৯০’র ফরম্যাটে আন্দোলনের ছক বিএনপি’র

| আপডেট :  ৩১ মে ২০২২, ০৮:২০ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৩১ মে ২০২২, ০৮:২০ পূর্বাহ্ণ

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নিরপেক্ষ স’রকারের ‘এক দফা’ দাবিতে আন্দোলনের জো’র প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এজন্য অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। ইতিমধ্যে মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেছে দলটি। তবে সমামনা দলগুলো বিএনপি’র দাবিগুলোর সঙ্গে একমত হলেও এখনই বৃহত্তর ঐক্য হচ্ছে না।

সবাই অভিন্ন দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে আগ্রহী। এজন্য কর্মসূচির ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলাই যুক্তিযুক্ত বলছে বিএনপি। যেটা ৯০’র স্বৈ’রাচার বি’রোধী আন্দোলনের ফরম্যাটের মতো। বিএনপি’র পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে নির্বাচন পরবর্তী স’রকার গঠনের একটি ফর্মুলা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আন্দোলনে অংশ নেয়া সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের পর জাতীয় স’রকার গঠন করা হবে। আর সকল বি’রোধী মতের লক্ষ্য যেহেতু এক তাহলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আন্দোলনের রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে।

সেভাবেই বিভিন্ন দলের সঙ্গে কথা হচ্ছে। তবে আন্দোলনটা যার যার অবস্থান থেকে করা হবে। পরে আন্দোলন দানা বাঁধলে তখন প্রয়োজন হলে এক মঞ্চে আসা যাবে। এর আগে এরশাদের বি’রুদ্ধে যেভাবে আলাদা আলাদা আন্দোলন হয়েছে, বিএনপি মনে করে এটাই সঠিক পন্থা। এরই অংশ হিসেবে ৯০’র পরবর্তী ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি’র হাইকমান্ড। তাদের সমন্বয়ক হিসেবে ডাকসু’র সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুল হক মিলনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ছাত্র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন তারা।

এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর জোট ও ঐক্যফ্রন্টের বি’ষয়টি আরও পরিষ্কার করবে বিএনপি। যদিও ইতিমধ্যে জোটের দলগুলোকে আলাদা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার জন্য বিএনপি’র পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। তবে সংলাপের অংশ হিসেবে সব দলের সঙ্গেই বৈঠক করবেন বিএনপি’র নেতারা। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি এক বক্তব্যে বিএনপি’র মহাস’চিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সকলের সঙ্গেই আলোচনা হবে। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও আলোচনা হবে। আর ২০ দলীয় জোট তো এখন পর্যন্ত বিলুপ্ত করা হয়নি। এই জোটের কী হবে সেটা এই আলোচনার মধ্য দিয়ে ফাইনালাইজড করবো।

নিরপেক্ষ স’রকারের অধীনে নির্বাচনসহ আরও কয়েক দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের একটি রূপরেখাও তৈরি করছে বিএনপি। দলটির আন্দোলনের রূপরেখার মধ্যে স’রকারের পদত্যাগ, সং’সদ ভে’ঙে দিয়ে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ স’রকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর, সব দলের মতামতের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, বিএনপিসহ বি’রোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের বি’রুদ্ধে থাকা ‘মি’থ্যা’ মা’মলা প্রত্যাহার, খালেদা জিয়ার মুক্তি, সাজা বাতিল করে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনাসহ আরও বেশ কয়েক দফা দাবি থাকবে। সমমনা দলগুলোর সঙ্গে সংলাপেও এসব দাবি নিয়ে আলোচনা হবে।

