমধ্যে আসে তবে চিড়া মুড়ি নিয়ে। চারদিন এভাবেই পার করেছি। জানি না আর কতদিন।