সব
সম্প্রতি সময়ে একের পর এক গান গেয়ে সমালোচনার তুঙ্গে আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম নাম। একের পর এক বেসুরো কণ্ঠে নানা গান গেয়ে তুমুল আলোচিত তিনি। এবার তার গানের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন জনপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীত ‘আমারো পরানো যাহা চায়’। বরাবরের মতো এই গান গেয়েও তিনি সমালোচনার তুঙ্গে। অভিনয়, প্রযোজনা ও নিয়মিত গান করার মাধ্যমে আজ তিনি হিরো আলম হলেও গান করার মাধ্যমে বর্তমান সময়ে বহুল আলোচিত তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও গানটি পোস্ট করার পর থেকেই নানা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। কেউ কেউ তার নামে রবীন্দ্র সংগীত বিকৃত করে গাওয়ারও অভিযোগ তুলেছেন। একজন লিখেছেন, এক সময় এই গানটি আমার প্রিয় ছিল। রবীন্দ্রনাথ থাকলে এক গ্লাস পানিতে ডুইবা মরতো। আরেকজন লিখেছেন, গান শুনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছিলাম কিন্তু কমেন্ট পড়ে জ্ঞান ফিরে পেলাম .যাক হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। গানটার অকাল মৃত্যু হয়ে গেল খুবই কষ্ট লাগছে।।
হিরো আলমের এই গান নিয়ে গতকাল পোস্ট করেছেন পুলিশের সাইবার ক্রাইমের ডেপুটি কমিশনার নাজমুল ইসলাম। তিনি লেখেন, নানা কারণে জনাব হিরো আলম আমার অফিসে এসেছেন, কখনো অভিযোগ করতে আবার কখনো অভিযুক্ত হয়ে। আমি অবশ্যই তার ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবোধ ও স্বাধীনতাকে সম্মান করি। সংস্কৃতি চর্চার অধিকার তার আছে। নানা সময়ে তিনি মৌলিক বা যৌগিক গানের সারথি হয়েছেন, সেটাও তার অভিরুচি।
অনেকেই বলছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাকে মনে হয় আর একটু সাবধানী হওয়া উচিত; যেমন, রবি বাবুর গান মনে হয় এপার ওপার বাংলার অসংখ্য মানুষের আবেগের জায়গা, তাদের মতে সেই আবেগের প্রতি তিনি মনে হয় খুব একটা যত্নশীল হননি বা সুবিচার করতে পারেননি। তবে ফলাফল negative/positive যাই আসুক না কেন, অনেকেই হয়তো এই অনভিপ্রেত অবিচারের জন্য competent authorities এর কাছে সুবিচার চাবে। তবে এই স্বাতন্ত্র্যবোধ ও স্বাধীনতার সাথে মানুষের অভিযোগের দ্বৈরথকে কিভাবে দেখছে নেটিজেন!?
তার এই মন্তব্যে কমেন্টর বন্যা বইয়ে গেছে। কমেন্টে সংগীত শিল্পী বেলাল খান লিখেন, ওর এইসব শিল্প মানহীন কন্টেন্টে মোটেও দেশ জাতির কোন উপকার নেই এবং এগুলো যেহেতু সে এখন বানিজ্যিক ভাবে নিয়মিত করছে তাই আমাদের উচিত ওর সবকিছুই এড়িয়ে যাওয়া।
কমেন্টে ‘ঘুরি’খ্যাত গায়ক লুতফর হাসান লিখেছেন, তাকে নিয়ন্ত্রণ জরুরি, প্লিজ ভাই। এই সময়ের জনপ্রিয় গীতিকার সোমেশ্বর অলি লিখেন, রবিবাবুর গান সবার জন্য উন্মুক্ত। হিরো গাইবে, জিরোও গাইবে। এড়িয়ে গেলেই হলো। আমি কার ভোক্তা বা ভক্ত হবো— আমার ব্যাপার, সেটা কেউ ঠিক করে দেবে না।
হিরো আলমের এই গান নিয়ে চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতা শাহাদাত রাসেল স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেন, হিরো আলম নামের ভদ্রলোককে নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। সে এরাবিয়ান থেকে সুদান যেকোনো দেশের ভাষায় গান করুক ওটা আমার ভাবনা না। তার গানের উপযুক্ত শ্রোতা এদেশের অনেক। চাহিদা থাকলে যোগান আসবেই সেটা বৈধ অবৈধ যেকোনো পথেই হোক। এই চর্চা কেবল হিরো আলম একাই করেনা এদেশের নাটক সিনেমা ও সংগীতের সিল লাগানো বেশিরভাগ লোকেই করে। এরা সবাই পাবলিককে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। সেটা তারা খাওয়াক। কিন্তু আজকে কয়েকজনের লেখা থেকে জানলাম হিরো আলম রবীন্দ্রনাথের ‘আমারও পরানো যাহা চায়” গানটা গেয়েছেন।
আশ্চর্য হয়েই ইউটিউবে ঢু দিলাম। এবং যারপরনাই ক্ষুব্ধ হলাম। রবীন্দ্র সংগীত নিয়ে হিরো আলম গ্যাং যেটা করেছে সেটা সরাসরি গানের কথা ও সুরের বিকৃতি। গান গাইবার অধিকার সবার আছে কিন্তু বিকৃতি করার অধিকার কারো নেই। এমন কি গানের বাণিজ্যিক রিমেক বা ব্যবহার করতে গেলেও এখানে মূল গায়কের বা গানের সত্ত্বাধিকারীর অনুমতি নেয়া জরুরী। ধরলাম রবীন্দ্রনাথের গানের কোনো সত্ত্বাধিকারী নেই। তার মানে কি রবীন্দ্রনাথের শিল্পকর্ম সব বেওয়ারিশ হয়ে গেছে? যে যার যার ইচ্ছে মতো তার গান নিয়ে যাচ্ছেতাই করতে পারে?
স্ট্যাটাসের শেষে হিরো আলমের নামে মামলার হুমকী দিয়ে চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতা শাহাদাত বলেন, অন্য কারো সৃষ্টি নিয়ে এভাবে ফাতরামি করার অধিকার আমাদের কারো নেই।এদেশে এতো এতো রবীন্দ্রপ্রেমী কেউ কি এগিয়ে আসবেন? অন্যথায় আইনজীবী যারা আমার তালিকায় আছেন আমাকে সাহায্য করুন, আমিই মামলা করবো।