বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হলো মুসলিম অ্যাক্টিভিস্ট আফরিন ফাতিমার বাড়ি

| আপডেট :  ১৩ জুন ২০২২, ০৯:৫৩ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৩ জুন ২০২২, ০৯:৫৩ অপরাহ্ণ

বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মু’সলিম জনগোষ্ঠীর হৃদয়ের স্পন্দন হযরত মুহাম্ম’দ (সো.) সম্পর্কে আপত্তির মন্তব্য ও এর প্র’তিবাদ বিশ্বজুড়ে। যে দেশের ক্ষমতাসীন দলের মুখপাত্র এমন মন্তব্য করেন, সে দেশ ভারতের নাগরিকরাও ক্ষো’ভে ফুঁসে উঠছেন বারে বারে। এর খড়্গও পড়েছে কজনের ঘাড়ে। তাদের একজন আফরিন ফাতিমা। নবীর শানে বেয়াদবি মেনে না নিয়ে প্র’তিবাদে অংশ নেন এ মু’সলিম অ্যাক্টিভিস্ট। এর প্রতিদানও পেয়েছেন। ভে’ঙে দেওয়া হয়েছে তার বাড়ি।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরায় এ খবর দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২২ বছর বয়সি ত’রুণী আফরিনের বাবা জাভেদ মোহাম্ম’দ ভারতের ওয়েলফেয়ার পার্টির নেতা। নবী মুহাম্ম’দকে (সা.) নিয়ে আ’পত্তিকর মন্তব্য করায় ঘরে বসে থাকতে পারেননি আফরিন। অংশ নেন বি’ক্ষো’ভ-প্র’তিবাদে। শুক্রবার (১০ জুন) বাবা-মেয়ের বি’রুদ্ধে বি’ক্ষো’ভে সহিং’সতার ষ’ড়যন্ত্রের অ’ভিযোগ আনা হয়। শনিবার (১১ জুন) উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদে তাদের বাড়ি খালি করতে নোটিশ দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। রোববার (১২ জুন) সকালে স’রকার পক্ষের লোকজন বুলডোজার দিয়ে বাড়িটি ভে’ঙে দিয়ে যায়।

এ ঘটনার পর সমালোচকরা বলছেন, বিজেপিশাসিত উত্তরপ্রদেশে ‘বুলডোজার রাজনীতির’ শি’কার হয়েছেন জাভেদ ও তার মেয়ে। নবী মুহাম্ম’দের বি’রুদ্ধে করা মন্তব্যের প্র’তিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে স’রকারের এমন কর্মকাণ্ড ‘প্রতিহিংসামূলক’।স্থানীয় বহু সংবাদমাধ্যম ও মিডিয়া বুলডোজার দিয়ে আফরিনের বাড়ি ভাঙার দৃশ্য রেকর্ড করেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজ শহরের কর্তৃপক্ষ আফরিন ফাতিমার বাড়িটি ভে’ঙে ফেলছে। ঘটনাস্থল ঘেরা ছিল পুলিশের দা’ঙ্গা মো’কাবিলা বাহিনী দিয়ে।

খবরে বলা হয়, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দোতলা ভবনটি ধ্বং’সস্তূপে পরিণত হয়। বাড়ির আসবাবপত্র, বই-ছবি একটি খালি প্লটে ফে’লে দেওয়া হয়। এসব কিছুর মধ্যে একটি পোস্টার সবার চোখে পড়ে, যাতে লেখা ছিল- ‘যখন অন্যায় আইনে পরিণত হয়, তখন প্রতিরোধ কর্তব্য হয়ে ওঠে। ’

চলতি মাসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) দুই সদস্যের ইসলাম বি’রোধী মন্তব্যের প্র’তিবাদে দেশটির মু’সলমানদের বি’ক্ষো’ভ শুরু করেন। কয়েকদিন পর বি’ক্ষো’ভ রূপ নেয় ধ্বং’সযজ্ঞে। নয়া দিল্লির বি’রুদ্ধে কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।

