একটি ‘সেকেন্ড হ্যান্ড’ মোবাইল কিনে জীবনটাই ছারখার!

| আপডেট :  ১৭ জুন ২০২২, ১০:১৫ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৭ জুন ২০২২, ১০:১৫ পূর্বাহ্ণ

দেশের অন্যতম ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস বিক্রয় ডটকম থেকে মোবাইল কিনে মো. রেহান নামে এক ব্যক্তি বড় ধরনের বি’পদে পড়েছেন। এমনকি তাকে দুই মাস জে’লও খাটতে হয়েছে। ডিজিটাল এই মার্কেটপ্লেস থেকে মোবাইল কিনে বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। তার স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-

‘বিক্রয় ডটকম থেকে মোবাইল কেনার আগে হাজারবার চিন্তা করবেন। আপনি বি’পদে পড়ে টাকা, সম্মান সবকিছু খোয়াবেন। কিন্তু বিক্রয় ডটকমকে পাশে পাবেন না। বিক্র‍য় ডটকম থেকে মোবাইল কিনে চোরাই ফোনের মা’মলার আমাকে দুই মাস জে’লও খাটতে হয়েছে।

২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বরে বিক্রয় ডটকমের নারায়ণগঞ্জের চাষাড়াতে আমার বন্ধু একটি oppo A95 মোবাইলের বিজ্ঞাপন দেখে আমাকে জানায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম বক্স এবং ক্যাশমেমো আছে কিনা। বলল, সবকিছু আছে ১০ দিন ব্যবহার করা ফোনোম্যানিয়া শোরুম থেকে কেনা। সাধারণত বক্স আর মেমো থাকলে বাংলাদেশের যেকোনো দোকানদার সেই ফোন কিনে রাখে, আমিও তাই করলাম। ফোনের সাথে ফুল বক্সসহ ‘phonomania’ নামের মোহাম্ম’দপুরের একটি জনপ্রিয় মোবাইল শপের সিলসহ ক্যাশমেমো ছিল।

সবকিছু যাচাই-বাছাই করে আমি মোবাইলটা ক্রয় করি। তারপর ২২ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল জে’লার ভুয়াপুর নামক জায়গা থেকে মোবইল চু’রির অ’ভিযোগে পুলিশ আমাকে নিয়ে যায়। আমি তাদেরকে ফুল বক্সের সঙ্গে ক্যাশমেমোসহ সকল প্রমাণ দিই। এমনকি যার থেকে কিনেছি তার নাম্বারও দিই এবং মোবাইলটি যদি চু’রি হয়ে থাকে, তাহলে যে দোকানের ক্যাশমেমো সেই দোকানে অ’ভিযান চালান। তাদের ক্যাশমেমোর সিরিয়াল নাম্বার মিলিয়ে দেখেন তাহলেই সব প্রমাণ হয়ে যায়। কিন্তু পুলিশ নাছোরবান্দা, তাদের কথা- এতকিছু দেখার সময় নেই। তোমার কাছে পেয়েছি, তুমিই চু’রি করেছ।

তারপর বললাম, স্যার আমার মোবাইল ট্রেস করে দেখেন আমি জীবনে কোনোদিন টাঙ্গাইল গেছি কিনা অথবা টাঙ্গাইলের কোনো মানুষের সাথে কোনোদিন কথা বলছি কিনা? কিন্তু পুলিশ কোনো কথাই শুনল না। নারায়ণগঞ্জ থেকে রাত ১০টায় টাঙ্গাইলের উদ্দেশে পুলিশ ভ্যানে করে যাত্রা করলাম। একে তো শীতের সময়, তারমধ্যে এমন এক জায়গা তার নাম আগে শুনিনি। থানায় নিয়ে শুরু হলো আরেক কাহিনি। তাদের ওখান থেকে অর্থাৎ শোরুম থেকে নাকি ১১০ মোবাইল চু’রি হয়েছে, তারমধ্যে ৯৩টার আইএমইআই (IMEI) পাওয়া গেছে। তারমধ্যে আমার একটা। তাদের অ’ভিযোগ, সব চোরাই ফোন নাকি আমার কাছে আছে, এ বলে নি’র্যাতন শুরু করে দিল। স্বীকার না করায় তারা বলল, ১১০টি মোবাইল ফোন ফেরত দিতে, না-হয় ১৫ লাখ টাকা দিতে। তারা এই টাকা বা’দীকে দেবে। এই পুরো সময়টা বা’দী থানার মধ্যেই ছিল আর হাসছিল।