দলটির নেতারা বলছেন, এবার স’রকারের ফাঁ’দে আর পা দেয়া হবে না। নির্বাচনের বাকি আরও বছর দেড়েক। এরই মধ্যে বড় ধরনের কর্মসূচি দিয়ে এখনই মাঠে নামলে নেতাকর্মীদের বি’রুদ্ধে মা’মলা ও গ্রে’প্তার করে পরিস্থিতি স’রকার তাদের অনুকূলে নিয়ে নেবে। ইতিমধ্যে বিএনপি’র সারা দেশের বি’ক্ষো’ভ কর্মসূচিগুলোতে হা’মলা হয়েছে। আবার বিএনপি’র নেতাকর্মীদের নামেই মা’মলা করা হচ্ছে। তাই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে খুব সতর্কতার সঙ্গে এগোতে চায় বিএনপি। দলটির নেতাদের ভাষ্য- আপাতত মাঠে বড় কোনো কর্মসূচি দেবে না তারা। সময়মতো ক’ঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে চায় দলটি। এর আগে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে চলমান নানা ইস্যুতে বি’ক্ষো’ভ, মা’নববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবে তারা।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান মানবজমিনকে বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ফরম্যাটতো বরাবরই একটা। কাজেই এখানে আপনি চাইলেই তো সেটা বদলাতে পারবেন না। এখানে মিছিল-মিটিং হবে, সভা-সমাবেশ হবে, প্র’তিবাদ হবে, মা’নববন্ধন হবে, হরতাল হবে। এগুলোইতো আন্দোলনের পথ। এভাবেই সব সময় আন্দোলন হয়ে আসছে। এমনটা এরশাদের বি’রুদ্ধে আন্দোলনের সময় হয়েছে। এর বাইরে আন্দোলন কীভাবে করা যায়- এ পরামর্শ যদি থাকে কেউ সেটা দিলে আমরা বিবেচনা করবো।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশে কখন আন্দোলন শুরু হয় সেটা কেউই বলতে পারবে না। আন্দোল তো আর বলে কয়ে হয় না। এটার কোনো দিনক্ষণও নেই। আন্দোলনের গতি- প্রকৃতি নির্ণয় করা সম্ভব না।

ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমারো মনে হয় বিএনপি ৯০’র স্বৈ’রাচার বি’রোধী আন্দোলনের ফরম্যাটেই এগোচ্ছে। আর বিএনপি তো জাতীয় স’রকারের একটা ফর্মুলা দিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- সব বি’রোধী দলের লক্ষ্য একটাই। বর্তমান স’রকারে পদত্যাগ আর নিরপেক্ষ স’রকারের অধীনে নির্বাচন। এর জন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই। সেটা যে ফরম্যাটেই হোক।
সিনিয়র যুগ্ম মহাস’চিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আন্দোলনের মূল সুরটা এক। তবে আন্দোলনটা কোন ফরম্যাটে হবে- সেটা আন্দোলন শুরু হলেই বলা যাবে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা কাজ করছি। আন্দোলনটা কীভাবে হবে সেটা বলার মতো সময় এখনো হয়নি। কারণ আমরা যে জোট করার চেষ্টা করছি সেটা কোনো রূপ পায়নি। বিএনপি যে কথা বলেছে সেটাও এখনো মাঠে গড়ায়নি। এসব স’মস্যা নিয়ে আমরা যদি একটা জোট করি আর বিএনপি তার মতো জোট করে অথবা একসঙ্গে আন্দোলন এসব বি’ষয়ে কথা বলবো, না হয় যুগপৎ করবো। সব ধরনের রাস্তাইতো খোলা আছে।

গণঅধিকার পরিষদের সদস্য স’চিব নুরুল হক নুর বলেন, আমাদের কর্মকাণ্ড কোনো ঘটনার বা ইতিহাসের পরিপূরক হচ্ছে কিনা সেটা আমি বলবো না। এটা আশপাশ থেকে যারা পর্যবেক্ষণ করবেন, বিশ্লেষণ করবেন তারা এটা সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন। আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একেবারেই স্পষ্ট সেটা হচ্ছে, দেশে যে কর্তৃত্ববা’দী শাসন-শোষণ চলছে সেই শোষণ থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে চাই। আগামীতে মানবিক একটা বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। একটা সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই। এজন্যই একটা প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। আর আমাদের কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈরিতা নেই। এই সময়ে সকল বি’রোধী রাজনৈতিক দলের মত এক ও অভিন্ন যে, এই স’রকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। অন্তর্বর্তীকালীন স’রকারের অধীনে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। এই মতে যারাই ঐক্যমত তারাইতো আন্দোলন করার অধিকার রাখে।