বেশ কয়েকটি মু’সলিম দেশ ভারত স’রকারকে ক্ষমা প্রার্থনার দাবি করেছে। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী স’রকার ক্ষমতা নেওয়ার পর নূপুর শর্মা ও সাবেক দিল্লি মিডিয়া সেল প্রধান নবীন কুমার জিন্দালের মন্তব্য দেশটির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বি’রুদ্ধে ডানপন্থীদের ঘৃণামূলক আচরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এদিকে, বিশ্বব্যাপী ক্ষো’ভ বেড়ে যাওয়ায় নূপুর ও জিন্দালকে দল থেকে ব’হিষ্কার করেছে বিজেপি। ধর্মীয় বি’ষয়ে দলের মুখপাত্রদের ‘অত্যন্ত সতর্ক’ হতে বলা হয়। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। বিশ্বব্যাপী ক্ষো’ভ বাড়তেই থাকে।ভারতে বি’ক্ষো’ভে হ’তাহত হন অনেকে। শুরুর দিন থেকে বি’ক্ষো’ভ অঞ্চল ভেদে বাড়তে থাকে। উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজ শহরেও, যাতে যোগ দেন আফরিন ফাতিমা।

আল জাজিরাতে আফরিন জানান, শুক্রবার শহরে বি’ক্ষো’ভের কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ তার বাড়িতে অ’ভিযান চা’লায়। এ সময় সদস্যরা তার বাবা মোহাম্ম’দ জাভেদ, মা পারভীন ফাতিমা ও ছোট বোন সুমাইয়াকে তুলে নিয়ে যায়। তাকে জানানো হয়নি পরিবারের সদস্যদের আ’টক করা হচ্ছে নাকি গ্রে’ফতার! তাকে কোনো ওয়ারেন্টও দেখানো হয়নি।

রোববার সকালে পারভীন ও তার ছোট মেয়েকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তার আগে ৩০ ঘণ্টা তারা জে’লব’ন্দী থাকেন।আল জাজিরা জানিয়েছে, মু’সলিম অ্যাকটিভস্ট ফাতিমা তাদের বাবা-মেয়ের বি’রুদ্ধে আনা অ’ভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভে’ঙে ফেলার ঘটনাটিকে বেআইনি বলেও মন্তব্য করেন।

২২ বছরের এ ত’রুণী বলেন, বাড়ি ভে’ঙে ফেলার ঘটনাটি পুরোপুরি বেআইনি। কারণ ওটা আমার বাবার ছিল না। আমার মা বাড়িটির মালিক। আমরা প্রায় ২০ বছর ধরে ভবনটিতে বসবাস করছি, করও পরিশোধ করছি। কিন্তু কখনও এলাহাবাদ কর্তৃপক্ষ আমাদের বলেনি বাড়িটি অ’বৈধ।

শুক্রবারের বি’ক্ষো’ভের পর বাবা-মেয়ের বি’রুদ্ধে সহিং’সতার ষ’ড়যন্ত্রের যে অ’ভিযোগ আনা হয়, সে প্রসঙ্গে ফাতিমা বলেন, আমরা শুক্রবার বি’ক্ষো’ভ করিনি। আমাদের কেউই এলাহাবাদের বি’ক্ষো’ভে অংশ নিইনি। যেহেতু শুক্রবার ছিল, আমরা বাড়িতে ছিলাম। নামাজ আদায় করছিলাম।জাভেদের পরিবারকে গ্রে’ফতারের ঘটনায় হয়েছে সমালোচনাও। প্রয়াগরাজ প্রশাসনের নাগরিক বি’ষয়ে কর্মরত এক ব্যক্তি সমালোচনা করে বলেন, তাদের গ্রে’ফতার করা ছিল অন্যায়।

বাড়ি ভাঙার ঘটনায় জাভেদের আইনজীবীরা এলাহাবাদ হাইকোর্টকে চ্যালেঞ্জ করেছে। সম্পত্তির ক্ষয়-ক্ষ’তির জন্য রাজ্য স’রকারের কাছে কমপক্ষে ১০ কোটি রুপি জরিমানা দাবি করেছেন।এলাহাবাদ পুলিশ তাদের কর্মকাণ্ডের ন্যায্যতা প্রমাণ করেছে। নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ফাতিমাদের বাড়ি ভাঙা হয়েছে বলে দাবি করেছে স্থানীয় পুলিশ। এক মুখপাত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, বাড়িটির কাঠামো অ’বৈধ ছিল। সেটি প্রয়াগরাজ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্ল্যান পাস না করিয়েই নির্মাণ করা হয়েছিল।সূত্র: আলজাজিরা