সেই নারীকে গ্রেপ্তারের পর তরুণী বলেন আমার কী শান্তি লাগছে বোঝাতে পারব না

| আপডেট :  ৩০ মে ২০২২, ১০:০৯ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৩০ মে ২০২২, ১০:০৯ অপরাহ্ণ

নরসিংদীতে পোশাক নিয়ে হে’নস্তা করা নারীকে গ্রে’প্তারের পর প্রতিক্রিয়ায় আ’ক্রান্ত ত’রুণী জানিয়েছেন ‘আমার কী যে শান্তি লাগছে! কী যে শান্তি লাগছে, আপনাকে বোঝাতে পারব না,’। ঢাকার একটি বেস’রকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই ত’রুণী আজ সোমবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রে’প্তারের তথ্যটি যেন সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তাহলে কোনো মেয়েকে আর কখনো কেউ পোশাক নিয়ে হে’নস্তা করার সাহস পাবে না।’ ঘটনায় জ’ড়িত অন্যদেরও গ্রে’প্তারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

অনলাইনে রাস্তায় তৈরি করা বিভিন্ন খাবারের ভিডিও দেখে এক বন্ধুকে নিয়ে ১৭ মে ঢাকা থেকে নরসিংদীতে গিয়েছিলেন ২২ বছর বয়সী ওই ত’রুণী। ফেরার পথে পরদিন ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে নরসিংদী রেলস্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষার সময় জিনস ও টপস পরার কারণে গা’লিগা’লাজ ও মা’রধরের শি’কার হন তিনি। তাঁর সঙ্গে থাকা দুই বন্ধুও মা’রধরের শি’কার হন। এক ব্যক্তি অকথ্য ভাষায় গা’লিগা’লাজ করে পুরো দৃশ্যটি ভিডিও করেন এবং তা ফেসবুকে পোস্ট করেন। পোশাক নিয়ে এভাবে হে’নস্তা করার সমালোচনা করেন অনেকে। মা’নবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এ ঘটনার নি’ন্দা জানিয়ে জ’ড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানায়।

নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে ত’রুণীকে হে’নস্তার অ’ভিযোগে মার্জিয়া আক্তার ওরফে শিলা ওরফে সায়মাকে (৬০) গ্রে’প্তার করেছে র‍্যা’ব-১১
পোশাকের জন্য ওই ত’রুণীকে আ’ক্রমণের সূচনা যিনি করেছিলেন, সেই নারীকে গতকাল রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে নরসিংদী থেকে গ্রে’প্তার করেছে র‌্যা’ব। ওই নারীর নাম মার্জিয়া আক্তার ওরফে শিলা ওরফে সায়মা (৬০)। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাঁকে শনাক্ত করে মা’মলার আ’সামি করেছিল পুলিশ। গ্রে’প্তারের পর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তাঁর ছবি দেখে ওই ত’রুণী বলেছেন, এই নারীই তাঁকে হে’নস্তা করেছিলেন।

ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কে ত’রুণী আজ প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারী প্রথমে তাঁকে হে’নস্তা করা শুরু করেন এবং পরে অন্যরা তাতে যোগ দেন। এ কারণে আজ ওই নারীর গ্রে’প্তারের কথা শুনে তিনি শান্তি পেয়েছেন। এখনো ওই দিনের ঘটনা তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

ওই ঘটনা তাঁর ও’পর কতটা প্রভাব ফে’লেছে, তা তুলে ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি সাত দিন ঘুমাতে পারিনি। কিছু খেতে পারিনি। যতবার মনে হয়, আমার গা শিউরে ওঠে। চোখের সামনে শুধু ভেসে ওঠে ১০–১২টা হাত আমার জামা ধরে টানছে।’ ত’রুণী আরও বলেন, ‘আজ আমার মনটা অনেকখানি শান্ত। বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তায় ছোট শি’শুদের সঙ্গে ফুটবল খেলেছি। আমার অনেক আনন্দ হচ্ছে। আজ রাতে আমি আমার একটা ছবি আঁকব। তারপর দেয়ালে টাঙিয়ে রাখব। কাল আমার ব্রুনোর (পোষা বেড়াল) জন্ম’দিন। আজ আমি ব্রুনোর জন্য কেনাকা’টা করব। কাল ওকে সাজাব।’

তাঁকে হে’নস্তার ঘটনায় যাঁরা প্র’তিবাদ করছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ত’রুণী। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি প্র’তিবাদের ঘটনা আমি জেনেছি। আমি মা’নসিকভাবে সব কটি প্র’তিবাদের সঙ্গে আছি। আমার মা–বাবার দিকে যেন কেউ আঙুল না তোলে, সে জন্য সশরীর প্র’তিবাদে অংশ নিতে সাহস পাই না। তবে এখন আমি বুঝি, সব মানুষ এক রকম নয়। যাঁরা পাশে আছেন, তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’

ত’রুণী জানান, ঘটনার পর বন্ধুরা পাশে থেকে বি’ষণ্নতা কাটিয়ে উঠতে তাঁকে সহযোগিতা করেছেন। তবে মা পাশে থাকায় তিনি বেশি স্বস্তি পেয়েছেন। আজ ওই নারীকে গ্রে’প্তারের কথা মাকে জানানোর পর তিনিও অনেক খুশি হয়েছেন। মা বলেছেন, ‘তোমার ভ’য় না পেয়ে শক্ত হয়ে প্র’তিবাদ করা উচিত ছিল।’

ওই ত’রুণী বলেন, গ্রে’প্তারের তথ্য সব জে’লায় জে’লায় পৌঁছে দেওয়া দরকার। যাতে পোশাক পরার কারণে কোনো মেয়েকে ভবি’ষ্যতে যেন কেউ হে’নস্তা করার সাহস না পায়। ত’রুণীকে হে’নস্তার এই ঘটনায় ভৈরব রেলওয়ে থানার পুলিশ বা’দী হয়ে ২১ মে নারী ও শি’শু নি’র্যাতন দ’মন আইনে একটি মা’মলা করে। এ মা’মলায় মার্জিয়া আক্তারের আগে মো. ইসমাইল নামের এক আ’সামিকে গ্রে’প্তার করেছিল পুলিশ। সূত্রঃ প্রথম আলো