পেটে খিদে নিয়েই ট্রেনে গান গেয়ে ভাইরাল মিলন

| আপডেট :  ১৮ জুন ২০২২, ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৮ জুন ২০২২, ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ

ট্রেনের (Train) কামরাই তার কাছে মঞ্চ। যাত্রীরাই তার শ্রোতা। ভোরে ট্রেনের হুইসেল বাজতেই পারফরম্যান্সের জন্য তৈরি হয়ে যান। মাইক হাতে ট্রেনের ভিড় কামরায় গান ফেরি করতে বেরিয়ে যান তিনি। কখনও হয়ে ওঠেন কেকে, কখনও কুমার শানু আবার কখনও কিশোর কুমার। চেষ্টা করেন আর্থিক অনটনকে পেছনে ফেলে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে। তবে যন্ত্রণার ছাপ নয়, মুখে হাসি নিয়েই গান গেয়ে যান পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান-১ ব্লকের নিত্যানন্দপুরের মিলন কুমার। প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পী কেকে-র গান গেয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছেন তিনি।

বাড়ি বলতে কোনওরকমে ত্রিপল আর বাঁশ দিয়ে ঘেরা একটা ঘর। যেখানে অনটন নিত্যসঙ্গী। আর তার মধ্যেই দুই সন্তান, স্ত্রী, বোন ও অসুস্থ বাবা-মাকে নিয়ে দিনযাপন করছেন তিনি। সকাল হতেই গানের সামগ্রী কাঁধে নিয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন মিলনবাবু। রওনা দেন স্টেশনের উদ্দেশে।

শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সকাল থেকেই ভিড়ে ঠাসা বর্ধমান-কাটোয়া লোকালের মধ্যে যাত্রীদের আনন্দ দিতে গেয়ে যান তিনি। তার পরিবর্তে খুশি হয়ে আর্থিক সাহায্য করেন যাত্রীরা। কেউ আবার কোনও টাকাই দেন না। তবে তাতেও কোনও ক্ষোভ নেই মিলনবাবুর। যে দিন যেমন জোটে সেদিন সেই টাকা নিয়েই বাড়ি ফেরেন। তাই দিয়েই কোনওরকমে চলে সংসার। তবে তাঁর মুখ থেকে হাসি কখনও মোছে না। শত ক্লান্তি ও আর্থিক অনটন থাকা সত্ত্বেও তাঁর মুখে সব সময় লেগে থাকে হাসি।

ছেলেবেলা থেকেই গান বড়ই প্রিয় মিলনের। কিন্তু, প্রথম থেকেই তাল কেটে দিয়েছিল আর্থিক অনটন। ফলে কারও কাছ থেকে কোনও দিনই গান শেখা সম্ভব হয়নি তাঁর। যেটুকু শিখেছেন তা বাবা রাজীব শেখের থেকেই। আর বাবার দেখানো সেই পথে হেঁটেই এখন ট্রেনে গান ‘ফেরি’ করেন তিনি।

তাঁর স্বপ্ন কোনও একদিন বড় মঞ্চে গান গাওয়ার। কুমার শানু বা উদিত নারায়ণের মতো বিখ্যাত গায়কদের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নেওয়ার স্বপ্ন তাড়া করে বেড়ায় তাঁকে। ঘুমের মধ্যেও তাঁদের সঙ্গে গানের রেওয়াজ করে চলেন। স্বপ্ন একটাই, হয়তো কোনও একটা দিন নতুন ভোর আসবে আর বড় কোনও মঞ্চে গান গাওয়ার সুযোগ পাবেন তিনি।

যদিও তাঁর এই ট্রেনের মধ্যে গান গাওয়া মোটেই পছন্দ ছিল না স্ত্রী রেজিনা শেখের। কারণ গান গেয়ে তিনি যে টাকা আয় করেন তা দিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। তাই গান ভুলে স্বামীকে অন্য কোনও কাজ করার জন্য জোর দিয়েছিলেন।

স্বামীর ওই টাকায় ছেলেদের পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়া, ডাক্তার-ওষুধ কোনও কিছুই ঠিক করে হয়ে ওঠে না। তবে স্বামীর এই গান ভাইরাল হওয়ার ফলে বেজায় খুশি তিনি। যেই ব্যক্তি এই গান সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন তাঁকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। তবে পরিবারে যতই ঝড়-ঝাপটা আসুক না কেন সব সময় হাসিমুখে তা মেটানোর চেষ্টা করেন মিলনবাবু। আর তার সঙ্গে সঙ্গে নতুন ভোরের স্বপ্ন চোখে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন গানের ‘ফেরিওয়ালা’ হয়ে! সূত্রঃ এই সময়