নিজের টাকা দিয়ে মোবাইল কিনে এমন একটা বি’পদে পড়ব, তা কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিনি। আমার বাড়ির কেউ জানে না এটা টাঙ্গাইলের কোথায়। আমাকে গু’ম করল, নাকি অন্যকিছু করল, কেউ জানে না। টানা দুই দিন থানার হাজতে আ’টকে রাখা হলো আর ভ’য়ভীতি দেখাল। অন্যান্য মা’মলায়ও নাম দেওয়ার ভ’য় দেখানো হয়।

এদিকে হাজতের অবস্থা এত খা’রাপ ছিল যে, সেখানে একটা কুকুরও থাকার মতো পরিবেশ নেই। টয়লেট সেখলে যে কেউ বমি করে দেবে। তারপর দুইদিন পর কোর্টে চালান দিলো। সেখান থেকে টাঙ্গাইল কা’রাগারে প্রেরণ। সে এক আজব দুনিয়া। সেখানে সব ভ’য়ঙ্কর স’ন্ত্রাসীদের দেখা যায়। সাতদিন একটা ঘরে ব’ন্দি করে রাখা হলো কোয়ারেন্টিনের নামে। এক রুমে ৭০ জন করে, এককাতে ঘুমাতে হয়, নড়াচড়ার সুযোগ নেই। তারমধ্যে খাবার দেয় মুলা আর শালগম। গরম পানিতে সিদ্ধ করা তরকারি।

মোটা চালের ভাত, যার মধ্যে পচা গন্ধ আর পোকা। আর একবেলা পাঙাশ মাছ, তারও আবার খুবই ছোট পিস। তার সাত দিন পর কোর্টে জা’মিন শুনানি হয়। সেখানে পুলিশ রি’মান্ড চায়, ম্যা’জিস্ট্রেট সাহেব জে’লগেট জি’জ্ঞাসাবাদ দেয়। অথচ, মা’মলার আইও জে’লগেটে কিছুই জিজ্ঞেস করেনি। কিন্তু আ’দালতে প্রতিবেদন দেয়, আমরা স্বীকার করেছি ৯৩টা মোবাইল আমাদের কাছে আছে। অতঃপর পুলিশ আবার রি’মান্ড চাইলে বিচারক দুদিনের রি’মান্ড মঞ্জুর করেন। একটা খু’নের মা’মলায়ও দুইবার রি’মান্ড দেয় না। কিন্তু আমাকে এই মি’থ্যা চু’রির মা’মলায় দুইবার রি’মান্ড দেওয়া হয়।

এরপর থানায় এনে সেকি অ’ত্যাচার! হাত-পা বেঁ’ধে বেধরক মা’রধর। ভাই, পুরা জীবনটাই শেষ করে দিছে। ২৩ হাজার টাকার একটা মোবাইল ১৮ হাজার টাকায় কিনে থানা-পুলিশ উকিল সবমিলিয়ে ৫ লাখ টাকা শেষ। তাও আবার দুই মাস জে’ল খাটার পর। কী আমার অ’পরাধ? দুই মাস আমার মোবাইল পুলিশের কাছে ছিল, তারা সবভাবে যাচাই করে দেখছে আমি কোনো অ’পরাধী নই, তবুও এই মা’মলা থেকে মুক্তি নেই। প্রতিমাসে নারায়ণগঞ্জ থেকে টাঙ্গাইল গিয়ে হাজিরা দিতে হয়।

এদিকে আমার ব্যবসা-দোকান সব শেষ। সবকিছু ছেড়ে দিতে হয়েছে। আজ আমি পথের ফকির, একটি মোবাইল কিনে জীবনটা নরক হয়ে গেছে। আর কীভাবে যাচাই করে আপনারা পুরাতন ফোন কিনবেন? বক্স আছে ক্যাশমেমো আছে তবুও যদি বলে সবকিছুই ফেক। তাহলে সেটা সাধারণ মানুষের পক্ষে যাচাই করার সুযোগ কোথায়? কীভাবে আপনি নিরাপদ থাকবেন, যদি একটা ফোন কিনে শুনেন আপনি মার্ডার কেসের আ’সামি? এত প্রযুক্তি আর টেকনোলজি থেকেইবা লাভ কী, যদি পুলিশ প্রকৃত আ’সামি না ধরে? যার কাছে মোবাইল পেল সেই আ’সামি? জাতির বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন।

কোনো আইনের লোক থাকলে প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন। এই বি’পদ থেকে কীভাবে মুক্তি পেতে পারি?’