কাস্টমারদের গ্লাসে ঢেলে ফেন্সিডিল পরিবেশন করেন স্ত্রী, টাকা নেন ইউপি মেম্বার স্বামী

| আপডেট :  ১৩ জুন ২০২২, ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৩ জুন ২০২২, ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে ইউপি সদস্য বাদশা’র বাড়িতেই অ’বৈধ ফেন্সিডিলের আসর বসে বলে অ’ভিযোগ উঠেছে। সেই ‘বারে’ ফেন্সিডিল পরিবেশন করেন তারই স্ত্রী স্বপ্না বেগম। বাদশা মিয়া কালীগঞ্জ উপজে’লার গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য। তিনি ওই ওয়ার্ডের মালগাড়া গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয়রা জানান, ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম মালগাড়া চোরাচালানের আখড়া। সব থেকে বেশি পা’চার হচ্ছে মা’দক। বিভিন্ন ধরনের মা’দকের মধ্যে স্থানীয় মা’দকসেবীদের কাছে বেশি পছন্দ ফেন্সিডিল।

সী’মান্তের নিকটবর্তী হওয়ায় দীর্ঘ দিন ধরে এ ব্যবসায় জ’ড়িত বাদশা মিয়া। ব্যবসা ঠিক রাখতে এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে গোড়ল ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। জনপ্রতিনিধির লেবাসে চলছে মা’দক ব্যবসা। খুচরা-পাইকারি দুই রকম ব্যবসাই রয়েছে তার। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বড় চালান পা’চার করে সোজা বাদশার বাড়িতে পাঠান। সেখান থেকে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের হাতেও চলে যায় এসব মা’দক। দীর্ঘদিন এ ব্যবসার সঙ্গে জ’ড়িত থাকায় স্থানীয় প্রশাসনকেও হাত করে ফে’লেছেন বাদশা মিয়া। তাই মা’দক বিক্রেতা ও পরিবহনকারীরা প্রায় দিন প্রশাসনের হাতে আ’টক হলেও বড় ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া রয়েছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। অ’বৈধ কোনো সুবিধার বিনিময়ে স্থানীয় প্রশাসন বি’ষয়টি জেনেও না জানার ভান করছে বলে স্থানীয়দের অ’ভিযোগ।

চাহিদা বিবেচনায় স্থানীয় মা’দকসেবীদের জন্য নিজ বাড়িতেই ফেন্সিডিলের বার খুলেছেন ইউপি সদস্য বাদশা মিয়া। তার বিশাল বাড়ির বারান্দায় বসার ও বিশ্রামের ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রতিনিয়ত মা’দকসেবীরা তার বাড়িতেই ভিড় জমান। হাতের কাছে নিরাপদ মা’দক সেবনের ব্যবস্থা পেয়ে উঠতি স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কি’শোর-তরুণ ছুটছে ওই ফেন্সিডিলের বারে। এভাবেই ন’ষ্ট হচ্ছে এলাকার তরুণ সমাজ। যুবসমাজ রক্ষায় অ’বৈধ এ বার বন্ধ করতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় সুশীল সমাজ।

ইউপি সদস্য বাদশার স্ত্রী স্বপ্না বেগম নিজেই তার বাড়ির ফেন্সিডিল বারে চাহিদামত ফেন্সিডিল পরিবেশন করেন, গ্লাসে ঢেলে দেন ফেন্সিডিল। ফেন্সিডিল সেবনে যা প্রয়োজন সবই রয়েছে তাদের টেবিলে। ১০০ মিলিগ্রাম এক বোতল ফেন্সিডিলের খুচরা দাম ধরা হয় এক হাজার থেকে ১১শ’ টাকা। যার যত গ্রাম দরকার, তাকে তত গ্রাম গ্লাসে ঢেলে দিয়ে টাকা নেন।

