রাজপথ দখলের নির্দেশ আওয়ামী লীগের

| আপডেট :  ১ জুন ২০২২, ১২:১৯ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১ জুন ২০২২, ১২:১৯ পূর্বাহ্ণ

দলীয় নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ‘কর্মসূচির বিপরীতে কর্মসূচি, আ’ঘাতের বিপরীতে পাল্টা আ’ঘাত’ এই নীতিতে এখন থেকে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। বি’রোধীরা যাতে ‘অযৌক্তিক’ ইস্যুতে মাঠ দ’খল করতে না পারে সেজন্য নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মী ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গতকাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের যৌথ সভা থেকে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়। পাশাপাশি নানা কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়। বৈঠকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনের নামে আ’গুন স’ন্ত্রাস করলে জবাব রাজপথেই দেয়া হবে।

সেজন্য আপনাদের প্রস্তুত হতে নেত্রীর নির্দেশে এই সভা ডেকেছি। এদিকে আগামী ৪ঠা জুন আওয়ামী লীগ সারা দেশে বি’ক্ষো’ভ ও প্র’তিবাদ সমাবেশ করবে বলে জানিয়েছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব- উল আলম হানিফ। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হ’’ত্যার হু’মকির প্র’তিবাদে এই বি’ক্ষো’ভ ও প্র’তিবাদ সমাবেশ করা হবে বলে জানান তিনি।

পাশাপাশি আগামী ৮ই জুন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ ও ১০ই জুন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ একই ইস্যুতে রাজধানীতে বি’ক্ষো’ভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে। ওই বৈঠক থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন মহানগরের নেতারা। আগামীকাল মহিলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কর্মসূচি পালন করা হবে।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা মানবজমিনকে বলেন, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথ দ’খলে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার দুই মহানগরের নেতাকর্মীদের সর্বদা সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। রাজধানীতে বিএনপিসহ বি’রোধী পক্ষের কোনো কর্মসূচিকে ছোট করে দেখা হবে না। তারা কর্মসূচি ডাকলে মহানগর আওয়ামী লীগ সতর্ক অবস্থানে থাকবে। পাশাপাশি দেশের যেকোনো জে’লায় বি’রোধীরা কর্মসূচির ডাক দিলে সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সতর্ক থাকবেন। প্রয়োজনে কর্মসূচি দেবেন।

হঠাৎ আওয়ামী লীগের এ ধরনের ক’ঠোর অবস্থান কেন জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন রিয়াজ মানবজমিনকে বলেন, শেখ হাসিনা মানেই বাংলাদেশ। সেই নেত্রীকে নিয়ে যখন কেউ কটূক্তি করে সেটা মেনে নেয়া যায় না। তাই বৈঠক থেকে আমাদেরকে এখন থেকেই রাজপথ দ’খল এবং পাল্টা কর্মসূচি ও পাল্টা আ’ঘাতের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বৈঠক থেকে বি’রোধীদের কোনো রকম ছাড় না দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

বিশেষ করে জ্বা’লাও পোড়াও টাইপের কোনো কিছু করলে আমরা তার জবাব সঙ্গে সঙ্গেই দেবো। এদিকে বৈঠকে ঢাকার চারপাশের জে’লাগুলোর নেতা ও এমপিদের সঙ্গে মহানগর নেতাদের নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। রাজধানীতে হঠাৎ বড় ধরনের কোন কর্মসূচি ডাকলে যেন লোক সমাগম বেশি করা যায় সেজন্য ওই যোগাযোগের নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বৈঠকে অনেকটা সময় নিয়ে আলোচনা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে ছাত্রদলের সঙ্গে সং’ঘর্ষ ঘটনা নিয়ে। সেখানে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য একটি জাতীয় দৈনিকের রিপোর্ট নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অ’ভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ওই গণমাধ্যম উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের চিহ্নিত করে গুরুত্ব দিয়ে ছবি প্রকাশ করেছে।

অথচ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের হাতেও ওইদিন ধা’রালো অ’স্ত্র ও লা’ঠিসোঁটা ছিল। তাদের সেসব ছবি প্রকাশ করা হয়নি। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান, ড. আব্দুর রাজ্জাক ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল-আলম হানিফ, তথ্য ও সমপ্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহম’দ হোসেন, আফজাল হোসেন ও মির্জা আজম, মুক্তিযু’দ্ধ বি’ষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বি’ষয়ক সম্পাদক আবদুর সবুরসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র, সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে গতকালের বৈঠক প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ কোনো কর্মসূচি দিলে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু শেখ হাসিনাকে হ’’ত্যার হু’মকি দিচ্ছে, আর আমরা কি বসে বসে তামাক খাবো? স’রকার বিএনপি’র কর্মসূচিতে বা’ধা দিচ্ছে দলটির মহাস’চিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন অ’ভিযোগের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বা’ধার কোনো বি’ষয় নয়, আমার সামনে নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) বলছেন, পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার। এই কথা শুনলে তরুণদের কি মাথা ঠিক থাকে। স’ন্ত্রাসীকে কি বা’ধা দেবো না? ছাত্রদলের নেতাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের মা’রধরের ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ফখরুল সাহেবরা এসব স্লোগান শিখিয়ে দিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে হ’’ত্যার হু’মকি দিলে ছাত্রলীগ কি চুপ করে বসে থাকবে? নেত্রীকে অ’পমান করা হচ্ছে। এই অ’পমান কি আমরা সইতে পারি? এসব কটূক্তির প্র’তিবাদ ছাত্রলীগ করেছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হ’’ত্যার হু’মকি দিয়ে ছাত্রদলকে মাঠে নামানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ দেখবে কত ধানে কত চাল।

সবকিছুর শেষ আছে। মির্জা ফখরুল, আ’গুন নিয়ে খেলবেন না। আ’গুন নিয়ে খেললে পরিণাম ভালো হবে না। ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী ২৫শে জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে ইউনিয়ন পর্যন্ত উৎসব হবে। বিএনপি ছাত্রদলকে দিয়ে রাজপথে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে- রাজপথ কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এর উপযুক্ত জবাব দেবে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপিকে দাওয়াত দেয়া হবে জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা করায় বিএনপি’র বুকে বি’ষজ্বা’লা উপচে পড়ছে। তবুও পদ্মা সেতুর অনুষ্ঠানে তাদের দাওয়াত দেয়া হবে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু মানেই শেখ হাসিনা। তার সাহসের প্রতীক পদ্মা সেতু। শত মি’থ্যাচারের পরও পদ্মা সেতু নিয়ে তিনি ছিলেন হিমালয়ের মতো অটল।

এটি নিয়ে এখনো বিএনপি অবিরাম মি’থ্যাচার করছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক স’রকারের দাবি তুলে লাভ হবে না, তত্ত্বাবধায়ক স’রকার এখন জাদুঘরে। আগামী নির্বাচন হবে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে। স’রকার তাদের সহযোগিতা করবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, যদি বিএনপি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মাঠ থেকে সরে যায়, তাহলে যথাসময়েই নির্বাচন হবে। কারও জন্য অপেক্ষা করা হবে না। আওয়ামী লীগ রাজপথে ছিল, থাকবে। সূত্রঃ মানবজমিন