প্রকৌশলী স্বামীর অকাল মৃত্যুতে শোকে পাথর ডা. নীলা, সামনে কেবলই অন্ধকার

| আপডেট :  ৭ জুন ২০২২, ১২:২৫ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৭ জুন ২০২২, ১২:২৫ অপরাহ্ণ

সারাদেশ: সাভারে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত প্রকৌশলী মোঃ কাওছার আহমেদ রাব্বি (৩০) অকাল মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন তার স্ত্রী ডাক্তার নিলুফার ইয়াসমিন নিলা। তাকে নিয়ে এখনো উদ্বিগ্ন পরিবারের অন্য সদস্যরা।

সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রহর গুনছেন নীলা। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী শুক্রবার তার ডেলিভারির তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার আগেই স্বামীকে হারিয়ে প্রচণ্ড মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন নীলা। দুই বছরের সন্তান কিয়ান আহমেদ নাসিক অবুঝের মতো বাবাকে খুঁজছে। আর অনাগত সন্তান কাকে বাবা বলে ডাকবে—এসব ভেবে ভেবে আরও মুষড়ে পড়েছেন নীলা।

গতকাল রোববার সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বলিয়ারপুরের অদূরে মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনায় তিন কর্মকর্তাকে হারায় পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তাদেরই একজন প্রকৌশলী কাউছার আহমেদ রাব্বি। রাব্বি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পুনতাইর গ্রামের সেকান্দর আলীর ছেলে। বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পাস করে যোগ দিয়েছিলেন পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশল বিভাগে।

চিকিৎসক স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন নীলাকে নিয়ে ভীষণ টেনশনে ছিলেন রাব্বি। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় তার অকালমৃত্যু এখন টেনশনে ফেলেছে গোটা পরিবারকে। বিশেষ করে নীলাকে। নীলা রাজধানীর ইস্কাটনে আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ থেকে সম্প্রতি এমবিবিএস পাস করে ওই হাসপাতালেই ইন্টার্ন করছেন।

গতকাল প্রসব ব্যথা উঠতেই তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে। পরে চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, সেটা ফলস পেইন। এরই মধ্যে স্বামী হারানোর খবর আসে নীলার কানে। তখন থেকেই অনাগত সন্তানের কথা ভেবে নীলার পাশেই রয়েছেন স্বজনরা। নীলার পাশে এগিয়ে এসেছেন আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষক থেকে শুরু করে সিনিয়র ও জুনিয়র সহপাঠিরাও।

নীলার দেবর আবদুল্লাহ খান নোমান জানান, অনেক ভেবেচিন্তে ভাইয়ার লাশ সরাসরি গাইবান্ধায় না নিয়ে প্রথমে নেওয়া হয় ঢাকায়। সেখানে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা রাব্বির মরদেহ এক নজর দেখার জন্য কাছে নেওয়া হয় নীলাকে। এ সময় সবাইকে সতর্ক রাখা হয়। প্রস্তুত ছিলেন হাসপাতালের কর্মীরাও। কারণ অধিক শোকের কারণে যাতে গর্ভের সন্তানের কোনো ক্ষতি না হয় সে ব্যাপারেও বাড়তি নজর রাখা হয়।

নোমান আরও জানান, গাইবান্ধায় নিজ গ্রামে মরদেহ পৌঁছে রোববার দিনগত ভোর ৪টায়। বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার পর আজ সোমবার সকাল ৯টার দিকে দাফন করা হয় রাব্বির লাশ। আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বাসার সামনে নার্স ও চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রেখেছে। যাতে যেকোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দেওয়া যায়।রাব্বিকে হারিয়ে পরিবারের লোকজন শোকে ভেঙে পড়েছেন। এদিকে এই শোকের ছায়া নীলার অনাগত সন্তানের ওপর যেন কোন প্রভাব না পড়ে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে পরিবারের লোকজন।