ইউপি সদস্যের বাড়িতে মা’দক সেবনে প্রশাসনের ঝামেলা নেই- এটা ভেবে মা’দকসেবীদের বর্তমান নিরাপদ বার ইউপি সদস্য বাদশার বাড়ি। স্থানীয়দের এমন অ’ভিযোগে সোর্স নিয়োগ পাঠিয়ে ফেন্সিডিল বিক্রি ও বারে খুচরা বিক্রির একাধিক ভিডিও আসে বাংলানিউজের এ প্রতিবেদকের হাতে।

ভিডিওতে দেখা যায়, ইউপি সদস্য বাদশার স্ত্রী স্বপ্না বেগম টাকা নিয়ে নিজেই পাশের রুম থেকে ফেন্সিডিল এনে টেবিলের গ্লাসে পরিবেশন করছেন। পুরো বোতল নয়, বোতলের অর্ধেক বা এক চতুর্থাংশ ফেন্সিডিল সেবন করারও ব্যবস্থা রয়েছে। যত টাকা, ততটুকুই ফেন্সিডিল গ্লাসে পরিবেশন করা হয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, ইউপি সদস্যের স্ত্রী স্বপ্না বেগম এক দিন ২০ টাকা কম পাওয়ায় সোর্সের সঙ্গে খা’রাপ আচরণ করেন। সোর্স বলেন, এখানে প্রশাসন আসে না? স্বপ্না বেগম বলেন, এটা মেম্বারের বাড়ি। এখানে প্রশাসনের ক্ষমতা আছে? ম্যা’জিস্ট্রেট হলে স’মস্যা।

একদিন সোর্স দাম কম দেওয়ায় খা’রাপ আচরণ করেন স্বপ্না বেগম। তখন স্বপ্না বেগম বলেন, আজ দাম বাড়ায় ৫০০ মাল ফেরত দিয়েছি। যেখানে কম পাবেন, সেখানে যান। এখানে আসছেন কেন? ইনটেক খান, খোলা খাবেন কেন? সোর্স বলেন, মেম্বারের বাড়ি, এখানে নিরাপত্তা বেশি। সেজন্য আসি।

দ্বিতীয় দফায় সোর্স ফেন্সিডিলের টাকা সরাসরি ইউপি সদস্য বাদশা মিয়ার হাতে দেওয়ার সময় বিগত দিনে স্ত্রীর খা’রাপ আচরণের বর্ণনা দেন। যা শুনে তিনি (বাদশা) তার স্ত্রীকে বি’ষয়টি নিয়ে শাসন করেন। বলেন, ২০ টাকার জন্য তোকে এ কথা বলতে হবে কেন?

নগদ টাকা না থাকায় অন্য একদিন সোর্স অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর কথা বললে স্বপ্না বেগম একটি মোবাইল ফোন নম্বর দেন। ওই নম্বরে টাকা পাঠানোর বি’ষয়টি নিশ্চিত হলেই কেবল ফেন্সিডিল পরিবেশন করেন তিনি। ওই নম্বরটিতে কল করলে আনোয়ার নামে একজন ফোন ধরে বলেন, বাদশা মেম্বারকে চিনি, তবে এটা তার নম্বর নয়। মূলত সরাসরি নিজেদের নম্বর না দিয়ে এ কাজের জন্য অনলাইন ব্যাংকিংয়ের এক এজেন্টের নম্বর ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অ’ভিযোগ উঠেছে।

তবে এসব বি’ষয় অস্বীকার করে গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বাদশা মিয়া বলেন, কার সঙ্গে কথা বলছ? আমাকে চিন? কথাবার্তা ভালো করে বলবা। আপনার বাসায় ফিন্সিডিল বিক্রির বি’ষয়টি আপনি জানেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে জানি না বলেই ফোন কে’টে দেন তিনি।জে’লা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, মা’দক নিয়ন্ত্রণে জে’লা পুলিশ নিয়মিত অ’ভিযান চালাচ্ছে। অনেককেই গ্রে’ফতার করা হচ্ছে। তবে ইউপি সদস্যের বাসায় ফেন্সিডিল সেবনের সুব্যবস্থা রয়েছে এমন কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই। এখন জানলাম, অবশ্যই দ্রুত অ’ভিযান চা’লানো হবে। সূত্রঃ বাংলানিউজ